ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় গ্রামীণ জনপদ নিমুরিয়া এলাকায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন মানুষের ঘরে ঘরে লোডশেডিং মুক্ত আলো পৌঁছে দিতে ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরি করছে মুক্তাগাছা সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (এমএসইএল)। চলতি বছরের জুন থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগ হবে এ সৌরবিদ্যুৎ। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তাগাছায় শীত মৌসুমে ৩০ মেগাওয়াট এবং গরমের মৌসুমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। পল্লী বিদ্যুত সমিতি উভয় মৌসুমে ৬০-৭০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এমএসইএল’র ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগ হলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে মুক্তাগাছাবাসী।

জানা গেছে, সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্যান্য মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে তুলনামূলক কম। এমএসইএল উপজেলার গহীন গ্রামের পরিত্যক্ত জনবসতি থেকে বিচ্ছিন্ন অব্যবহারযোগ্য ৭৪ একর জমির উপর এই ২০ মেগাওয়াট এসি সোলার পিভি প্ল্যান্ট তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। পরিবেশ বান্ধব এই সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে, যা ওই এলাকার বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরে ৩৭ দশমিক ৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং বার্ষিক ১৮ হাজার ৩৪৪ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন এড়াবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কল-কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।

জুলস্ পাওয়ার লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমএসইএল-এর প্ল্যান্টে যে জমি ব্যবহার করা হয়েছে তা জলাবদ্ধ এবং কচুরিপানার কারণে এতই দুর্গম ছিল যে সেখানে কারও প্রবেশ করা সম্ভব ছিল না। সে কারণে এখানকার জমির মালিকরা জমি পরিত্যক্ত রেখেছিলেন। মূলত, সেই কারণে বাংলাদেশ সরকার এবং এমএসইএল এই পরিত্যক্ত জমিটিকে একটি যুগোপযোগী উৎপাদনশীল স্থানে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়।

৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে বেশিরভাগ সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সম্প্রতি মুক্তাগাছা সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (এমএসইএল) এর প্রজেক্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,  আগামী জুন মাসে উৎপাদন শুরু লক্ষ্যে পুরোদমে মাটি ভরাট  ও প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। একাধিক ভেকু দিয়ে কন্ট্রোলরুমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের এলাকার বিশাল এই জমিটি জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। এখানে সারা বছর কচুরিপানা থাকায় জমিটি পতিত থাকত। সে জন্য আগে আমি জমি কোনো কাজে লাগাতে পারতাম না। এই পরিত্যক্ত জমি থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পেতাম না। বর্তমানে জমি লিজ দিয়ে প্রতি বছর ভাড়ার টাকা পাবো। এতে আমার আয়ের ব্যবস্থা হবে।

জুলসের কর্মকর্তা মো.

মেহেদুল ইসলাম জানান, জমির মালিকদের কাছ থেকে বার্ষিক ভাড়ার ভিত্তিতে ২২ বছরের জন্য লিজ নিয়ে এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হচ্ছে। জমির অধিকাংশ স্বাভাবিক অবস্থায় রেখেই শুধু পিলার বসিয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে ফলে তা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখবে। এমএসইএল ২০২৪ সালের মে মাস থেকে জলাশয় পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৯৭৮ জন কর্মী এই কাজের সঙ্গে জড়িত, যাদের সবাই স্থানীয় বাসিন্দা। এর মাধ্যমে এই প্ল্যান্টে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। জুলস্ পাওয়ার লিমিটেডের এই প্ল্যান্টের নির্মাণকাজে যেমন বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কাজের সুযোগ হবে যাদের অধিকাংশই হবে স্থানীয়, তেমনি পরবর্তীতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে গেলে যে লোকবল প্রয়োজন হবে তাদের নিয়োগেও স্থানীয়দের অগ্রাধিকার থাকবে। এজন্য স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে।

প্রকল্পের কারণে এলাকার জনবসতির এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে আশা করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম জানান, আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে অল্প কিছু পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পেলেও অধিকাংশ এলাকার মানুষ তা পায় না। এছাড়া যারা বিদ্যুৎ সুবিধা পায় তারাও দিনের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিং-এ পড়েন। এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না। সেক্ষেত্রে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় সুবিধা হবে। পাশাপাশি বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট আলোকিত হবে। ফলে চুরি-ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ অনেকাংশেই কমে আসবে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, মুক্তগাছা উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি না। ফলে লোডশেডিং ও ভোল্টেজ সমস্যা হচ্ছে। এমএসইএল-এর প্রকল্প থেকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন শুরু হলে মুক্তাগাছাবাসী অনেক উপকৃত হবে। কলকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে, যা এই এলাকার জনজীবনে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ উৎপ প রকল প এল ক র উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্প কাজে আসছে না

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাংলাদেশে গ্যাস নেই জেনেও তারা এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। গত দেড় দশকে এ গ্যাসলাইন দিয়ে মাত্র এক দিন গ্যাস সরবরাহ হয়েছে। এরপরও ‘কল্পিত’ গ্যাস সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে খুলনায়। কেন্দ্র দুটি বসে থাকছে। এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্পই কাজে আসছে না।

বাংলাদেশে এডিবির বিনিয়োগ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা এনজিও ফোরাম অন এডিবি ও কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন)। মঙ্গলবার বাংলামোটরের একটি রেস্তোরাঁয় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এডিবির বিনিয়োগ করা বেশ কিছু প্রকল্প জ্বালানি খাতে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

‘বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির বিনিয়োগ ঝুঁকি উন্মোচন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন এনজিও ফোরাম অব এডিবির জীবাশ্ম জ্বালানি প্রচারাভিযানকারী শারমিন বৃষ্টি। এতে বলা হয়, ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ১০৬টি প্রকল্পে ১৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে এডিবি। এর অধিকাংশই জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এডিবির এমন একমুখী বিনিয়োগ নীতির ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ক্রমেই ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশে সংস্থাটির বিনিয়োগ নীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠন দুটি।

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে এডিবির দীর্ঘদিনের বিনিয়োগ মডেলের কড়া সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এতে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, তেল-গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ খাতে এডিবির বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনায় না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ফলে এডিবির ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৬৭টি জ্বালানি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এশিয়ার বহুজাতিক আর্থিক সংস্থাটির পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া সংস্থাটির একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস সঞ্চালন লাইন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এনজিও ফোরাম অন এডিবির নির্বাহী পরিচালক রায়ান হাসান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এডিবি বাংলাদেশে ২ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট ৪ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর প্রকল্পে, মাত্র আড়াই শতাংশ সৌরবিদ্যুতে। বায়ু বিদ্যুতে এখন পর্যন্ত কোনো বিনিয়োগ নেই। তিনি বলেন, প্রতি মেগাওয়াটে জীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ ২.০৪ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে তা মাত্র ০.৫১ মিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান এডিবির টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এডিবির বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে অর্থায়ন বিশ্লেষণ করে ক্লিন-এর প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, এডিবি খুলনায় ২২৫ ও ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ করেছে। অথচ এসব প্রকল্প গ্যাসের অভাবে বছরের পর বছর বসে আছে; জনগণের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে এডিবি এ কাজটি করতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এডিবি এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে অর্থায়ন করে চলেছে, যা বাসযোগ্য ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। ফলে এডিবিকে অবশ্যই তার জ্বালানি নীতি পরিবর্তন করে শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে যেতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে এডিবির জ্বালানি নীতি সংস্কার প্রয়োজন। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে অর্থায়নকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানিতে এডিবির সব রকমের অর্থায়ন বন্ধ করারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এডিবির বিনিয়োগ করা একাধিক প্রকল্প কাজে আসছে না
  • ১০৫ মিনিট পর স্থগিত ফাইনাল, বাকি খেলা কবে
  • ১০৫ মিনিট পর স্থগিত ফাইনাল, ১৫ মিনিটের খেলা কবে
  • আবাহনী-কিংসের শিরোপা লড়াই আজ
  • এসএসসির চতুর্থ পরীক্ষার দিনে বহিষ্কার ৭৮
  • ময়মনসিংহে বাস থেকে মাথার খুলি-হাড় উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • ঢাকার আকাশে কালো মেঘ
  • ‘পুতের মুহেত্তে একটাবার মা ডাক হুনবার চাই’
  • বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কতিপয় সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে: ছাত্রদল
  • ময়মনসিংহে পেট্রল বিক্রির দোকানে পুড়ে অঙ্গার ব্যবসায়ী