তাহিরপুরে বিগত সময়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সরকারকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত করতে উপজেলার দায়িত্বশীল নির্বাহী কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনা ছিল। এমনটাই জানা গেছে প্রশাসনিক দপ্তরগুলোতে খোঁজ নিয়ে।
বিগত সময়ের রাজস্ব আদায়ের তথ্য অনুসন্ধানে বিভিন্ন সময় দায়িত্বে থাকা ইউএনওদের মধ্যে সালমা পারভিনের সময়ে (২০২৩ থেকে ২০২৪ সাল) লুটপাট সিন্ডিকেটের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মচারী জানান, তাহিরপুরে সরকারের রাজস্ব আদায়ের বহু খাত রয়েছে। এজন্য ওখানে দায়িত্ব পালনকে ‘মজার’ বলে উল্লেখ করে থাকেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সুনামগঞ্জের বৃহৎ বাজার, নৌকাঘাট, বালু-পাথরমহালসহ নানা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র রয়েছে এ উপজেলায়। এর মধ্যে বাদাঘাট বাজার, ফাজিলপুর নৌকাঘাট ও শ্রীপুর নৌকাঘাট উল্লেখযোগ্য। এসব খাত মামলায় জড়িত রাখতে রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের অসৎ কর্মচারীরা জড়িত থাকেন। এ ধরনের কথাও কথিত আছে স্থানীয়দের মাঝে। মামলায় জড়িত রাখলে, রাজস্ব লুটপাট করতে সুবিধা হয় বলে তারা এই অপকর্মে সহযোগিতা দেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, ১৪২৯ বাংলা সনে বাদাঘাট বাজার, ঘাগরা নৌকাঘাটসহ এ উপজেলার বড় হাটবাজার সবই ইজারা হয়েছিল। বাদাঘাট বাজার বাংলা ১৪২৯ সনে ৫০ লাখ টাকায় ইজারা হয়। উৎসে কর, ভ্যাটসহ ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন ইজারাদার। ঘাগড়া নৌকাঘাট ১৪২৯ বাংলা সনে ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৬৫০ টাকায় ইজারা হয়। এ ছাড়াও সরকার ভ্যাট পায় ১৩ লাখ ২১ হাজার ৪৪৭ টাকা এবং উৎসে কর বাবদ পায় ৮ লাখ ৮০ হাজার ৯২৫ টাকা।
অন্যান্য ঘাট এবং হাটও ওই বছর ইজারা হয়। পরে ১৪৩০ এবং ১৪৩১ সনে সালমা পারভিন ও সুপ্রভাত চাকমার দায়িত্বকালে এ হাট-বাজারগুলো ইজারা হয়নি। খাস কালেকশনের নামে সামান্য পরিমাণে টাকা রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে লুটপাট হয়েছে অধিকাংশই। ওই সময় কেন রাজস্ব আদায় হয়নি জানতে চাইলে, তাহিরপুরের একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ইউএনও ও এমপি রনজিত সরকারের লুটের সিন্ডিকেট খাস কালেকশনের নামে সরকারি সম্পদ লুট করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলের কাছে জানতে চাওয়া হয়, উপজেলা দরপত্র আহ্বান-সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি থাকাকালে হাটবাজার ইজারা না দিয়ে খাস কালেকশনে কেন হয়েছে? এর জবাবে তিনি জানান, তিনি সরকারি সম্পদ লুটের পক্ষে ছিলেন না। নানা অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন। নথিপত্রে এর প্রমাণ আছে। ইজারার ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তৎকালীন ইউএনও সালমা পারভিন ও প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সাবেক এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রগুলোকে মামলায় জড়িত রাখার ব্যাপারেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু অসৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকেন বলে মন্তব্য করেন।
তাহিরপুর ভূমি অফিসের একজন কর্মচারী জানান, বর্তমান জিপি শামছুল হকের মতামত নিয়ে হাটবাজার ও বিভিন্ন ঘাটের ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মামলা হওয়ার আগ পর্যন্ত যেহেতু এসব ঘাট ও বাজার সরকারি সম্পদ হিসেবে ইজারা হয়েছে এবং এখনও সরকারের দখলে আছে, সেহেতু দখল নিয়ন্ত্রণ সরকারেরই থাকবে বলে মত দিয়েছেন জিপি শামছুল।
তাহিরপুরের সাবেক ইউএনও সালমা পারভীন। সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে গোপালগঞ্জের এডিসি হিসেবে যোগদান করেছেন তিনি।
সম্প্রতি তাঁর সরকারি ফোন নম্বরে কথা বলার সময় প্রশ্ন করা হয়, ১৪২৯ বাংলা সনে তাহিরপুরের বড় বড় হাট-বাজার, ঘাট উন্মুক্ত দরে ইজারা হলেও তাঁর সময় কেন হয়নি। তিনি জানান, তাঁর যোগদানের আগেও সাবেক ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা এভাবেই খাস কালেকশনে দিয়েছিলেন। তিনি সেভাবেই কাজ চালিয়ে গেছেন। তাঁর সময় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। মামলা জটিলতার কারণে পরে জিপির মতামত চেয়েছিলেন। তিনি মত দিতে বিলম্ব করেছেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কারণেও বিলম্ব হয়েছে। পরে জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি খাস কালেকশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা বর্তমানে চাঁদপুরের এডিসি। তাঁর দাপ্তরিক নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ খ স ক ল কশন ইউএনও স সরক র র কর ছ ন উপজ ল র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল কিনবে সরকার
ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে এই তেল সংগ্রহ করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৫৬ কোটি ৮১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি লিটারের দাম ১৬২.১৯ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২৮ কোটি লিটার ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মোট চাহিদার অংশ হিসেবে আরো দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীন স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ, কার্যসম্পাদন বা ভৌত সেবার জন্য বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশের তারিখ থেকে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য ন্যূনতম ২৮দিন সময় ধার্য থাকলেও পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৬১ (৫) অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গত ৪ জুন সভায় টিসিবির জন্য স্থানীয় দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের সময়সীমা ২৮ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করার সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয়ভাবে দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণকরে গত ১৩ জানুয়ারি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের বিপরীতে আংশিক অর্থাৎ সর্বনিম্ন ৫৫,০০,০০০ লিটার এর প্রস্তাব দাখিলের সুযোগ রাখা হয়।
দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ২৬ জানুয়ারি এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণের সময় ২৭ জানুয়ারি বেলা ১২ টা পর্যন্ত ধার্য ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ২ ফেব্রুয়ারি এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণের সময় ৩ ফেব্রুয়ারি পুনঃ নির্ধারণ করে। পরবর্তীতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বৈধতার মেয়াদ ১৪ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ৩ ফেব্রুয়ারি প্রাপ্ত দরপত্রসমূহ উন্মুক্ত করে একটি দরপত্র পাওয়া যায়। দরদাতা প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের প্রস্তাবে ২ লিটারের পেট বোতলে ১,১০,০০,০০০ লিটার পাম অয়েল তেল প্রতি লিটারের দাম ১৬২.১৯ টাকা দরে সরবরাহের প্রস্তাব করে। যার দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দর ছিল ১৭৪.৬৩ টাকা। অর্থাৎ প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ১২.৪৪ টাকা কম।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত একটি দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী এবং সংযুক্ত দাখিলকৃত কাগজ পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনা শেষে, দাখিলকৃত দরপত্রটি রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত প্রস্তাবিত দরের বিষয়ে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে, পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৯৯ (জ) অনুযায়ী রেসপনসিভ দরদাতা শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর দরপত্রে প্রস্তাবিত ১,১০,০০,০০০ লিটার পাম অয়েল এর সঙ্গে প্রতি লিটার ১৬২.১৯ টাকা দরে অবশিষ্ট ১,১০,০০,০০০ লিটারসহ সম্পূর্ণ পরিমাণ অর্থাৎ ২,২০,০০,০০০ লিটার পাম অয়েল সরবরাহ করার জন্য সম্মতি চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি অবশিষ্ট পরিমাণ পাম অয়েল সরবরাহে সম্মতি প্রকাশ করে এবং লিখিতভাবে জানায়।
দরপত্রে প্রস্তাবিত ২,১০,০০,০০০ লিটার এর সাথে অবশিষ্ট ১,১০,০০,০০০ লিটারসহ সর্বমোট দুই কোটি ২০ লাখ লিটার বোতলজাত পরিশোধিত পাম অয়েল ২ লিটার পেট বোতলে প্রতি লিটার অগ্রিম আয়কর, প্রযোজ্য মুসক ও টিসিবির গুদামসমূহে পরিবহন খরচসহ ১৬২.১৯ টাকা দরে সর্বমোট তিনশ ছাপান্ন কোটি একাশি লাখ আশি হাজার টাকা মূল্যে ক্রয়ের সুপারিশ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
সূত্র জানায়, উক্ত পাম অয়েল মে মাসে গ্রহণ করা হবে এবং টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে উক্ত সময়ে মজুত বিবেচনায় ভোজ্যতেলের প্রয়োজনীয়তা থাকায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সব সদস্য ক্রয়ের একমত পোষণ করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি