গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) গর্ব হিসেবে পরিচিত শিক্ষার্থীদের গর্জে উঠার কণ্ঠস্বরের মঞ্চ ছাত্র সংসদ, এখন যেন হারিয়ে যাওয়া এক মিথ। নিয়মিত নির্বাচন না হওয়া, প্রশাসনের উদাসীনতা ও নেতৃত্ব সংকটসহ নানা কারণে এক সময়ের আলোচিত ছাত্র সংসদ কার্যত বিলুপ্ত।

জানা গেছে, বাংলাদেশের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (গকসু) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি ছিল ঐতিহাসিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা.

জাফরুল্লাহ চৌধুরী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের সুযোগ দিতে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেন। সেই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী তৈরি এবং তাদের সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখার পথ উন্মোচন করেছিল।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জুয়েল রানা সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং মো. নজরুল ইসলাম রলিফ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হিসেবে নির্বাচিত হন। এটি শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রথম কমিটি ছিল।

নির্বাচনের পরে দুই বছর মেয়াদের মাঝে প্রায় ৮ মাস সংসদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে গবি প্রশাসন এবং ১৯ মাস পরে অভিষেক হয় নির্বাচিতদের। কিন্তু এরপর আর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

পরে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কমিটি বাতিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ছাত্র সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং কার্যনির্বাহী পরিষদের অধিকাংশ সদস্যের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় গঠনতন্ত্রের ১০ ও ১৩.১ ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

ছাত্র সংসদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ২০১৮ সালের পর থেকে নির্বাচন আয়োজন না করা, প্রশাসনের উদাসীনতা ও কার্যক্রম পুনরায় চালুর বিষয়ে দৃশ্যমান উদ্যোগের অভাব; দীর্ঘ সময় কার্যক্রম স্থবির থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাওয়া; নেতৃত্বে স্বচ্ছতার অভাব এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির টানাপোড়েন অন্যতম।

গকসুর তৃতীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, “গঠনতন্ত্রের বিধানের বাইরে এসে হঠকারিতার মত করেই একটা নোটিশ দিয়ে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভাঙার ৩ মাসের মধ্যেই নতুন নির্বাচন দিতে হবে। গবি প্রশাসন সে কাজ তো করেনি, বরং এখনো নির্বাচন আটকে রেখেছে, যা অযাচিত।”

তিনি বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নতুনভাবে রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এখন গকসুসহ সারা দেশেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। এতে নেতৃত্বের সংকট দূর হবে এবং দেশের দোদুল্যমান অবস্থা পার হবে। একমাত্র ছাত্র সংসদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোই এ অভাব পূরণ করতে পারবে।”

২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীরা একটি আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ পুনরায় চালুর দাবি তোলে। সাত দফা দাবির মধ্যে ছাত্র সংসদ চালুর বিষয়টি ছিল অন্যতম। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দমন-পীড়ন, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাদের এ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম রাখতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন স্থগিত রাখে এসেছে ধারাবাহিকভাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা মো. নাসিম বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক। শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। সেই চিন্তা-কাঠামো নিয়ে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে গবিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির জন্য ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী গকসু চালু করেছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের রোডম্যাপ, নির্বাচন কমিশন গঠন করে অতিদ্রুত নির্বাচন দেওয়া জরুরি।”

২০১৮ সালের পর থেকে আশ্বাসেই আটকে আছে গকসু নির্বাচন। গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মতো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

নির্বাচন হবে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, “ছাত্র সংসদ নিয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা একটি রোডম্যাপ চেয়েছে। সমাবর্তনের পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। সম্ভব হলে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া হবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি

টিউশন শেষে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় চার ঘণ্টার মধ্যে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ।

উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীর নাম শাকিল আহমেদ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সহ-সভাপতি।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে কুমিল্লা শহর থেকে ফেরার পথে কয়েকজন অপহরণকারী তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা পুলিশের সহযোগিতায় প্রায় চার ঘণ্টা পর কুমিল্লার একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে শাকিলকে উদ্ধার করেন। এসময় এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়।

এবিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুহসিন জামিল বলেন, রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে আমরা জানতে পারি সবুজকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আটকে রেখে টাকা দাবি করছে। গ্যাংয়ের সদস্যরা সবুজের মাধ্যমে ফোন দিচ্ছে। তারপর আমরা ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাঈদ ভাইকে জানালে ওনারা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর থেকেই পুলিশ সবুজের লোকেশন ট্রেস করতেছিল। পরবর্তীতে পুলিশ ও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ ঘণ্টা পর একটা পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে সবুজকে উদ্ধার করি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, সবুজের বিষয়টি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাঈদ আমাকে অবগত করে। সাথে সাথে ওসি কোতোয়ালিকে ফোন দিয়ে তা জানানো হয়। আমাদের মহানগর কমিটির একটি টিম কান্দিরপাড় অঞ্চলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। সবুজের লোকেশন শনাক্ত করা হয়। পুলিশ, বিভাগীয় চেয়ারম্যান মোরশেদ কাজেম স্যার, বৈবিছা-র সদস্যবৃন্দ, সবুজের সিনিয়র-জুনিয়র-ব্যাচমেট সবার তৎপরতায় আনুমানিক রাত ৩টায় সবুজকে উদ্ধার করতে আমরা সমর্থ হই।

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিন থেকে পাঁচজনের একটি চক্র শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে। পরে রাত আড়াইটার দিকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের আগেই বিচার করতে হবে: সাদ্দাম
  • কুবি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
  • সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জনসহ ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  • রাজনগরের ৮ ইউনিয়নে গঠিত বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিল
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে মুনাফার খবরে দরবৃদ্ধির শীর্ষে এনার্জিপ্যাক
  • কেউ বললেই যেন আমরা বিদেশে দৌড় না দেই : শামীম আজাদ
  • ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকতে পারে কালও