বেক্সিমকোর বন্ধ প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু সম্ভব নয়: শ্রম উপদেষ্টা
Published: 23rd, January 2025 GMT
বেক্সিমকোর বন্ধ প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়— এমনটা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন আমরা একটা শান্ত পরিবেশে ছিলাম। হঠাৎ গতকাল তারা সমাবেশ করে বলেছে, তাদের তিনটা দাবি। এ দাবিগুলো আমার মনে হয় কোন সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব না, অত্যন্ত অযৌক্তিক। তারপরও তারা বলেছে, মানববন্ধন করবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করবে। তারা করেছে, আমরা কিছু বলিনি। পুলিশ-আর্মি মোতায়েন ছিল, তাদের বাধা দেয়নি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, তাদের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তারা অত্যন্ত রেসপন্সিবল। মনে করেছি, এখনো মনে করি, তারা রেসপন্সিবল হিসেবে দাবিগুলো তুলে ধরবে। তাতে কোনো আপত্তি নেই।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘গতকাল যা হয়েছে, আপনারা জানেন। একশর বেশি বাস জ্বালানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর হয়েছে। এটা করার কথা ছিল না। এটা কখনো হয়নি। হঠাৎ করে এটা কেন, খতিয়ে বের করব। আমি মনে করি, এটা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতা। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা টোটালি ফলস কাজ করেছেন। দেশবাসীর জন্য বড় সংকট তৈরি করতে যাচ্ছিল।’’
হাসনাত/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রেডিওলজির সিরিয়াল পেতে লোকজন আগের দিন রাতে এসে ঘুমায়: বিএমইউ উপাচার্য
‘এক শুক্রবার রাত ১০টায় এসে (হাসপাতালে) দেখলাম, নিচে লোকজন কাঁথা বালিশ নিয়ে ঘুমাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তাঁরা পরদিনের রেডিওলজির সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আগে থেকে এসে ঘুমাচ্ছে। চাহিদা কোথায় গেছে বোঝেন!’— আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহিনুল আলম।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের আওতায় এক্স–রে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এমআরআইসহ বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। উপাচার্য শাহিনুল আলম বলেন, ‘এই সিরিয়াল ব্যবস্থার অপসারণ করতে হবে। ওয়ার্ক লোড (কাজের চাপ) কমাতে হবে ও কাজে পারফেকশন (কাজ নিখুঁত) থাকতে হবে। জনগণের পক্ষে কাজ করার জন্য সুপারিশ তৈরি করা হবে।’
বিএমইউ’র ব্লক বি তে অবস্থিত মিলন হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং (বিএসআরআই)। ‘ফ্রম দ্য ক্যাথ ল্যাব টু দ্য মেমো স্যুট: এমপাওয়ারিং সেইফার, স্মার্টার পেশেন্ট কেয়ার’ (ক্যাথ ল্যাব থেকে মেমো: রোগীর জন্য নিরাপদ, আধুনিক সেবাকে শক্তিশালী করা) শিরোনামের অনুষ্ঠানে রেডিয়েশনের ঝুঁকি, স্তন ক্যানসারসহ অন্যান্য অসুস্থতা এবং টিউমার শনাক্ত নিয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য শাহিনুল আলম আরও বলেন, ‘ইমেজিং ও রেডিওলজিতে এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সংযুক্ত করার সময় এসেছে। এর জন্য আপনাদের প্রস্তত থাকতে হবে। এ কাজে আপনাদের নেতৃত্ব দিতে হবে। এখন জেনারালাইজ (সাধারণ) পরীক্ষা করা যাবে না, সুপার সিলেকটিভ (বাছাই করা সুনির্দিষ্ট) পরীক্ষা করতে হবে। এখনকার প্রশাসনের অবস্থা ভালো। রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস কেনা হবে।’
অনুষ্ঠানে টিউমার, লিভার ক্যানসার, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং ট্রান্সআর্টেরিয়াল কেমোইম্বোলাইজেশন (টিএসিই) চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করেন এভারকেয়ার হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ জহেরুল আলম। তিনি জানান, এখন এ চিকিৎসা বাংলাদেশে সফলভাবে হচ্ছে।
রেডিয়েশনের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মামুন–উর–রশীদ। তিনি জানান, দেশে পরীক্ষা করার জন্য রোগী ও রেডিওলজিস্ট–রেডিওগ্রাফারদের যে ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন তা মানা হয় না। এমনকি পরীক্ষা কক্ষের যে উচ্চতা ও প্রশস্ততা থাকা প্রয়োজন, যন্ত্র থেকে যত দূরে থাকা প্রয়োজন তাও মানা হয় না। অনেক সময় রোগীর সঙ্গে তাঁর স্বজনকেও এক্স–রে কক্ষে রাখা হয়। এভাবে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা যেভাবে রেডিয়েশনের ঝুঁকিতে পড়ছেন, সেভাবে যিনি পরীক্ষা করেন তিনিও ঝুঁকিতে পড়ছেন। টিএলডি (বিকিরণের শক্তি শুষে নেয়) ব্যাজ পরার মতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেক রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। ৮ থেকে ১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভধারণ অবস্থায় এক্স–রে কোনো অবস্থাতেই করা উচিত নয় বলে তিনি জানান।
স্তন ক্যানসার ও স্তনের অন্যান্য রোগ নির্ণয় নিয়ে আলোচনা করেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শারমিন আখতার রূপা। তিনি বলেন, স্তন ক্যানসার শনাক্তে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি করা হয়। তবে আমাদের দেশের গবেষণা তথ্যে দেখা গেছে, এখানে ৩৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের হার বেশি। তাই দেশে ৩০ বছর বয়স থেকে মেমোগ্রাফি শুরু করা উচিত। আগেভাগে শনাক্ত হলে ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়ার হার বাড়ে। তিনি মেমোগ্রাফি, টমোগ্রাফি ও আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার সুবিধা–অসুবিধা দুটোই তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বি সিদ্দিক। আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠন বিএসআরআইয়ের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ আওসাফ আলী, মহাসচিব অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক খলিলুর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসআরআইয়ের সদস্য অধ্যাপক সাহারা হক জেরিন।