চারপাশের সন্দেহ আর গুজবে বিপিএল এখন যেন কানকথার টুর্নামেন্ট! রাজশাহীর ক্রিকেটারদের সম্মানী না পাওয়ার বাস্তবতা দিয়ে নেতিবাচক শিরোনামে আসে এ আসরটি। এরপর সন্দেহ দানা বাঁধে বিভিন্ন ম্যাচে অদ্ভুত সব ওয়াইড দেখে। এরপরই শুরু হয় গুজবের হাওয়া। মিডিয়াকুলে ফিসফিস– দলের ভেতরে কোন্দল, টিম হোটেলের পেমেন্ট ঝামেলায় দুর্বার রাজশাহীর মালিককে নজরদারিতে রাখা, লঙ্কান ক্রিকেটারের ম্যাচ বয়কটের মতো সব ঘটনা। বিষয়গুলো যাচাই করতে গিয়ে বেশির ভাগ ঘটনার সত্যতা মেলেনি।
বিপিএলে যে কারণে সন্দেহ: ঢাকা ক্যাপিটালের পেসার আলাউদ্দিন বাবু কেন মাঠে নেই– এ নিয়ে নানা গুঞ্জন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। আলোচনা থেকে সন্দেহ দানা বাঁধে। সাংবাদিকদের মুখে মুখে ফিরতে থাকে নানা কথা। বাধ্য হয়েই আলাউদ্দিন বাবুকে ফোন করা। কেন মাঠে আসেননি– জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ জনে নেই। আমাকে তাই হোটেলে রেখে গেছে। এখানে অন্য কোনো কারণ নেই।’ ১৫ জনে জায়গা না পেলে অনেক ক্রিকেটারকেই হোটেলে থাকতে হয়।
আলোচনায় উসমান, ফার্নান্দো: চিটাগং কিংসের পাকিস্তানি ব্যাটার উসমান খান দারুণ একজন ব্যাটার। চলমান বিপিএলে সেঞ্চুরিও আছে একটি। গতকাল তাঁকে হোটেলে রেখে ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল দল। হোটেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল ফার্নান্দো বিনুরাকেও। এ দুই বিদেশি ক্রিকেটারের মাঠে না যাওয়া নিয়ে বিসিবি-সংশ্লিষ্ট সবার মুখে মুখে শোনা গেছে, সম্মানী না দেওয়ায় হোটেলে থেকে গেছেন এ দুই বিদেশি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে চিটাগং কিংসের মালিক সামির কাদের চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি দুই ক্রিকেটারের মাঠে না যাওয়া নিয়ে নানা কথা শুনছি। সবার উদ্দেশে বলতে চাই, পেমেন্টের কোনো ইস্যু নেই। ফার্নান্দো মাঠে যায়নি, কয়েক দিন আগে তাঁর পরিবারে বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে। আর উসমান ভালো করতে না পারায় বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। আমরা বিদেশিদের ৭০ শতাংশ টাকা দিয়েছি। দেশি কয়েক ক্রিকেটারের পেমেন্ট কম দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যেগুলো বাইরে শোনা যাচ্ছে, তা গুজব।’
বিতর্কে চিড়ে চ্যাপ্টা রাজশাহী: ক্রিকেটারদের সম্মানীর চেক বাউন্স করার প্রতিবাদ ও টাকার দাবিতে প্র্যাকটিস বয়কটের মধ্য দিয়ে আলোচনায় দুর্বার রাজশাহী। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের হস্তক্ষেপে ২৫ শতাংশ সম্মানী নগদ দেওয়া হলে ম্যাচ খেলেন ক্রিকেটাররা।
গতকাল চট্টগ্রামের আলোচিত ছিল রাজশাহীর হোটেল ভাড়া নিয়ে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কান পাতলেই শোনা গেছে, হোটেল ভাড়ার চেক বাউন্স করায় ভ্যালেন্টাইন গ্রুপের এমডি শফিকুর রহমানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল।
যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে রাজশাহীর অন্যতম এ মালিক বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি, বিপিএলের নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালো জানাশোনা নেই। শুধু তো খেলোয়াড়দের টাকা নয়, আরও অনেক খরচ আছে। সেগুলোও তো পরিশোধ করতে হয়। আমরা ধাপে ধাপে তা করছি। হোটেলের সঙ্গে চুক্তি ৫০ শতাংশ টাকা দেব, বাকিটা পরে। সেভাবে পেমেন্ট করা হয়েছে। গাড়ি ভাড়া কত দিয়েছি তা তো ড্রাইভার, হেলপার জানবে না। জানবে কোম্পানি। অথচ এগুলোকে ইস্যু করা হচ্ছে নিউজ বানিয়ে। আমরা খেলোয়াড়দের ২৫ শতাংশ টাকা দিয়েছি, ঢাকায় গিয়ে ২৫ শতাংশ দেব। বল ধার করে অনুশীলন কেন করতে হবে রাজশাহীকে। আগের রাতেই তো বল পৌঁছে গেছে। আর অধিনায়ক পরিবর্তনের বিষয়টিও নিয়মমাফিক হয়েছে।’
বিসিবি এসিইউ বলছে, অতিরঞ্জিত: মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে, দেশি-বিদেশি ৪০ জন বিপিএল ক্রিকেটারকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সন্দেহের জালে কেউ কেউ আটকেও গেছেন বলে খবর। বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তারাও কয়েকজন বোলারকে স্পট করেছেন। সন্দেহজনক ওভারগুলো পর্যালোচনা করে বিসিবিকে নোট দিয়েছেন তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে জানান এক এসিইউ কর্মকর্তা।
৪০ ক্রিকেটারের দিকে সন্দেহের তীর– এ প্রশ্ন করা হলে এসিইউপ্রধান মেজর (অব.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে যুবদলের কমিটি ঘোষণা, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সংবাদ সম্মেলন
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা ও পৌর যুবদলের কমিটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দুই কমিটির সদস্যসচিবসহ অনেক নেতা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা কমিটি বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বিকেলে কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে একাংশ ও রাত আটটার দিকে বিপক্ষে অপর অংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এরপর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে দুপক্ষ।
আকবর হোসেনকে রায়পুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও হাবিবুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া নুর এ হেলাল ওরফে মামুনকে পৌর যুবদলের আহ্বায়ক ও জাহিদ মোহাম্মদকে সদস্যসচিব করে ২৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা কমিটি।
রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান ও পৌর যুবদলের সদস্যসচিব জাহিদ মোহাম্মদের নেতৃত্বে কমিটি বয়কট করে বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা বিগত দিনে ধানের শীষের নির্বাচন না করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের নিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আকবর হোসেন ঠিকাদারি করেন। তিনি গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পৌর কমিটির আহ্বায়ক নুর এ হেলাল পৌরসভার চাকরিজীবী। এ ছাড়া কয়েকজন প্রবাসে ছিলেন। এসব ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি ঘোষণার কারণে আমরা বয়কট করেছি। একই সঙ্গে কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছি।’
রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আকবর হোসেন ও পৌর যুবদলের আহ্বায়ক নুর এ হেলাল পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তাঁরা বলেন, তাঁদের সম্পর্কে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও দলের জন্য নিবেদিত। ত্যাগী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।
গতকাল লক্ষ্মীপুরে যুবদলের ১১টি শাখার নতুন আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় যুবদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিজ্ঞপ্তিগুলো প্রকাশ করা হয়। এসব কমিটির অনুমোদন দেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান ও সদস্যসচিব আবদুল আলিম হুমায়ুন।
কমিটিগুলো হলো লক্ষ্মীপুর পৌরসভা, সদর উপজেলা (পূর্ব), সদর উপজেলা (পশ্চিম), রামগঞ্জ উপজেলা, রামগঞ্জ পৌরসভা, রায়পুর উপজেলা, রায়পুর পৌরসভা, চন্দ্রগঞ্জ থানা, রামগতি উপজেলা, রামগতি পৌরসভা ও কমলনগর উপজেলা।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক একজন সংসদ সদস্য রায়পুর উপজেলায় স্বৈরাচারীভাবে দল চালাচ্ছেন। ব্যক্তিস্বার্থে তিনি দলকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখছেন দীর্ঘ বছর। তাঁর পকেটের ব্যক্তিদের আহ্বায়ক না করায় ঘোলা পানিতে তিনি মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।