নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি
Published: 23rd, January 2025 GMT
নিউইয়র্ক স্টেটের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা স্টেট সিনেট ১৪ এপ্রিলকে (বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী পয়লা বৈশাখ) বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জানুয়ারি) নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি হিসেবে ও এই রাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি দৃঢ় করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলা নববর্ষের ইতিহাস উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্তে বলা হয়, ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের সূচনা। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে (লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে) একই সময়ে নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন:
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা
ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে ২২টি রাজ্যের মামলা
বাংলা ভাষায় কথা বলেন এমন অভিবাসীর কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা থেকে আগত বিপুলসংখ্যক অভিবাসী নিউইয়র্ক রাজ্যে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আমেরিকায় আসছেন। তাদের অর্ধেকই নিউইয়র্কের বাসিন্দা।
পয়লা বৈশাখ বাঙালির জীবনে অতি গুরুত্বপূর্ণ–সে কথা উল্লেখ করে সিদ্ধান্তটিতে বলা হয়, প্রতি বছরই বিপুল সমারোহে এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে। ২০২২ সাল থেকে দিবসটি নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রবাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে ও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারে নিউইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
সিদ্ধান্তে বলা হয়, নিউইয়র্ক স্টেট বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের গৌরবময় সাফল্যের, বিশেষত এই রাজ্যে বসবাসরত বাঙালিদের অব্যাহত অবদানের স্বীকৃতি জানিয়ে ১৪ এপ্রিল (পয়লা বৈশাখ) এই রাজ্যে বাংলা নববর্ষ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর আমেরিকায় বিশেষ অবদানের জন্য শিকাগো টাওয়ার খ্যাত প্রকৌশলী এফ আর খান, ‘লিভিং দ্য ওয়ার্ল্ড বিহাইন্ড’ খ্যাত রুমানা আনম, লেখক ঝুম্পা লাহিড়ী, অমিতাভ ঘোষ, ইকবাল কাদির, ইউটিউবের কো-ফাউন্ডার জাওয়েদ করিম, খান একাডেমির ফাউন্ডার সালমান খান, ওমর ইশরাকসহ কৃতী বাঙালিদের নাম বিশেষ বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ফাউন্ডার ও সিইও বিশ্বজিত সাহার উদ্যোগে সিনেটর লুইস সেপুলভেদা সিনেটে প্রস্তাবনাটি তুলে ধরেন। ২২ জানুয়ারি এটি গৃহীত হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বজিত সাহা বলেন, “বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যে বিশ্ব বাঙালি রয়েছে, এই স্বীকৃতি সবাইকে উজ্জীবিত করবে।”
এন আর বি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের উদ্যোগে ২০২৩ সাল থেকে টাইমস স্কয়ারে বিশ্ব বাঙালিরা বাংলা বর্ষবরণ করে আসছে।
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎসব ন উইয়র ক র অবদ ন র উদয প
এছাড়াও পড়ুন:
‘অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা’
অভিনন্দন, আজ শুধু তোমাদের শিক্ষাজীবনের বিশেষ দিনটিরই উদ্যাপন হচ্ছে না, আজ শুরু হতে যাচ্ছে তোমাদের জীবনের নতুন এক অধ্যায়। চেনা এই প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যে অপার সম্ভাবনার জগতে তুমি পা রাখতে যাচ্ছ, মনে রেখো এটাই হবে তোমার জীবনের সব অধ্যায়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই সফরের শক্তি হবে তোমার বলিষ্ঠ কণ্ঠ। যখন আওয়াজ তুলবে, সেটা যেন এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য হয়, যেখান সত্য ও সততা তোমাকে পথ দেখাবে। ভয়কে কখনো কণ্ঠরোধের সুযোগ দেবে না। সামনের পথ যত কঠিন আর অনিশ্চিতই হোক না কেন, নিজের প্রত্যয়কে দৃঢ় রেখো। তোমার কণ্ঠই তোমাকে ও অন্যদের অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথ দেখাবে।
একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আমি সব সময় গল্প বলতে চেয়েছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নারী, পুরুষ, শিশুর গল্প তুলে এনেছি। এই গল্পগুলো তুলে আনতে গিয়ে আমি তাদের জীবনকে কাছ থেকে দেখেছি। পেয়েছি কিছু সহজ-সরল শিক্ষা, আজ সেগুলোই তোমাদের বলব।
নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকোমাত্র ১৪ বছর বয়সে পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। ১৭ বছর বয়সে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। ঠিক করি এমন এক বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করব, যে বিষয়টা কেউ ঘাঁটতে চায় না। স্পষ্ট মনে আছে, এক ঈদের দিনে আবিষ্কার করলাম বাড়ির আশপাশে স্প্রে পেইন্ট দিয়ে কেউ আমার বিরুদ্ধে গ্রাফিতি এঁকেছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা, আমাকে চুপ করানো আর ভয় দেখানোই ছিল এই গ্রাফিতির উদ্দেশ্য। কারণ, আমি শহরের কিছু প্রভাবশালীর বিপক্ষে আওয়াজ তুলেছিলাম। আমার অনুসন্ধান তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। আমার বাবা, যাঁর প্রভাব আমার জীবনে অসামান্য, আমাকে সেদিন একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার কথাগুলো যদি সত্য হয়, আমি তোমার সঙ্গে আছি।’ এরপর নিজ হাতে সেদিন প্রতিটা দেয়াল পরিষ্কার করেছিলেন। সেদিন সেই মুহূর্তে শিখেছিলাম, পৃথিবী যতই তোমাকে ভয় দেখাক, ন্যায়ের জন্য সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলে সেটাই হবে সবচেয়ে শক্ত হাতিয়ার। আজ যখন তুমি ভবিষ্যতের দোরগোড়ায়, মনে রেখো তোমার একেকটা সিদ্ধান্ত, একেকটা সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ তোমাকে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তুলবে। এবার তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, অথবা গতানুগতিক ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করো। যে পথই বেছে নাও না কেন, মাথায় রেখো—তোমার সিদ্ধান্ত শুধু তোমার একার নয়, পুরো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকেও বদলে দিতে পারে।
আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অদম্য আর জেদি স্বপ্নগুলো আগলে রাখো‘প্যাশন’ হলো সেই চালিকা শক্তি, যা তোমাকে জীবনের চড়াই–উতরাইগুলো পার হতে সাহায্য করবে। আমার জীবনে বরাবরই গল্প বলা আর সত্যকে তুলে ধরার অদম্য আকাঙ্ক্ষা ছিল। অনেক প্রত্যাখ্যানের পরও আমি সম্ভবের সীমানা পেরিয়ে অসম্ভবকে অর্জনের স্বপ্ন দেখতাম।
অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেও ২০০২ সালে সিদ্ধান্ত নিই—তথ্যচিত্র নির্মাতা হব। প্রথম চলচ্চিত্র বানানোর জন্য প্রস্তাবপত্র লিখে বিশ্বের নানা দেশের ৮০টি টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে পাঠাই। এরপর তাদের জবাবের অপেক্ষা করতে থাকি। আসতে থাকে একের পর এক প্রত্যাখ্যান। আমি লড়তে থাকি নিজের সঙ্গে। নিজের অশ্রু, আক্ষেপ আর মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে।
বুঝতে পারছিলাম না, কেন কেউ ২১ বছর বয়সী একজন নবীন নারী নির্মাতা, যে ঠিকমতো ক্যামেরা ধরতে পারে না, যার সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা নেই, ডিগ্রি নেই, তাকে কাজ দিতে চাইছে না! স্পষ্টত, মানুষ আমার ধারণার চেয়েও বেশি বাস্তববাদী ছিল তখন, যার জন্য এত এত প্রত্যাখ্যান! কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। লেগেই থাকলাম। এরপর একদিন কোনো কারণ ছাড়াই নিউইয়র্ক টাইমস টেলিভিশনের প্রেসিডেন্ট বরাবর একটা অযাচিত ই–মেইল লিখে বসলাম। সঙ্গে দিলাম আমার প্রস্তাবপত্রটিও। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এল ফিরতি ই–মেইল। তাতে লেখা ছিল, আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব সশরীর শোনানোর জন্য আমাকে নিউইয়র্কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের ট্রেন ধরলাম, আর একদল অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। খুব জলদিই আমার তথ্যচিত্রের প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। আমাকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রশিক্ষণও দেওয়া হলো। অবশেষে সফল হলো আমার ৮১তম চেষ্টা। সামনে খুব সহজ দুটি পথ ছিল—হাল ছেড়ে দাও, অথবা নিজের স্বপ্নের পেছনে লেগে থাকো। জীবনে এমন মুহূর্ত অনেক আসবে, যেখানে হতাশ হয়ে মনে হবে হাল ছেড়ে দিই। আমি অনুরোধ করব, তোমরা বড় স্বপ্ন দেখো। প্রতিদিন যেন ঘুম ভেঙে সেই স্বপ্নের পেছনে ছোটার তাড়না তোমাদের সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুনব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্লকচেইন একাডেমি০৩ নভেম্বর ২০২৪এই পরিচালকের জন্ম পাকিস্তানে, তবে থিতু হয়েছেন কানাডায়