ব‌্যাটিংটা রিশাদ হোসেন ভালোই করতে পারেন। যেদিন দলের চাহিদা থাকে বেশি সেদিন তার ব‌্যাট হয়ে উঠে তরবারি। বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে, প্রতিপক্ষের হাসি ম্লান করে তাক লাগিয়ে দেওয়ার কাজটা রিশাদ ভালোভাবেই করেন।

যেমনটা করলেন বুধবার খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। খুলনার আমন্ত্রণে ব‌্যাটিংয়ে নেমে ফরচুন বরিশাল চরম ব‌্যাটিং বিপর্যয়ে। ১৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে তাদের রান কেবল ৮৭। শেষ ৭ ওভারে দলের রান আর কত-ই বা হতে পারে? আটে নামা রিশাদ যখন ক্রিজে গেলেন তখন আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ। দুজন মিলে এরপর খোলনলচে পাল্টে ফেললেন।

২৮ বলে ৪৭ রান যোগ করলেন। যেখানে রিশাদের একার রানই ২৯। ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান জিয়াউর রহমানকে তিন চার মেরে ঝড় তোলা শুরু করেন। ইনিংসের শেষ ওভারে রান আউট আগ পর্যন্ত কড়া শাসন করে ১৯ বলে ৩৯ রান করেন ৫ চার ও ১ ছক্কায়।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রিশাদের এমন ঝড় নতুন নয় অবশ‌্য। দেশের মাটিতে নিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমে নায়ক হয়েছিলেন লেগ স্পিনার। সেদিনও বিপর্যয়ে ঝড় তুলে দলকে জিতিয়েছিলেন। গত বছরেরই মার্চের ঘটনা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮ বলে ৪৮ রান করেন ৫ চার ও ৪ ছক্কায়।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৩৬ রানের টার্গেটে ষষ্ঠ ব‌্যাটসম‌্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন তখন ৮৩ বলে ৫৮ রান লাগত বাংলাদেশের। সেখান থেকে রিশাদ একাই ৪৮ রান তুলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। দশ মাস পর একই ভেনু‌্যতে ফিরে আবার তার ব‌্যাট হাতে ঝড়। আবার ম‌্যাচ সেরা রিশাদ। তাহলে কি এটাই তার প্রিয় ভেনু‌্য? লেগ স্পিনার তেমন কিছু অবশ‌্য বললেন না, ‘‘না ফেবারিট না। আমি আমার পরিকল্পনায় ছিলাম কেবল।’’

নিজের ইনিংসের জন‌্য রিশাদ কৃতিত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গকে। তার অনুপ্রেরণামূলক কথায় পাল্টে যায় তার ভাবনা। করেন পরিকল্পনা।

‘‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই পার্টনার ছিলেন। উনি খুব সাপোর্ট করেছেন। বলেছিলেন, নিজের স্ট্রেন্থে থাকতে এবং ভালো বলটা রেসপেক্ট করতে এবং বাজে বল পানিশ করতে। জাস্ট এতোটুকুই আর কি।’’

মাঠে নামার আগে দল যে বিপর্যয়ে ছিল, সেখান থেকে বের হতে মাহমুদউল্লাহর ওপরই পুরো ভরসা রেখেছিলেন রিশাদ, ‘‘পরিকল্পনা আসলে সেরকম ছিল না। রিয়াদ ভাই সাথে ছিল উনি বলে দিচ্ছিলেন কি করতে হবে। তাই পরিকল্পনার কিছু ছিল না আগের থেকে। কি হবে না হবে।’’

দারুণ ব‌্যাটিংয়ের পর বল হাতে ১৭ রানে ১ উইকেট নেন এই লেগ স্পিনার। সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে রান আউটও পেয়েছেন। সব মিলিয়ে দিনটা পুরোটাই ছিল রিশাদময়।

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনির নিচে ঘুমিয়ে আছে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি

গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ সান্তোরিনি। যেখানে সাদা-নীল বাড়ি, সূর্যাস্ত আর নীল সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের টানে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করেন। কিন্তু অনেকের স্বপ্নের এই দ্বীপের নিচেই লুকিয়ে আছে এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, যা আবারও ভয়াবহ বিস্ফোরণে ফেটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রায় ৩ হাজার ৬০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির বিশাল এক বিস্ফোরণে সান্তোরিনি দ্বীপের বর্তমান আকৃতি তৈরি হয়। সেই বিস্ফোরণে দ্বীপের মাঝখান দেবে গিয়ে একটি বিশাল গর্ত বা কালডেরা সৃষ্টি হয়। এর পর এই অঞ্চলটিতে বড় আকারের ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

গত বছরের শুরুর দিক থেকে কয়েকবার ভূমিকম্পে দ্বীপটি কেঁপে ওঠায় নতুন করে সামনে এসেছে দ্বীপটির নিচে ঘুমিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা ও তার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এ ধরনের ভূমিকম্প ভূগর্ভের ম্যাগমা চেম্বারে চাপ বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।

ব্রিটেনের গবেষণা জাহাজ ‘আরআরএস ডিসকভারি’ থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল সান্তোরিনির সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরি ও হাইড্রো-থার্মাল ভেন্ট নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন এখন। চলমান এ গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্রিটেনের ন্যাশনাল ওসিওগ্রাফি সেন্টারের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইসাবেল ইয়ো। তিনি জানান, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো আগ্নেয়গিরির আচরণ বিশ্লেষণ করে কখন বড় বিস্ফোরণের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে তা বুঝতে পারা। সান্তোরিনি দ্বীপের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে সাগরের নিচে থাকা আরেকটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কলোম্বো নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

চলমান এই গবেষণায় রোবটের মাধ্যমে সাগরের ৩০০ মিটার নিচ থেকে গরম পানি, গ্যাস ও আগ্নেয় পাথরের নমুনা সংগ্রহ করছেন তারা। এ ছাড়া ভূকম্পন এবং ভেতরে থাকা জ্বলন্ত লাভার গতিবিধি বোঝার জন্য ভূতাত্ত্বিক মানচিত্রও তৈরি করছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শেষে পাওয়া তথ্য গ্রিস সরকারকে সরবরাহ করা হবে। গ্রিসের সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি এই গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করছে। অধ্যাপক পারাস্কেভি নোমিকো– যিনি নিজে সান্তোরিনির বাসিন্দা এবং সরকারিভাবে জরুরি পরিকল্পনায় যুক্ত– বিবিসিকে বলেন, ‘এই গবেষণা আমাদের জানাবে, কোথায় কতটা ঝুঁকি এবং কোন এলাকায় আগ্নেয়গিরি জেগে উঠলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে।’

সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ফলে সান্তোরিনির ১১ হাজার বাসিন্দার প্রায় অর্ধেকই দ্বীপ ছেড়ে চলে গেছেন। পর্যটন খাতেও এর প্রভাব পড়েছে। অনেকেই তাদের পূর্বনির্ধারিত ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। স্থানীয় ফটোগ্রাফার ইভা রেন্ডল বলেন, ‘আমার অনেক ক্লায়েন্ট তাদের শুটিং বাতিল করেছেন। আগে এপ্রিল থেকেই কাজ শুরু হতো; এবার মে পর্যন্ত কেউ আসেনি।’

তবে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়া অনেকেই জায়গাটির অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে আবার ফিরেও আসছেন। সান্তোরিনিতে বিয়ের ছবি তুলতে আসা এক নবদম্পতি বলেন, ‘আমরা ইচ্ছা করেই আগ্নেয়গিরির পাশে বিয়ে করতে চেয়েছি!’ এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের আশঙ্কা না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি ‘শুধু সময়ের ব্যাপার।’ বিবিসি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ