ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রাতের ভোটের কারিগরদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৮ সালে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোকে পাশ কাটিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচন করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। গোপনে ব্যালটে সিল মারা হয় রাতে। ভোটের দিনেও প্রকাশ্যে জাল ভোট দেওয়া হয়। 

নির্বাচন কমিশন আইনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য আইন লঙ্ঘন করা হয় ওই নির্বাচনে, যা দেশে-বিদেশে বিতর্কিত নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করা হয়। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার হাতে জিম্মি হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এমপি হয়েছেন অনেকে।


নির্বাচন কমিশন আইন লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির একটি অভিযোগ এরই মধ্যে জমা পড়ে দুদকে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে গতকাল বুধবার অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গতকাল দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। 
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি, কারচুপির মাধ্যমে কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট দেখানো হয়েছিল। ওই সময় তথ্যপ্রমাণসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রচারিত হয়েছিল। 

এতে আরও বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি বিভাগ, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী নজিরবিহীন জাল ভোটে অংশ নিয়েছিল। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন। ওই কারচুপির নির্বাচনে সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, র‌্যাবের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজি শহীদুল হক, সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমাম, ওই সময়কার সাবেক জেলা প্রশাসক, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ওসি, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছিল। 

অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ এবং নির্বাচনের ফলাফলে তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পরে কমিশন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি সিদ্ধান্ত নেবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো

সুন্দরবনে দস্যুতায় টাকা ছিল। কিন্তু সে অবৈধ টাকা নিজেরা উপভোগ করতে পারতেন না। বনের মধ্যে সব সময় মৃত্যুঝুঁকি তাড়িয়ে বেড়াত, এক ঘণ্টা শান্তির ঘুমও হতো না। মোটেও সুখ ছিল না। দস্যুতার জগতে গিয়ে নিজের প্রাপ্তি বলতে নামের সঙ্গে জুড়ে গেছে ডাকাত শব্দটি। স্ত্রী-সন্তানদেরও চলতে হতো মাথা নিচু করে। কথাগুলো একসময়ের বনদস্যু আল-আমীনের।

আল-আমীন বলেন, দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে তিনি ভালোই আছেন। আর কখনো ওই অন্ধকার পথে পা বাড়াতে চান না তিনি। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁষা খোড়লকাঠি বাজারসংলগ্ন কয়রা নদীর তীরে। ছোট বাজারটিকে সুন্দরবন থেকে আলাদা করেছে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কয়রা নদী।

নদীর ওপারের সুন্দরবনের ত্রাস ছিলেন আল-আমীন। তিনি বলেন, তখন শরীফ বাহিনী ছিল বড় দস্যুদল। সেই দলে যোগ দিয়ে ডাকাত হয়েছিলেন। কিছুদিনের মধ্যে এলাকায় নাম ছড়িয়ে গেলে বাড়ি ফেরার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাঁরা সুন্দরবনের মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন। র‍্যাব আর কোস্টগার্ডের অভিযানের ভয়ে বনের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত ভয় আর উৎকণ্ঠায় কাটত তাঁদের।

আল-আমীনের বলতে থাকেন, ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছিল তাঁর গণ্ডি। বাড়ি ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠত। অপরাধের জগৎ ছেড়ে ভালো হতে চাইতেন, তবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে সুযোগ আসে। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। দস্যুনেতা শরীফ না চাইলেও তাঁকে কৌশলে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁরা দলের ১৭ জন সদস্য ১৭টি অস্ত্র আর ২ হাজার ৫০০ গুলিসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।

দস্যুজীবন যাঁরা একবার দেখেছেন, তাঁরা না খেয়ে থাকলেও আর দস্যুতায় ফিরতে চান না—এমনটাই দাবি আল-আমীনের। নদীর তীরে দাঁড়িয়ে গল্প গল্পে তিনি বলেন, ডাঙায় থাকা মাছ ব্যবসায়ীরা ডাকাতদের বাজার, বন্দুক, গুলি সবই সাপ্লাই দিতেন। সব জিনিসের দাম নিতেন তিন থেকে চার গুণ বেশি।

বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধাপে ধাপে সুন্দরবন অঞ্চলের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন দস্যু ৪৬২টি অস্ত্র, ২২ হাজার ৫০৪টি গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সব শেষ দস্যুদল হিসেবে আত্মসমর্পণ করে শরীফ বাহিনী। সেদিনই প্রাণবৈচিত্র্যে ভরা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। তবে দস্যুনেতা শরীফ গত বছরের ৫ আগস্টের পর আবার সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন বলে তাঁর একসময়ের সাথীদের ভাষ্য।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম। তিনি বলেন, দলনেতা শরীফের পুরো নাম করিম শরীফ। কয়রার আল-আমীন ছিল বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। শরীফ প্রথমে আত্মসমর্পণে রাজি থাকলেও পরে বেঁকে বসেন। অন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। তবে শরীফ এখন পুনরায় সুন্দরবনে দস্যুতায় নেমেছেন।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম আবদুল মালেক বলেন, বনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা কমে আসায় সুন্দরবনে আবারও দস্যুদের উৎপাত বেড়েছে। এভাবে দস্যুতা চলতে থাকলে বনজীবীদের জীবিকা, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আদায় ও পর্যটন হুমকির মুখে পড়বে; বিপন্ন হবে বন্য প্রাণী আর প্রাণবৈচিত্র্য। দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নাম বদলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট করার অনুমোদন
  • এক সময়ের বনদস্যুর ‘বয়ানে’ সুন্দরবনে দস্যুতার দিনগুলো
  • খালেদা জিয়ার খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ৩ মার্চ
  • দেশে এখন মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ: সিইসি
  • দেশের মোট ভোটার এখন ১২ কোটি ৩৭ লাখ
  • চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করলেন সিইসি
  • জাতীয় ভোটার দিবস আজ
  • এডিপি বাস্তবায়নে সুপারিশ উপেক্ষিত, ৩ বছরে ব্যয়ের লক্ষ্য ৯,০৮,৬০০ কোটি টাকা