ছাত্রদল কর্মী সাজ্জাদ সিকদার গুলিবিদ্ধ হন ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই। এখনও রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরান তিনি। চিকিৎসার জন্য জমি, গহনা ও গবাদি পশু বিক্রি করেছে তাঁর পরিবার। এ ছাড়া চড়া সুদে ঋণও নিয়েছে। কিন্তু 'কোনো কূল-কিনারা করতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও আর্থিক সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজধানীর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন। বড় বোন বৃষ্টি আক্তারের সঙ্গে মিরপুর-১ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বৃষ্টি লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় চাকরি করতেন। আন্দোলনে শুধু সাজ্জাদ নন, তাঁর বোন ও বোনজামাই সক্রিয় ছিলেন। সাজ্জাদের আরও দুই বোন আছেন।
সরকার পতনের দিন দুপুরের দিকে সাজ্জাদ তাঁর সহপাঠীদের সঙ্গে বিজয় মিছিল নিয়ে মিরপুর মডেল থানার সামনে পৌঁছালে হঠাৎ শুরু হয় গুলিবর্ষণ। অনেকে হতাহত হন। সাজ্জাদের ডান পায়ে গুলি লেগে হাড়ের অংশসহ বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সাজ্জাদ তাঁর বড় বোনকে ফোন দেন। বৃষ্টি তখন গণভবনের কাছে বিজয় উল্লাসে শামিল ছিলেন। ফোন পেয়ে ছুটে যান সাজ্জাদের কাছে।
গুলি লাগার পর সাজ্জাদকে নিয়ে যাওয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে। বৃষ্টি আক্তার জানান, শুরুতে চিকিৎসকরা পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিলেও তারা তাতে রাজি হননি। একমাত্র ভাইয়ের পা বাঁচাতে তারা চিকিৎসায় গুরুত্ব দেন। এরই মধ্যে বরিশালের গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর মা-বাবাসহ আত্মীয়স্বজন ছুটে আসেন। চিকিৎসার শুরুতে গ্রামের বাড়িতে তাদের দুটি গরু বিক্রি করা হয়। পরে কিছু জমি বন্ধক, কিছু বিক্রি, বৃষ্টির গহনা বিক্রি করা হয়। উচ্চ সুদে ছয় লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। আত্মীয়স্বজনও সহযোগিতা করেন সাধ্যমতো। সব মিলিয়ে ১৮ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে তাদের। এর মধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক লাখ এবং ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ থেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
বৃষ্টি জানান, সাজ্জাদকে হাসপাতালে ভর্তির পর প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার শেষে সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর পায়ের হাড়ে স্টিলের পাত দিয়ে যে জোড়া লাগানো হয়, তা ভেঙে যায়। তাঁকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে এনে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ডান হাঁটুর হাড়ের একটি বড় অংশ গুলিতে উড়ে যাওয়ায় সাজ্জাদ আর কোনোদিন স্বাভাবিক হতে পারবেন না। তিন ইঞ্চি হাড় উড়ে যাওয়ায় সেটি জোড়া লাগতে দেড়-দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মোহসীন হাওলাদার জানান, সাজ্জাদ সংগঠনের খুবই সক্রিয় কর্মী। তাঁর বাবা সাইদুল সিকদার বরিশালের বানারীপাড়ায় একটি ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি মেম্বার। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে পুরো পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব।
চিকিৎসা ঠিকমতো চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতাকর্মী জানান, জুলাই আন্দোলনে আহতদের পাশে তেমন কাউকে এখন দেখা যায় না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল
এছাড়াও পড়ুন:
রামেক হাসপাতালে আজও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের শাটডাউন কর্মসূচি চলছে
তৃতীয় দিনের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কমপ্লিট শাটডাউন ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন কর্মসূচি চালাচ্ছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তৃতীয় দিনের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু হয়।
অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কমপ্লিট শাটডাউন ও মেডিকেল কলেজ ক্লাস পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের কর্মসূচি অব্যহত রয়েছে। পাঁচ দফা দাবি মানা না পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, এমবিবিএস এবং বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি লিখতে পারবে না; দ্রুত ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; ডাক্তারদের বিসিএসের বয়স সীমা ৩৪ বছর পর্যন্ত করতে হবে; সকল মানহীন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্টিটিউট বন্ধ করতে হবে।
তবে ইন্টার্নিরা সেবা বন্ধ রাখলেও মেডিকেল কলেজের পরিচালক বিশেষ ব্যবস্থায় সেবা সচল রেখেছেন।