লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছে মুক্তাগাছাবাসী
Published: 23rd, January 2025 GMT
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় গ্রামীণ জনপদ নিমুরিয়া এলাকায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন মানুষের ঘরে ঘরে লোডশেডিং মুক্ত আলো পৌঁছে দিতে ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট তৈরি করছে মুক্তাগাছা সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (এমএসইএল)। চলতি বছরের জুন থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগ হবে এ সৌরবিদ্যুৎ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মুক্তাগাছায় শীত মৌসুমে ৩০ মেগাওয়াট এবং গরমের মৌসুমে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। পল্লী বিদ্যুত সমিতি উভয় মৌসুমে ৬০-৭০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারে। এমএসইএল’র ২০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগ হলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে মুক্তাগাছাবাসী।
জানা গেছে, সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অন্যান্য মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়ে তুলনামূলক কম। এমএসইএল উপজেলার গহীন গ্রামের পরিত্যক্ত জনবসতি থেকে বিচ্ছিন্ন অব্যবহারযোগ্য ৭৪ একর জমির উপর এই ২০ মেগাওয়াট এসি সোলার পিভি প্ল্যান্ট তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। পরিবেশ বান্ধব এই সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে, যা ওই এলাকার বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরে ৩৭ দশমিক ৯ গিগাওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং বার্ষিক ১৮ হাজার ৩৪৪ টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন এড়াবে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে শিল্পায়ন ও কল-কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।
জুলস্ পাওয়ার লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এমএসইএল-এর প্ল্যান্টে যে জমি ব্যবহার করা হয়েছে তা জলাবদ্ধ এবং কচুরিপানার কারণে এতই দুর্গম ছিল যে সেখানে কারও প্রবেশ করা সম্ভব ছিল না। সে কারণে এখানকার জমির মালিকরা জমি পরিত্যক্ত রেখেছিলেন। মূলত, সেই কারণে বাংলাদেশ সরকার এবং এমএসইএল এই পরিত্যক্ত জমিটিকে একটি যুগোপযোগী উৎপাদনশীল স্থানে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়।
৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে বেশিরভাগ সহায়তা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সম্প্রতি মুক্তাগাছা সোলারটেক এনার্জি লিমিটেড (এমএসইএল) এর প্রজেক্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগামী জুন মাসে উৎপাদন শুরু লক্ষ্যে পুরোদমে মাটি ভরাট ও প্রকল্প এলাকার উন্নয়ন কাজ এগিয়ে চলছে। একাধিক ভেকু দিয়ে কন্ট্রোলরুমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরির কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের এলাকার বিশাল এই জমিটি জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। এখানে সারা বছর কচুরিপানা থাকায় জমিটি পতিত থাকত। সে জন্য আগে আমি জমি কোনো কাজে লাগাতে পারতাম না। এই পরিত্যক্ত জমি থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পেতাম না। বর্তমানে জমি লিজ দিয়ে প্রতি বছর ভাড়ার টাকা পাবো। এতে আমার আয়ের ব্যবস্থা হবে।
জুলসের কর্মকর্তা মো.
প্রকল্পের কারণে এলাকার জনবসতির এবং মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে আশা করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহীদুল ইসলাম জানান, আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে অল্প কিছু পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পেলেও অধিকাংশ এলাকার মানুষ তা পায় না। এছাড়া যারা বিদ্যুৎ সুবিধা পায় তারাও দিনের বেশিরভাগ সময় লোডশেডিং-এ পড়েন। এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না। সেক্ষেত্রে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনায় সুবিধা হবে। পাশাপাশি বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট আলোকিত হবে। ফলে চুরি-ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ অনেকাংশেই কমে আসবে।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ডিজিএম মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, মুক্তগাছা উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি না। ফলে লোডশেডিং ও ভোল্টেজ সমস্যা হচ্ছে। এমএসইএল-এর প্রকল্প থেকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন শুরু হলে মুক্তাগাছাবাসী অনেক উপকৃত হবে। কলকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে, যা এই এলাকার জনজীবনে অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ উৎপ প রকল প এল ক র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম, স্বীকার করলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম—বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তবে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। বিএসটিআইয়ের বাজার তদারকি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিদর্শন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
সয়াবিন তেলের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কম। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। আশা করছি, আজ থেকেই সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করবে।’
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘সয়াবিন তেল বেশি দামে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনি পাম তেল সরকার নির্ধারিত দাম থেকে ২৫ টাকা কমেও বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মোট ভোজ্যতেলের ৬০ শতাংশ পাম তেল। বাজারে তেলের দাম একই সঙ্গে কমেছে ও বেড়েছে। আশা করছি, সয়াবিন তেলের দামও কমে আসবে।’
বাজার পরিদর্শনে আরও ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। অন্যদের মধ্যে ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্পসচিব মো. ওবায়দুর রহমান, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান প্রমুখ।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যে ভেজাল রোধে পবিত্র রমজান মাসে বিএসটিআই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। আজ চারটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। বিএসটিআইয়ের এ ধরনের কার্যক্রম বছরব্যাপী চলমান থাকে। রমজান মাসে এ ধরনের বাজার তদারকি আরও জোরদার করা হয়েছে।