যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে পশ্চিমা অংশীদাররা
Published: 23rd, January 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে পশ্চিমা উন্নয়ন অংশীদাররা। বাংলাদেশের স্থবির অর্থনীতি পূর্বের গতি পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান তারা। ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন যেহেতু সহযোগিতার ঝুলি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, ট্রাম্প প্রশাসনও একই সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে কিনা, সে সংকেতের অপেক্ষায় রয়েছে পশ্চিমা অংশীদাররা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের অর্থনীতি বড় ধাক্কার মুখে পড়েছে। অর্থনীতির নিম্নমুখী এ ধারা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পট পরিবর্তনের কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ার নজির রয়েছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন থাকবে, তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত পরবর্তী সরকার মেনে নেবে কিনা, বিনিয়োগ করলে অর্থনীতির সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা ফেরতের বা বিনিয়োগের পরিবেশসহ কতটা সুরক্ষিত, সে অঙ্ক কষছে দেশগুলো।
এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিগুলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কও বিবেচনায় রাখছে। নাম না প্রকাশের শর্তে ইউরোপের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ নিয়ে সমঝোতা হয়েছিল। এ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে থেলেস এলেনিয়া স্পেসের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসে বৈঠকও করে গেছেন। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি কয়েক কোটি টাকা খরচও করেছে। বর্তমান বাস্তবতায় আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। নিকট ভবিষ্যতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। যেমনটি নেই এ প্রতিষ্ঠানের এয়ারবাসের উড়োজাহাজ বিক্রির বিষয়েও।
গত ৫ আগস্টের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভ্যন্তরীণ সংস্কারসহ আর্থিক খাতকে সহযোগিতা করতে তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রতি তাদের রাজনৈতিক সমর্থন দেখাতে মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফর করে গেছেন। সফরে রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বার্তাও দেয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া ছিল, বাংলাদেশ যাতে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর থেকে বিদ্যমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো সম্পর্কেও অবহিত হয়।
এ থেকে এক প্রকার স্বস্তি ফিরে আসে উন্নয়ন অংশীদারদের। একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশের কূটনীতিক সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তা থেকে অর্থনৈতিক একটি নিশ্চয়তা পাওয়া গিয়েছিল। মার্কিন নির্বাচনে বাইডেন প্রশাসনের পরাজয় আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এখন আমরা মার্কিন নতুন প্রশাসনের মনোভাবের জন্য অপেক্ষা করছি, বাংলাদেশ নিয়ে তারা আগের স্থানেই থাকে কিনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভৌগোলিক চিন্তায় বাংলাদেশ রয়েছে কিনা, সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগে এখানে অনেক উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে দক্ষিণ এশিয়ার বাজার চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সঙ্গে পণ্যের কাঁচামাল সংগ্রহের বিষয়গুলো থাকে। বাংলাদেশের বাজার ও পণ্যের কাঁচামাল বিবেচনা করলে ভারতের নাম উঠে আসবে। বর্তমানে দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক খুব একটা স্বাভাবিক নেই। যেমন জাপানের বিগ-বি প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নিয়ে নয়, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। এমনকি জাপানের রাষ্ট্রদূতও সম্প্রতি অর্থনীতি ও বিনিয়োগকে এগিয়ে নিতে ঢাকা-দিল্লির বোঝাপড়ার ওপর জোর দিয়েছেন। ফলে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তায় মার্কিন সংকেতের পাশাপাশি ভারতের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ কিছুদিন ধরে আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে নজর দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশ সফরও করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সরকার পরিবর্তনের পর দেশগুলো খুব একটা ভরসা পাচ্ছে না।
নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আফ্রিকার কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়েও নিয়েছিল ঢাকা। ৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছে। তারা মূলত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ধীরে চলো নীতি নিয়েছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন, সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া ও বিনিয়োগ নিয়ে আলাপচারিতায় পশ্চিমা এক উপরাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু ভাবছি না আমরা। বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে কবে নির্বাচন হবে। তবে বিদ্যমান যে বিনিয়োগগুলো রয়েছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। আমরা চাই অনিশ্চয়তা কেটে যাক এবং সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকুক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রুপা হক বলেছেন, যুক্তরাজ্য চায় বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের স্বচ্ছ নির্বাচন হোক। এর জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগুলো থাকতে হবে। যদি খুব তাড়াহুড়া করা হয়, সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির সমকালকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার মানেই সাময়িক। কেউ সাময়িক প্রশাসনের আওতায় বিনিয়োগ করবে না। এ ক্ষেত্রে সবাই অপেক্ষা করে। দেশের বর্তমান অর্থনীতি যেভাবে নিম্নগামী হচ্ছে, তা থেকে একে তুলে ধরতে ও সচল করতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। বিনিয়োগ ব্যবসায়ীরা তখনই করবেন, যখন তারা নিশ্চয়তা পাবেন। এ নিশ্চয়তা তৈরি করতে হলে লাগবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।
জাতীয় ঐকমত্য ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ কূটনীতিক। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঐকমত্যের কাঠামো তৈরি করতে হবে। একটি জাতীয় ঐক্য এলে দেশে ও বিদেশে আস্থা ফিরে আসবে।
কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণভাবে মানুষের আস্থা ফেরানো যেমন জরুরি, তেমন মার্কিন নতুন প্রশাসন কী ধরনের সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসে, তা দেখাও জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিনিরা হয়তো নিয়মিত সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন একটু অতিরিক্ত সহযোগিতা। এ সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে হোক বা অন্য কোথাও থেকে হোক, নিশ্চিত করতে পারে কিনা, সেটির অপেক্ষায় অংশীদাররা। সে নিশ্চয়তা পেলে অংশীদাররাও নিজ থেকে এগিয়ে আসবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ শ ঋণ পর স থ ত র জন ত ক সহয গ ত ন শ চয়ত সরক র র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আইন পর্যালোচনায় আজ বসছে ইসি, ঐকমত্য কমিশনের দিকে নজর
ভোটার তালিকা আইন, সীমানা নির্ধারণ আইন, পর্যবেক্ষণ নীতিমালাসহ একগুচ্ছ আলোচ্যসূচি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনের তৃতীয় কমিশন সভা বসছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে ‘দ্বান্দ্বিক’ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইতোমধ্যে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকলেও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট করতে নিজেদের প্রয়োজনে ‘জরুরি’ সংস্কার নিয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি সরকার ও সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখবে। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশনের দিকে তাকিয়ে সংশ্লিষ্টরা।
তৃতীয় সভায় যেসব বিষয় আলোচনায়
আজ বৃহস্পতিবার সীমানা নির্ধারণ আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন পর্যালোচনা করবে ইসি। আইন পর্যালোচনাসহ ১১টি বিষয় রয়েছে আলোচ্যসূচিতে। সিইসির সভাপতিত্বে এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব থাকবেন।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ জানান, কমিশনের তৃতীয় সভায় ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ পর্যালোচনা; জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০২১ পর্যালোচনা; নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৩ এবং গাইডলাইনস ফর ইন্টারন্যাশনাল ইলেকশন অবজারভার অ্যান্ড ফরেন মিডিয়া পর্যালোচনা; নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ভাতার হার নির্ধারণ এবং প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষক নির্বাচন বিষয়ে পর্যালোচনাসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সভার কার্যপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এজেন্ডার বাইরে কোনো বিবিধ কি আলোচনা হতে পারে তা বলা যাচ্ছে না। তবে সংস্কার বিষয়ক তথ্য এজেন্ডায় নেই।
আলোচ্যসূচিতে আরও রয়েছে- বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের শর্ত/পদ্ধতি/সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা, নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক/গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য নীতিমালা, ডিআরএস সম্পর্কিত বিষয়াদি, ব্ল্যাঙ্ক কার্ড সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয়াদি, প্রস্তাবিত জাতীয় নির্বাচনি পদক নীতিমালা, ২০২৫ এর উপর আলোচনা, আইডিইএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের মেয়াদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন কমিশনে বিদ্যমান প্যানেল আইনজীবী তালিকা হালনাগাদকরণ এবং বিদ্যমান সম্মানী/ফি কাঠামো পর্যালোচন।