পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাড়ে ১৫ বছর ধরে কারাগারে আটক ১৭৮ জন সাবেক বিডিআর জওয়ান আজ জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন। এরমধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন ১২৬ জন। 

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৬ জন কাশিমপুর কারাগার থেকে বের হয়েছেন। 

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া এই ১৭৮ আসামির জামিননামা গতকাল কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। সেসব জামিননামা যাচাই-বাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদের জামিনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। 

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া ব্যক্তিরা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় জামিন পান গত ১৯ জানুয়ারি। 

আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের (প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ) বিচারক ইব্রাহীম মিয়া ওই জামিন আদেশ দেন। ওই আদেশের মধ্যে দিয়ে গত ১৬ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এই আসামিরা জামিন পান। 

আদেশের পরে মামলার চিফ প্রসিকিউটর মো.

বোরহান উদ্দিন খান জানান, এভাবে জামিনের আদেশটা হয়েছে— যারা আগে খালাসপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রায় পরিবর্তন হয়েছে বা কারো বিরুদ্ধে আপিল পেন্ডিং আছে এবং বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় আলাদা ৩০ জনের মতো আসামি শুধুই বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামি ছিলেন, তাদের ব্যতিরেকে অন্যান্য খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। 

অর্থাৎ হত্যা মামলায় যে আসামিরা বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন, তাদের জামিন দেন আদালত। 

১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। সেদিন বিডিআরের কয়েকশ’ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।

এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। 

রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান। 

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা যান। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেন।

২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচার কাজও শুরু হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি ওঠে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহিদ পরিবারের সদস্যরা।

এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেয় সরকার।

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ড আর র র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

১৬ বছর পর ঘরে ফিরলেন ইউছুফ

দীর্ঘ ১৬ বছরের বন্দিজীবন শেষে মাতৃকোলে ফিরলেন পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় কারাবন্দি সাবেক বিডিআর সদস্য মোহাম্মদ ইউছুফ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে আনন্দাশ্রু ঝরালেন মা রানু বেগম। 

২০০৮ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে বিডিআর-এ যোগ দেওয়া ইউছুফ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর গণগ্রেপ্তারের শিকার হন। ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় খালাস পেলেও বিস্ফোরক মামলায় দীর্ঘ ১৬ বছর কারাগারে কাটাতে হয় তাকে। অবশেষে ২৩ জানুয়ারি মুক্তি পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ২৬ জানুয়ারি উখিয়ার নিজ বাড়িতে ফেরেন। 

এদিকে কারামুক্ত ইউছুফকে সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নেয় এলাকাবাসী। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন ‘এক্স বিডিআর কক্সবাজার ২০০৯’-এর নেতারা। 

এ সময় মা রানু বেগম বলেন, ‘‘সন্তানকে ফিরে পেয়েছি, এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছুই নেই। গত ১৬ বছর যে কষ্টে কেটেছে, তা কাউকে বুঝানো যাবে না।” 

ইউছুফের ছোট ভাই আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, ‘‘আমার ভাইয় জেলে থাকার সময় আমাদের পরিবার চরম কষ্টে ছিল। এখন তাকে ফিরে পেয়ে ভাষায় প্রকাশ করার মতো আনন্দ নেই।’’ 

মুক্তি পাওয়ার পর ইউছুফ বলেন, ‘‘আমি নিরপরাধ ছিলাম, তবু ১৬ বছর কারাগারে কাটিয়েছি। চাই না আর কোনো নির্দোষ বিডিআর সদস্য এমন শাস্তি ভোগ করুক।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘বিডিআর-এ যোগ দিয়েছিলাম পরিবারকে সহায়তা করতে, কিন্তু উল্টো আমার পরিবারই কষ্ট করেছে। সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো, বাবা-মাকে জীবিত পেয়েছি।’’ 

‘এক্স বিডিআর কক্সবাজার ২০০৯’-এর সভাপতি হাবিলদার মো. একরাম উল হুদা বলেন, ‘‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডে কক্সবাজারের ৫৭ জন বিডিআর সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইউছুফ একজন। সরকারকে অনুরোধ জানাই, ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের সহায়তা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।’’ 

ইউছুফের ছোট ভাই বলেন, ‘‘আমার ভাইসহ যারা নির্দোষ, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে চাকরিতে পুনর্বহাল এবং পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।’’

ঢাকা/তারেকুর/ইমন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ বছর পর ঘরে ফিরলেন ইউছুফ