লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা
Published: 23rd, January 2025 GMT
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়ও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিসহ নানা কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেশি দেওয়ার কারণেও আদায় কমছে। ফলে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে।
এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় কম হয়েছে ১ হাজার ৫৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস– এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। তবে আয়কর ও কাস্টমসে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক নয়। প্রবৃদ্ধিতে আয়করের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে কাস্টমস।
আয়কর খাতে গত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময় আদায় হয়েছিল ৫০ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আয়কর খাত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
কাস্টমস খাতে অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছরে একই সময় আদায় হয়েছিল ৪৮ হাজার ৭৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
এ ছাড়া ভ্যাট খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় আদায় হয়েছিল ৫৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট খাতে গত ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি না বেড়ে উল্টো কমেছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: একই সময় ক স টমস ছয় ম স ব পর ত প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ শতকোটিপতিদের হাতে
ভারতে অতি ধনীদের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এই শ্রেণির মানুষের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে ভারতে এই শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৪। দেখা যাচ্ছে, গত বছর এই সময় ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা ছিল ২৭১; অর্থাৎ এক বছরে ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ১৩। সম্প্রতি প্রকাশিত দ্য হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট, ২০২৫-এ এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ এখন ৯৮ লাখ কোটি রুপি। এই অঙ্ক ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন বা মোট জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ।
শতকোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের এই শ্রেণির মানুষের সম্পদ বেড়েছে। দেশটিতে শতকোটিপতিদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ এখন সৌদি আরবের মোট জিডিপি বা দেশজ উৎপাদনের চেয়ে বেশি। দ্য হুরুন গ্লোবাল রিচ লিস্ট, ২০২৫-এ বলা হয়েছে, গত বছর ভারতের শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ভারতের ধনীদের সম্পদের পরিমাণ গত এক বছরে ৬২ শতাংশ বেড়েছে। তাঁদের সম্পদের পরিমাণ লাখ কোটি ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে। হুরুন গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক আনাস রহমান জুনাইদ এটিকে ভারতের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে ভারতে শতকোটিপতির সংখ্যা ছিল ২৪৯। কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে ১৮৭-তে নেমে আসে; গত বছর তা আবার বেড়ে ২৭১-এ ওঠে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তা ৩০০ পেরিয়ে যাবে।
অতি ধনীদের সংখ্যার নিরিখে ভারতের অবস্থান এখন বিশ্বে তৃতীয়। ভারতের আগে আছে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ভারতের পরে আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড। সেই সঙ্গে এশিয়ার শতকোটিপতিদের রাজধানী হিসেবে মুম্বাইকে হটিয়ে দিয়েছে চীনের সাংহাই শহর। সাংহাই শহরে এখন ৯২ জন শতকোটিপতির বসবাস, মুম্বাইয়ে ৯০ জন। এ ছাড়া বিশ্বের অন্য যেসব জায়গায় শতকোটিপতিদের সংখ্যা বাড়ছে সেগুলো হলো সিঙ্গাপুর, I রাশিয়া, কানাডা, তুরস্ক ও মেক্সিকো।
গত বছর ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির সম্পদের পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি কমেছে। মূলত খঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর সম্পদ কমেছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৮ দশমিক ৬ লাখ কোটি রুপি।
ভারতের ধনীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ গত বছর প্রায় এক লাখ কোটি রুপি বেড়েছে। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এখন ৮ দশমিক ৪ লাখ কোটি রুপি। তিনি এখন বিশ্বের ১৮তম শীর্ষ ধনী। গত বছর তিনি কিছু সময়ের জন্য এশিয়ার শীর্ষ ধনীর আসনে বসেছিলেন।
ভারতীয় অতি ধনীদের গড় বয়স ৬৮ বছর; বৈশ্বিক পর্যায়ে যা ৬৬ বছর; অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ভারতীয় অতি ধনীরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন।
এ বছর ভারতের সর্বকনিষ্ঠ অতি ধনী হিসেবে তালিকায় উঠে এসেছেন রাজোরপের সহপ্রতিষ্ঠাতা শশাঙ্ক কুমার ও হর্ষিল মাথুর। তাঁদের দুজনেরই বয়স মাত্র ৩৪ বছর।