বাকৃবিতে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা: পথ দেখাবে ‘এক্সাম হল ফাইন্ডার’
Published: 23rd, January 2025 GMT
কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার মাধ্যমে আগামী ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শুরু হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্নাতক ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ঢাবি ছাড়াও আরও সাতটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) একটি।
ভর্তি যুদ্ধের আগে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকে অচেনা জায়গায় পরীক্ষার কক্ষ খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে বাকৃবি কেন্দ্রের আওতায় থাকা পরীক্ষার্থীদের হলের অবস্থান নির্ণয়ে ‘এক্সাম হল ফাইন্ডার’ নামক মোবাইল সফটওয়্যারের আপডেট ভার্সন উদ্ভাবন করেছে বাকৃবি শিক্ষার্থীরা।
এর মাধ্যমে বাকৃবি কেন্দ্রস্থ পরীক্ষার হলের অবস্থান ও সেখানে যাওয়ার সহজ পথ দেখতে পাবেন পরীক্ষার্থীরা। ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা নিজের রোল নম্বর দিয়ে অনলাইনে সার্চ করলেই পরীক্ষার হলের অবস্থান জানতে পারবেন। এ লিংকে ক্লিক করলেই অ্যাপের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যাবে ঢাবি ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা।
বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে পূর্বে নির্মিত সফটওয়্যারটি আপডেটেড ভার্সন উদ্ভাবন করেছেন বায়োইনফরমেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক হাওলাদার (তৃতীয় বর্ষ), মুহাম্মদ ইশমামুল হক (দ্বিতীয় বর্ষ) ও মো.
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১ টার দিকে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদীয় সভা কক্ষে সফটওয়্যারটির আপডেটেড ভার্সন উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. জয়নাল আবেদীন, বাকৃবি আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রোস্তম আলী, ফার্ম স্ট্রাকচার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দিন।
সফটওয়্যারের বিষয়ে নির্মাতারা বলেন, সফটওয়্যারটিতে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের সম্পূর্ণ মানচিত্রকে ডিজিটালি সংযুক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যখন সফটওয়্যারে রোল নম্বর দেবেন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যারটি তাদের নির্ধারিত পরীক্ষার হলের অবস্থান খুঁজে বের করবে এবং গুগল ম্যাপের মাধ্যমে সেখানে যাওয়ার সহজ রাস্তা দেখিয়ে দেবে। এতে পরীক্ষার্থীদের সময় বাঁচবে এবং কক্ষ খুঁজে পাওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে।
সফটওয়্যারের আপডেটেড ভার্সনটিকে সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেছেন ডিন অধ্যাপক মো. জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, “কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকদের সহযোগিতায় এবং ড. মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রদের নিয়ে অ্যাপটি আপডেট করা হয়েছে। এর জন্য আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ।”
তিনি আরো বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ থেকে যারা পরীক্ষা দিতে আসবে, তারা কোন ঝামেলা ছাড়াই যেন পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারে। এজন্যই মূলত অ্যাপটি আপডেট করা হয়েছে।”
সফটওয়্যারটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীরা এ ধরনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, যা তাদের কর্মজীবনে নিশ্চিতভাবে সাহায্য করবে এবং দ্রুত চাকরি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অন্যদিকে, এ ধরনের সমাধানগুলোর মাধ্যমে ক্যাম্পাস ধীরে ধীরে অটোমেশনের দিকে এগিয়ে যাবে।”
ঢাকা/লিখন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ র থ র র সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ
অধিকার হরণ ও অধিকার আদায় উভয়ের মাঝেই দুনিয়ার বহু কর্মকাণ্ড ঘটেছে। সামাজিক ভারসাম্য ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষের তৎপরতাও কম নয়। কিন্তু তার বিপরীত চেষ্টাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এ জন্য আধুনিক বিশ্বে কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সমাজের দুষ্টচক্র শুধু মেধাজাত সম্পদের অধিকারই হরণ করছে না, বরং পরিসর
বাড়িয়ে পাইরেসির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পুনরুৎপাদন করে মেধাসম্পদ, সৃজনশীলতা ও অর্থনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সাম্প্রতিক বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার খাতেও পাইরেসি জেঁকে বসেছে।
মোটাদাগে, সফটওয়্যার হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম বা নির্দেশনার সমষ্টি, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে বিভিন্ন কাজ করতে নির্দেশ দেয়। বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে মানুষ হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, সংগীতসহ নানা ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৃজন প্রতিভার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ২০২৩ সালে প্রণীত কপিরাইটে পূর্বতন আইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে আর্থসামাজিক অবস্থা আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পাইরেসির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর প্রথম অধ্যায়ের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।
সফটওয়্যার বানাতে সোর্স কোড লাগে, ভাষা লাগে। সোর্স কোডের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এ জন্য এর সুরক্ষায় কপিরাইট প্রয়োজন। যে কোনো ধরনের সফটওয়্যার চাহিদার প্রয়োজনে উন্নত ভার্সনের দরকার পড়ে। আপগ্রেড করে নতুন সংযোজিত মেধার জন্য নবায়নকৃত সফটওয়্যারও কপিরাইট করা যেতে পারে। তবে পুরোনো সফটওয়্যার মোটাদাগে ৫০ শতাংশের বেশি নতুন সংযোজন না হলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।
সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সোর্স কোড বিন্যাস করে নতুন নামে সামনে আসে। তখন এর সুরক্ষার জন্যও কপিরাইট আবশ্যক। সফটওয়্যারের সুরক্ষার জন্যও ন্যারেটিভের কপিরাইট প্রয়োজন, পাশাপাশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই দুই সুরক্ষা কবচ সফটওয়্যারের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার তৈরিতে প্রযুক্তিবিদরা যেমন মেধার কর্ষণে সৃজনের আনন্দ পান, বিপরীতক্রমে পর্দার আড়ালে থাকে পাইরেসি চক্র। তারাও প্রযুক্তির সহায়তায় পাইরেসির মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন করে।
সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনের মোটাদাগের পরিধির ভেতর সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের কপিরাইট অফিস সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে আইনের বিধির মান্যতার অনুশাসন ও অনুসরণ রক্ষা ছাড়াও কপিরাইট বোর্ড এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ইতোপূর্বে বিরোধ নিষ্পত্তির নজির রয়েছে। সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে স্রষ্টা কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহারের স্বত্ব গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জনতুষ্টির বিষয় অনেক সময় লোভী পাইরেট চক্রকে আরও প্রলুব্ধ করে।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় কিছু কোম্পানি অনেক সফটওয়্যার পাবলিক ডোমেন হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। সেই সুযোগে সাধারণ গ্রাহক তুষ্ট হলেও অতিলোভী চক্র সংরক্ষিত সফটওয়্যার অবৈধ উপায়ে পাইরেসি করে আয় করতে চায়। বাংলাদেশে এই প্রবণতা এখন বেশ তীব্র। এ জন্য বর্তমান আইনের বুনন বেশ মজবুত ও প্রতিকার রক্ষায় সাজা ও দণ্ড পূর্বতন অবস্থার চেয়ে ঢের বেশি। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর ষোড়শ অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ৭৮-এ দেওয়ানি, সপ্তদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি প্রতিকারের বিধান আছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চলচ্চিত্রের কপিরাইট বা এই আইনে বর্ণিত অন্য কোনো অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
বর্তমানে সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রযুক্তিবিদদের সৃজনের বিনিময়ে আনন্দ, স্বস্তি, স্বীকৃতি ও যথার্থ বিনিময়মূল্য দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু মেধাস্বত্বের স্রষ্টা নয়; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবহারকারী সুবিধা ভোগ করে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অর্থ প্রদান করে অরিজিনাল সফটওয়্যার পাওয়া গেলেও পাইরেটেড কপির প্রতি নজর বাড়ছে।
ব্যক্তিগত কাজে ড্রপবক্স অ্যাকাউন্ট খুলে তথ্য, ছবি, নথি ইত্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অনেকাংশে গুগল ড্রাইভের চেয়ে সহজতর। ধারণা করা হচ্ছে, সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা আমাদের যাপিত জীবনে আরও থিতু হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু কপিরাইট আইনের বিধিবিধানের কঠোরতা নয়; জনসমাজে কপিরাইট আইনের ফাঁকফোকর না খুঁজে বরং তা মেনে চলা জরুরি।
এ জন্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে পাঠ্যক্রম ও আলাদা বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদবিষয়ক পাঠদানে তত্ত্বীয় দিকের চেয়ে প্রায়োগিক দিককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক বিষয়টির গুরুত্ব থাকে। তবেই পাইরেসি প্রতিরোধে জাগরণ ঘটবে জনসমাজে।
খান মাহবুব: কপিরাইট বিশেষজ্ঞ ও প্রাবন্ধিক