বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
Published: 23rd, January 2025 GMT
বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ৩ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই অর্থ ‘অ্যানহ্যান্সমেন্ট অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ইন ইস্টার্ন রিজন’ প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।
বৃহত্তর কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ও নোয়াখালী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এই ঋণ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডি সচিব মো.
আরো পড়ুন:
আর্থিক খাত সংস্কারে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক
আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৭ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
মূল ঋণ চুক্তিটি ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) তহবিলের আওতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তখন প্রকল্পটির জন্য ৩ হাজার ৬৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সমপরিমাণ ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময় মূল অর্থায়ন থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অন্য কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত ৩ কোটি ডলার প্রয়োজন, যা বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া হচ্ছে।
ঋণটি ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এর সুদের হার ১ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সার্ভিস চার্জ ০ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুত্তোলিত ফান্ডের জন্য সর্বোচ্চ ০ দশমিক ৫০ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জ ধার্য থাকলেও, আগের বছরের মতো বিশ্বব্যাংক বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই অর্থবছরে কোনো কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে না।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক
শিল্পের সমৃদ্ধির ওপরই দেশের অর্থনীতির বিকাশ নির্ভর করে। জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ার বিপরীতে শিল্পকারখানা না বাড়লে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। গত ১৫ মাসে শিল্প খাতে যে সংযোজন ও বিয়োজন ঘটছে, তা আমাদের মোটেই আশ্বস্ত করছে না।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে বিজিএমইএর নতুন সদস্য হয়েছে ১২৮টি কারখানা। অন্যদিকে এই সময়ে বন্ধ হয়েছে ১১৩টি কারখানা। বিজিএমইএর বাইরে এই খাতে এবং অন্যান্য খাতে আরও অনেক কারখানা বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন কারখানাগুলো পুরোদমে চালু হলে ৭৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। অন্যদিকে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে ৯৬ হাজার ১০৪ জন চাকরি হারিয়েছেন।
আশার কথা, কারখানা বন্ধের মধ্যেও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই-মার্চে মোট ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেশি।
নতুন কারখানা চালু ও পুরোনো কারখানা বন্ধের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া বলা হলেও এই সময়ে কারখানা বন্ধের কারণ মূলত রাজনৈতিক। বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়েছে গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর। কয়েকটি শিল্প গ্রুপের মালিক কারাগারে ও আত্মগোপনে থাকায় শ্রমিকদের বেতন–ভাতা বকেয়া পড়ে। সরকার কোনো কারখানায় রিসিভার নিয়োগ করে চালু রাখতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সেটি সফল হয়নি। আবার মালিকদের কাছেই পরিচালনার ভার ন্যস্ত করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণেও শিল্পাঞ্চলে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সার্বিক শিল্প খাতে নতুন যে বিনিয়োগ আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একই সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও বহু কারখানা সাময়িক বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবারও শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানার ভেতরে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকার কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ শনিবার ওই ছুটির নোটিশ দিয়েছে। মূলত শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সেখানে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন।
কর্তৃপক্ষ বলছে, শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনা মেটানোর পরও শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। এর পেছনে বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন আছে বলেও তারা দাবি করছে। বহিরাগত ব্যক্তিদের ইন্ধন থাকুক আর না–ই থাকুক, কোনো অজুহাতেই শ্রমিক ছাঁটাই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকদের বঞ্চিত রেখে কিংবা বিক্ষুব্ধ করে যে সুষ্ঠুভাবে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়, সেটাও তাদের অনুধাবন করতে হবে।
সার্বিকভাবে অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো নয়। একদিকে প্রয়োজনমাফিক নতুন বিনিয়োগ আসছে না, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক–খড়্গ ঝুলছে। তিন মাসের রেয়াত দেওয়া হলেও ১০ শতাংশ বর্ধিত শুল্ক বহাল আছে। তিন মাস পর নাটকীয় পরিবর্তন হবে, তা–ও আশা করা যায় না।
কারখানা বন্ধ থাকায় কেবল মালিকেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হননি, হাজার হাজার শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছেন। সে ক্ষেত্রে বন্ধ হওয়া কারখানা খোলার প্রয়াস অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নজর রাখতে হবে নতুন করে যাতে কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে না যায়। কোথাও সমস্যা হলে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায় বের করতে হবে। যেকোনো মূল্যে শিল্পাঞ্চলে শান্তিপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।