Samakal:
2025-03-03@21:22:36 GMT

সাতকাহন: নারী সংগ্রামের আখ্যান

Published: 23rd, January 2025 GMT

সাতকাহন: নারী সংগ্রামের আখ্যান

জমে উঠেছে নাটকপাড়া। একের পর এক মঞ্চায়ন হচ্ছে নতুন নতুন নাটক। ব্যতিক্রমী পরিবেশনা নিয়ে আসছে দলগুলো। তেমনই একটি ‘সাতকাহন’। নবরস নৃত্য ও নাট্যদলের ৪র্থ প্রযোজনা এটি। ভিন্নধর্মী একটি গল্পের নাটকটি দর্শক প্রশংসা কুড়িয়েছে। শামীম সাগরের রচনায় নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা।

চলতি বছরের প্রথম দিন এ উপলক্ষে গণমাধ্যমের জন্য বিশেষ শো করেছে দলটি। আর দর্শকের জন্য বছরের শুরুতে ২-৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড.

নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তন মঞ্চে প্রথমবারের মতো মঞ্চস্থ হয়।

নাটকের গল্পে দেখা যায়, এক পাঁচতারকা হোটেলের লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি। এরই সঙ্গে শহরের ব্ল্যাকআউটে আটকা পড়ে তিন ভিন্ন জগতের তিন নারী। এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী উঠতি অভিনেত্রী, এক গৃহবধূ, আর এক যৌনকর্মী। প্রথমে সন্দেহ, তর্ক আর অপমানের জালে জড়িয়ে পড়লেও ধীরে ধীরে নিজেদের জীবনের গল্পে তারা একে অপরকে চিনতে শুরু করে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শোষণ, বঞ্চনা আর ব্যক্তিগত সংগ্রামের গল্প তাদের এক অদ্ভুত বন্ধনে আবদ্ধ করে। লিফট সচল হলে, নির্দিষ্ট ফ্লোরে পৌঁছেও তারা আর বের হয় না। কারণ তারা বুঝে গেছে, তারা একই পুরুষের প্রতারণার শিকার এবং একে অপরের শত্রু নয়; বরং একই লড়াইয়ের সহযাত্রী। নাটকে তিন নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন রোজী সিদ্দিকী, সৈয়দা শামছি আরা ও মিতা গাঙ্গুলী।

উচ্চবিত্ত বিলাসবহুল জীবনের মধ্যে আসলে যে নারী অধিকারহীনতা, নারীর যন্ত্রনা ও নারী স্বাধীনতার অভাব রয়েছে তা নাটকের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নির্দেশক। এ নাটকের কাহিনি পরম্পরা। উচ্চবিত্ত জীবন নিয়ে এ ধরনের নাটক মঞ্চে আগে কখনও হয়নি। রোজী সিদ্দিকী, সৈয়দা শামছি আরা ও মিতা গাঙ্গুলীর অভিনয় ছিল অসাধারণ। তাদের প্রাণবন্ত অভিনয়, মিউজিক, লাইট ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে অনবদ্য পরিবেশনা ছিল। তবে পোশাকে নারী চরিত্রগুলো স্টাবলিস্ট হয়নি। পোশাকে কিছু পরম্পরাহীনতা মনে হয়েছে। তিনজন নারী প্রায় একই রকম ড্রেস পরেছেন, যে কারণে চরিত্রবিন্যাস আলাদাভাবে বুঝতে একটু অসুবিধা হয়েছে।

নাটকটি প্রসঙ্গে নাট্যকার শামীম সাগর বলেন, “নারীকেন্দ্রিক একটি নাটক লেখার অনুরোধ করেছিলেন নবরসের কর্ণধার শামছি সায়েকা। তখন থেকেই ভাবনাটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল; একসময় লেখার সূত্রটা মগজে ধরা দিল। এরপরই ‘সাতকাহন’ রচনার যাত্রা শুরু হয়। আশা করি দর্শক নারীদের সাতকাহন দর্শন ও শ্রবণে ভাবিত হবেন, আবেগে ভাসাবেন নিজেদের, অন্তরের আয়নায় নিজেদের নতুন করে দেখবেন নিশ্চিতভাবে। আপনাদের ভালোলাগা আমার অনুপ্রেরণা। আপনাদের ভালোবাসা সাতকাহনকে পূর্ণতা দেবে।’

নির্দেশকের ভাষ্য, “নবরস দল থেকে শুধু নারীদের নিয়ে নাটক করার ইচ্ছা ছিল, বিশেষ করে সাতকাহন গল্পটার মতো পাণ্ডুলিপিতে। এমন একটি বিষয় নিয়ে নাটক করার তাড়না অনেক দিন ধরে মনে ধারণ করেছিলাম। নাটকটি মঞ্চে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্য হলো, সমাজে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা। তবে তা সম্ভব না জেনে-বুঝেও চেষ্টাটুকু করা মাত্র। শামীম সাগরের এমন নিপুণ আর শৈল্পিক লেখায় মুগ্ধ আমরা সব অভিনয় শিল্পীরা। ধন্যবাদ জানাই তাকে ও নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত কলাকুশলী ও নেপথ্যে যুক্ত সব শিল্পীবৃন্দের। কন্যা-জায়া-জননী এই ৩টি শব্দের তাৎপর্য বিশাল। একজন নারীকে মা হিসেবে, কন্যা হিসেবে বা স্ত্রী হিসেবে যে সম্মান সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। সৃষ্টিকর্তা যে সম্মান, গুরুত্ব ও মর্যাদা নারীদের দিয়েছেন, সে দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবারের সমাজের কাছ থেকে, পাচ্ছে কিনা বা মিলছে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান গোটা পৃথিবী। পুরুষশাসিত সমাজে সব প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে, নারীদের জীবনের এই নাটকীয় অবস্থান।”

প্রযোজনাটির পোশাক পরিকল্পনা করেছেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি। সংগীত পরিকল্পনা করেছেন গোপী দেবনাথ। নৃত্য পরিকল্পনা করেছেন সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা। আলোক পরিকল্পনা করেছেন পলাশ হেন্ড্রি সেন আলো। সেটা ডিজাইন করেছেন শামীম সাগর। ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল ‘নবরস’ নৃত্য ও নাট্যদলের যাত্রা শুরু হয়। দলটির অন্যান্য প্রযোজনাগুলো হলো– ঊনপুরুষ (মঞ্চনাটক, ২০২৩), আর্তনাদ ও দ্য ক্লেইম (পথনাটক, ২০২৪)। 

 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন ন টকট

এছাড়াও পড়ুন:

নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান

‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।     

এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। 

রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম  (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’

তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা,  সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ