ইজতেমা ময়দানে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে প্রস্তুতি
Published: 23rd, January 2025 GMT
তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ময়দান প্রস্তুতের কাজ। ৩১ জানুয়ারি মাওলানা যোবায়ের আহমদের অনুসারীদের ইজতেমা শুরু হবে। তাবলিগ জামাতের সাথিরা ময়দানে কাজ করছেন। এবার দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমন বেশি হবে বলে ধারণা করছে আয়োজক কমিটি।
গতকাল বুধবার ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, তিন দিনের এ আয়োজন ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কেউ খুঁটি পুঁতছেন, কেউ শামিয়ানা টানাচ্ছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ, শৌচাগার নির্মাণ, ময়দান পরিষ্কারসহ নানা কাজে ব্যস্ত অসংখ্য মানুষ। ময়দান প্রস্তুতির কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।
মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তারা আশা করছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর কাকরাইলের আব্দুর রকিব বলেন, ময়দান প্রস্তুত করার জন্য তাঁর এলাকার আহসানবাগ জামে মসজিদ থেকে ৭০ জন সাথি এসেছেন। মাঠে কাতার সোজা করার কাজ হচ্ছে। সিহাব উদ্দিন নামে একজন বলেন, ময়দানের মূল মঞ্চের জিম্মাদার তিনি। তাঁর সাথিদের কাজে সহযোগিতা করছেন।
এদিকে মাওলানা সাদ কান্দলভির অনুসারীরাও ইজতেমা আয়োজনের অপেক্ষায় আছেন। তাদের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা। এর পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইজতেমা করার জন্য একটি মেসেজ পেয়েছি। এটা কতটা সত্য, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আমাদের মামলা-হামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালান ৩ চেয়ারম্যান
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কয়েকমাস ধরে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন নৌকা প্রতিকের তিন ইউপি চেয়ারম্যান। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে ঐ তিন ইউনিয়নের জনগণ।
চেয়ারম্যানরা কোথায় আছেন তার হদিস কেউ জানে না। তারা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যথাসময়ে পাচ্ছেন না জন্মনিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য সনদ ও প্রত্যয়নপত্র।
অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালানো চেয়ারম্যানরা হলেন- ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আহম্মেদ শেখ, গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিলিয়া আমিনুল।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউপি চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে যান। তারা পাঁচ জনই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা।
সেসময় টুঙ্গিপাড়ার মতো দেশের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি-১ শাখা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সরকার।
তারপর থেকে উপজেলার ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী ও বর্নির ইউপি চেয়ারম্যানরা অফিস করলেও পাটগাতী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ শুকুর আহম্মেদ আত্মগোপনে থেকে যান। তখন তার স্থলে প্যানেল চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস দায়িত্ব পান।
এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হন কুশলী ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সর্দার। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার স্থলে দায়িত্ব পান প্যানেল চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ। তারপর থেকে বাকি তিন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনা করতে থাকেন।
২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হওয়ার পর থেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অজ্ঞাত স্থানে বসে পরিষদ চালাচ্ছেন ঐ তিন ইউপি চেয়ারম্যান। আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা নিজ এলাকার জনগণের ফোনও রিসিভ করছে না। কখনো কখনো রিসিভ করলেও বিভিন্ন আবেদন সচিবদের কাছে রেখে যেতে বলছেন।
বর্নি ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন মুন্সী, হাফেজ মোহাম্মদ মোস্তাইনসহ অনেকে বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল ঠিকমতো পরিষদে থাকেন না। নিজেদের কাজ ফেলে রেখে কয়েকমাস ধরে জন্মনিবন্ধনের জন্য ঘুরছি, কিন্তু চেয়ারম্যানের দেখা পাচ্ছি না। আর অন্যান্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।”
তারা আরো বলেন, “চেয়ারম্যানের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। চেয়ারম্যানের একটা স্বাক্ষরের জন্য জনগণের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। বর্নি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, “চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুল মাস খানেক হলো পরিষদে আসেন না। প্রতিদিন জনগণের আবেদন বা কাগজপত্র একটা ফাইলে রেখে দেই। আর চেয়ারম্যানের স্বামী আমিনুল ইসলাম দুই একদিন পর পর ফাইলটি নিয়ে যান। আর চেয়ারম্যান কাগজপত্র সই করে পরে আবার পাঠিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বর্নি ইউনিয়ন পরিষদ।”
ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম, সাহেদ তালুকদারসহ গোপালপুর ইউনিয়নের অনেকে বলেন, “চেয়ারম্যানরা আত্মগোপানে থাকায় ওয়ারিশান, নাগরিক, চারিত্রিক ও মৃত্যু সনদ নিতে দিনের পর দিন পরিষদে ঘুরেও জনগণ কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন জনগণের ভোগান্তি, অপরদিকে ব্যাপক সময় আপচয় হচ্ছে। শুনেছি চেয়ারম্যানরা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। তাই জনজীবনের দুর্ভোগ কমাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
এ বিষয়ে জানতে গোপালপুর ও ডুমুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও দুই চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর বিশ্বাস এবং আলী আহম্মেদ শেখকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাদের মোবাইলে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
তবে বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান মিলিয়া আমিনুলের হোয়াটসঅ্যাপে কল করলে তিনি রিসিভ করেন। তখন বেশ কিছুদিন পরিষদ কার্যালয়ে আসেন না জানিয়ে মিলিয়া আমিনুল বলেন, “পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মিথ্যা মামলায় আমাকে ১০৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পরিষদে যেতে পারছি না।”
এতে জনপ্রতিনিধিদের অফিস চলাকালীন কার্যালয়ে থাকার সরকারি নির্দেশ অমান্য হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “যেখানে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেখানে দাঁড়ানো যায় না। তাই আমি ঘর পরিবর্তন করেছি, তবে এলাকাতেই আছি।”
তিনি দাবি করেন, তার এলাকার জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে না। কারণ, তার স্বামী ও সচিবের মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে বসে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। কোনো কাজহই বাকি থাকে না।
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক বলেন, “কোন জনপ্রতিনিধি অনুমোদনহীনভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সৃস্টি হয়। নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ও জনদুর্ভোগ লাগবে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/এস