বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনায় মো. আলিফ (১৮) নামে এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ভাই জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫৬ নেতাকর্মী এবং ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার দিবাগত মধ্য রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।  

২০২৪ সালের ২১ জুলাই বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের ডাচ-বাংলা ব্যাংক এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলছিল। অভিযোগ অনুযায়ী, শামীম ওসমানের নির্দেশে এবং তার ছেলে অয়ন ওসমান ও ভাতিজা আজমেরি ওসমানের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র, শর্টগান, পিস্তল, ককটেল, লাঠি, ইট-পাটকেল এবং ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে।  

এ সময় হামলাকারীদের ছোড়া গুলিতে আলিফের বাম পায়ের হাঁটুতে গুলি লাগে। গুরুতর আহত আলিফকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে ট্রাস্ট হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।  

আলিফের বাবা মো.

অহিদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পরপরই থানায় মামলা করার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে বুধবার গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা রুজু করা হয়।  

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে শামীম ওসমানকে। তার সঙ্গে তার ভাই সেলিম ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক ভূঁইয়া রাজু এবং নাসিক ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রহিম মেম্বারসহ মোট ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।  

মামলায় আরও ১৫০-২০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে।  

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা রুজু করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন স দ ধ রগঞ জ থ ন শ ম ম ওসম ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় স্মৃতিসৌধে আগামীকাল শ্রদ্ধা জানাবে এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এর পর সাভার থেকে রায়েরবাজারে গিয়ে অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করবেন এনসিপির নেতারা। এর মধ্য দিয়ে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

সাভার ও রায়েরবাজারের কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেবেন। সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে দলের নির্বাহী কমিটির পরিচিতি সভা হতে পারে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বড় জমায়েতের মধ্য দিয়ে এনসিপির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পর শনিবার গভীর রাতে ২১৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে বাম ও ডানপন্থী সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ জায়গা পেয়েছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা মানুষের পাশাপাশি নতুন এই দলের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন দলিত-হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও।

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। কার্যালয় ঠিক হওয়ার আগপর্যন্ত আপাতত রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেই এনসিপির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

দল ঘোষণার পর এনসিপি এখন নিবন্ধনের শর্ত পূরণের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছে। সে জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কার্যালয় করার কথা ভাবছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা।

এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।’

এনসিপিকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে থাকা সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা তৈরি করেছে।
দল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘যারা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছে, যারা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছে, হয় তারা বোঝে না অথবা বুঝেও আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র আছে।’

সর্বশেষ গত রোববার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি এখনো বুঝি নাই সেকেন্ড রিপাবলিক কী। কী বোঝায়, আপনারা বুঝেছেন কি না, জানি না? অর্থাৎ, একটা অছিলা ধরে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। দয়া করে খেয়াল রাখবেন।’

বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ নিয়ে নানা বক্তব্য দেওয়া হলেও এনসিপি এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ