অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ফখরুলের
Published: 23rd, January 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি মনে করেন, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এই প্রশ্ন তোলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি এ কথা গতকালও বলেছি, আমাকে একজন সাংবাদিক ভাই এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিরপেক্ষ না থাকে তাহলে একটা নিরপেক্ষ সরকার দরকার হবে নির্বাচনের সময়ে।”
আরো পড়ুন:
ফখরুলের বিশ্বাস, সরকার আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করতে পারে
নেতাকর্মীদের বক্তৃতা ও স্লোগানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে: ফখরুল
তিনি বলেন, “আমি কথাটা বলছি যে, এর কারণ আছে। কারণ হচ্ছে, আমরা দেখছি যে, বেশ কিছু বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা পালন করতে পারছেন না।”
ফখরুল বলেন, “আমি অনুরোধ করব.
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। অন্যদিকে ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষ করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি। এ নিয়ে অনেক দিন ধরে বিএনপি নেতারা কথা বলছেন।
‘ন্যূনতম বিষয়ে ঐক্যমত জরুরি’
ফখরুল বলেন, ‘‘আসাদের মৃত্যু, আবু সাইদের শাহাদাত বরণ এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবনদান একাত্তর সাল থেকে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সেটাকে যদি অর্থবহ করতে হয়; তাহলে যেটা প্রয়োজন, ন্যূনতম বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা যারা একসাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করছিলাম, ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। এখন যদি কোনো পরিবর্তন করতে হয়, পরিবর্ধন করতে হয়, সেটাও সামনে আসতে পারে। ওটাকে সামনে রেখেই আমাদের এগুতে হবে।”
‘‘আমি মনে করি, এই ন্যূনতম যে সংস্কার হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক, সেটা শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের পথে যাওয়া। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার বেরিয়ে আসবে, তাদের দায়িত্ব হবে পুরোপুরিভাবে সংস্কারের কমিটমেন্টগুলো বাস্তবায়িত করা। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। আসাদের রক্তকে, আবু সাইদের রক্তকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারেনি। সেজন্য ঐক্য গড়ে তুলে তাদের (শহীদদের) স্বপ্নকে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তার এই আত্মত্যাগ স্বৈরশাসনবিরোধী চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খানের।
‘দ্রুত নির্বাচন নইলে অন্য শক্তির উত্থান হতে পারে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘একটা কথা আমি বলি, যে কথা বললে পরে আমার সমালোচনাও হয়। আমি বলি যে, নির্বাচনটা দ্রুত হওয়া দরকার। কেন বলি এই কথাটা, আমি বারবার বলার চেষ্টা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যে নির্বাচন থেকে আমরা ১৫ বছর বঞ্চিত; এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের জনগণ তারা তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবার একটা সুযোগ পাবে।”
‘‘আপনারা দেখছেন, জোর করে সেই বিষয়টাকে যদি বিতর্কিত করে ফেলা হয়, তাহলে তো জনগণ আবার সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। আমাদের যে অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এই ধরনের নির্বাচন যদি দ্রুত না হয়, সময়ক্ষেপণ করা হয়, তাহলে অন্যান্য শক্তিগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। তখন জনগণের যে চাহিদা, সেই চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরিভাবেই বঞ্চিত হয়।”
তিনি বলেন, ‘‘আমরা একথা বারবার বলতে চাই, নির্বাচনে কে আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেটার জন্য আমরা লড়াই করেছি দীর্ঘ ১৫ বছর। আমি সেই কারণে বলেছি, আমাদের দরকার সত্যিকার অর্থেই বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকার আছে; সেই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।”
‘‘স্বাভাবিকভাবে একটা ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরেই জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত সমাজের যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, সেই অবস্থায় কিন্তু আমরা সেই ধরনের একটা ব্যবস্থা দেখে এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না যে; দেশের মানুষের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।”
‘নির্বাচনের জন্য কত অপেক্ষা?’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন রকম প্রোগ্রাম আছে। সেই কর্মসূচি নিয়ে তারা এগুতে চায়। তবে একটা বিষয় সবাই একমত, একটা নির্বাচন হওয়া দরকার। নির্বাচনটা শুধু একটা দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। নির্বাচনটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য একটা পথ সৃষ্টি করা, একটা দরজা খোলা।”
‘‘আজকে প্রশ্ন উঠছে, সংস্কার সবগুলো করে নির্বাচনে যাওয়ার। তাহলে কী আমরা ৪/৫ বছর ধরে অপেক্ষা করব বা যতদিন সংস্কার সম্পন্ন না হয় ততদিন ধরে অপেক্ষা করবে জনগণ? তারা তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা এখনো দেখছি, আমাদের আমলাতন্ত্র আগের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থায় তারা এখনো সচিবালয় থেকে শুরু করে সমস্ত প্রশাসনে একইভাবে ভূমিকা পালন করছে। কোনো রদবদল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল-কলেজগুলোতে সেই ধরনের লেখাপড়া হয় না, স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এটা অতীত থেকেই এসছে এবং সেই পরিবর্তন এত অল্প সময়ে সম্ভবও নয়। কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনগুলো চাই।”
‘‘সেই কারণে বলেছি, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। নির্বাচন দ্রুত হলে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তার যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট টু পিপলস থাকবে, সেগুলো পালন করতে অবশ্যই দায়বদ্ধ থাকবে।”
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুফুর রহমান, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ, শহীদ আসাদের ছোট ভাই আজিজুল্লাহ এম নুরুজ্জামান নূর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/নাজমুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ ব যবস থ সরক র র জনগণ র র জন য ব এনপ দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫২ জন ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে ওসমান ও তার দোসররা : সাখাওয়াত
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আপনারা সকলে বর্তমানে ভালো আছেন। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আমাদের দলের পক্ষে সবাইকে জানাই অগ্রিম ঈদ মোবারক।
আজকে সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু মাধ্যমে আপনাদের মাধ্যমে চারদিনের কর্মসূচী পালনে উদ্বোধন করা হচ্ছে। আপনারা যেন সুন্দর ভাবে ঈদ পালন করতে পারেন, সেটা জন্য তিনি এত কিছু আপনাদের দিচ্ছেন। আমরা চেয়েছিলাম আপনাদের নিয়ন্ত্রণ দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হোক। সেটা করতে পেরেছি বর্তমানে সময়ে।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকার জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে লক্ষ লক্ষ ডলার পাচার করেছে। এই যে ৫ আগষ্ট ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের ৫২ জন ছাত্র-জনতাকে শামীম ওসমান ও তার দোসররা হত্যা করেছে। শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান তাদের ছেলে ভাতিজারা টাকা লুট করে পালিয়েছে। তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের পাশে বিএনপি সকল নেতা-কর্মীদের থাকতে নিদের্শনা দিয়েছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাসিক ১২নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর কার্যালয়ে বিত্তবানদের সহযোগিতায় কর্মহারা ও অস্বচ্ছল পরিবারের মাঝে ঈদ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক হানিফ সরদার, মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, আহবায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ রানা, ফারুক আহম্মেদ রিপন, মাহবুব উল্লাহ তপন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের আহবায়ক শাখাওয়াত ইসলাম রানা, যুবদল নেতা সরকার হুমায়ূণ ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর কৃষকদলের সভাপতি এনামুল হক স্বপন প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, আগামী দুইদিন পবিত্র ঈদ। আপনাদের সকলকে জানাই অগ্রিম ঈদ মোবারাক। সাবেক কাউন্সিলর শকুর মাধ্যমে আপনাদের ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের দোসররা পালিয়ে গিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের ফ্যাসি গডফাদার সেলিম, শামীম, আজমির ও অয়ন ওসমানের সাথে আতাঁত করা যাবে না। পবিত্র মাহে রমজানে বলছি, যেই আতাঁত করবে নারায়ণগঞ্জে আবারো তাদেরকে স্টাফলিষ্ট করার চেষ্টা করবেন, আল্লাহ তাদের যেন ধ্বংস করে দিবে। ওসমান পরিবারকে কোন ছাড় দেয়া যাবে না। বিশ্বের কাছে নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস পরিচয় করেছে সেই ওসমানদের কোন ক্ষমা করা যাবে না।
আগামী দিনে এমপি মেয়র ও কাউন্সিলর কে হবেন- মহান আল্লাহ ও তারেক রহমান ছাড়া বলতে পারবে না। জনগণ যাকে দিয়ে উপকৃত হয় তাদেরকে জনপ্রতিনিধি করা হবে। আপোষহীণ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জন্য সকলের দোয়া চাই। তিনি আপনাদের সেবা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ এসে আপনাদের রায় নিয়ে জনগণের মুখে হাসি ফোটানো জন্য ছটফট করছেন তারেক রহমান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড সাবেক কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু বলেছেন, ঈদের খাদ্য সামগ্রী বিতরন করে যাচ্ছি ২২ বছর যাবৎ। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চারদিন ব্যাপী প্রায় ৫ হাজার অসহায় ও অস্বচ্ছল পরিবারকে খাদ্য বিতরণ করা হবে। এরপর শাড়ী লুঙ্গি ও কাপড় বিতরণ করা হবে বিত্তবানদের সহযোগিতায়। আজকে আমি অনেক খুশি।
দেশ আবার নতুন স্বাধীনতা পাওয়ার প্রথম ঈদ পালন করতে যাচ্ছে। এর আগে ৮ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন আমাকে খুশি করার আগে মানুষকে খুশি করাও। আমার ওয়ার্ডের ডাটাবেজ করা আছে প্রায় ১১ হাজার মানুষ অস্বচ্ছল রয়েছে। তাদের মধ্যে দিতে পারলে আমি মহান আল্লাহ দরবারে কাছে খুশি হবো।