ঝিনাইদহ শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। গত ৮ দিনে সদর উপজেলার ৩২টি দোকান ও একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ধারাবাহিক চুরির ঘটনা ও চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, চলতি জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ রাতে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারের ১৮টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৩টি দোকান থেকে ৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চোর চক্র। এ ছাড়া পাঁচটি দোকানের শাটার ভাঙলেও এসব দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেনি। একইভাবে ১৬ জানুয়ারি রাতে পার্শ্ববর্তী গোয়ালপাড়া বাজারে দুটি মার্কেটের ১০টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।

এর আগে ১২ তারিখ রাতে জেলা শহরের নতুন হাটখোলা ও ক্যাসেল ব্রিজ এলাকার চারটি দোকানে চুরি হয়। সর্বশেষ গত রোববার শহরের ঘোষপাড়া এলাকা-সংলগ্ন একটি বাড়ির গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢুকে নগদ লক্ষাধিক টাকা ও প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোররা। ভুক্তভোগী সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব লুৎফা খাতুন বলেন, দিনে শহরের ভেতরে এমন ঘটনা ঘটবে তিনি ভাবতেও পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটগোপালপুর ও গোয়ালপাড়া বাজারের চুরির ধরন ছিল একই রকম। কোথাও এক সাইডের তালা ভেঙে, কোনো দোকানে লাঠি দিয়ে শাটারের মাঝখান থেকে বাঁকা করে চোররা দোকানের ভেতরে ঢোকে। এর পর শুধু ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে এসব চুরির ঘটনা ঘটে।

কয়েকজন দোকানি জানান, দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র একটি চক্র কাজে লাগিয়ে এগুলো ঘটাচ্ছে। কারণ রাতে গোয়ালপাড়া ও হাটগোপালপুর বাজারে দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী থাকে। পাশাপাশি বাজার এলাকায় টহল পুলিশও থাকে।

গোয়ালপাড়া বাজারের সৌদিয়া সুপারমার্কেটের কসমেটিকস ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতাই ভুগছেন। এভাবে চললে ব্যবসা করব কীভাবে?’

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হাটগোপালপুর বাজারে বিএনপির নেতাকর্মী ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। এতে আগের ২০২২ সালে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির (নির্বাচন পরিচালনা কমিটিই দোকান মালিক সমিতির দায়িত্ব পালন করত) সঙ্গে তাদের বিরোধ শুরু হয়। আর গোয়ালপাড়া বাজারে আগের কমিটির কার্যক্রম না থাকায় সেখানে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের মতো করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন।

হাটগোপালপুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করা হয় ১৪ তারিখে। এ মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গোয়ালপাড়ার ঘটনায় রাতেই চুরির সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় ১৬ তারিখ আটক ব্যক্তিসহ দু’জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দু’জনের বাড়িই গোয়ালপাড়া গ্রামে।

অন্যদিকে জেলা শহরের দোকান ও বাড়িতে চুরির ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটক বা চুরির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতেও পারেনি পুলিশ। এতে মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।

গোয়ালপাড়া বাজারের রাত্রিকালীন নিরাপত্তার তদারককারী রুস্তম আলী বলেন, ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা কিছুটা আছে। আবার বাজারে রাজনৈতিক কিছু সমস্যাও রয়েছে। চুরি থেকে বাঁচতে হলে ব্যবসায়ীদের সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। কারণ চোর চক্রের অনেকেই আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা।

হাটগোপালপুর নবগঠিত বাজার কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিন্টু বলেন, আগের কমিটির আওয়ামী লীগের দোসররাও চুরির পেছনে জড়িত থাকতে পারে।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘কিছু দুষ্কৃতকারী সুযোগ বুঝে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। কী কারণে এমন ঘটছে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করব না। তবে চোর শনাক্তের চেষ্টা চলছে, ধরতে পারলেই প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ সদর উপজ ল র চ র র ঘটন ব যবস য় কম ট র শহর র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!

ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন

গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ