একটি ট্রান্সফরমারের জন্য পতিত ২৫০ বিঘা জমি
Published: 23rd, January 2025 GMT
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বীর নোয়াকান্দি মৌজায় একটি গভীর নলকূপ বসায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ডিজেলে চলা এই নলকূপ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ওই এলাকার ৩০০ বিঘা জমিতে সেচের চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। বছর পাঁচেক আগে সেটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়। বসানো হয় ট্রান্সফরমার। অল্পদিন পরই কোনো এক রাতে চুরি যায় সেই ট্রান্সফরমার। এর পর থেকেই বন্ধ হয়ে আছে নলকূপটি।
কৃষকরা জানিয়েছেন, নলকূপ বন্ধ হওয়ার পর এলাকায় দুটি অগভীর নলকূপ বসানো হয়। এতে মাত্র ৫০ বিঘার মতো জমি আবাদ করা যাচ্ছে। বাকি ২৫০ বিঘা জমিই পড়ে থাকছে অনাবাদি। এক সময় ৩০০ বিঘা জমিতে অন্তত ৩০০ টন ধান উৎপাদিত হতো। এলাকাবাসী এখন ২৫০ টন ধান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মঙ্গলবার কটিয়াদী পৌরসভার বীর নোয়াকান্দি গিয়ে দেখা যায়, গভীর নলকূপের পাম্প হাউসটি বন্ধ। এর দেয়ালে জ্বালানির জন্য গোবরের ঘুঁটে শুকাতে দিয়েছেন এলাকার নারীরা। পাশেই বাড়ি সেচ প্রকল্পে জড়িত কৃষক মুরছালিন ইসলাম জনি ও নূরু মিয়ার। তারা বলেন, স্বাধীনতার পরপরই নলকূপটি বসানো হয়েছিল। এখন বন্ধ থাকায় বহু কৃষকের জমি পতিত। বিদ্যুতে নলকূপটি চালাতে পারলে কম খরচে সব জমি আবাদ করা যেত। এখন ডিজেলচালিত দুটি অগভীর নলকূপে কিছু জমি চাষাবাদ করা যায়। এতে খরচা অনেক বেশি।
তাদের ভাষ্য, কৃষকরা একদিকে জমি পতিত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অপরদিকে অগভীর নলকূপের জন্যও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। তারা ধান আবাদই করছেন বেশি। কেউ কেউ সামান্য পরিমাণ পতিত জমিতে ইদানীং সরিষা ও ভুট্টার আবাদ করছেন।
ওই মাঠে ৩০ বিঘা জমিই প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব আইন উদ্দিনের। মরম সর্দার নামের আরেক কৃষকের আছে ১৫ বিঘা। স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুস সোবহান ও কৃষক প্রিয়লাল রায়েরও আছে সোয়া তিন বিঘা করে জমি। সবার জমিই এখন পতিত। এলাকাবাসী জানায়, বিদ্যুতের সেচে প্রতি বিঘায় খরচ নেওয়া হতো ১ হাজার টাকা; এখন ডিজেলে নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ার পর সেচ কমিটির পক্ষ থেকে নতুন ট্রান্সফরমার বসানোর জন্য বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) অফিসে যোগাযোগ করা হয়। তারা ট্রান্সফরমারের দাম বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। সাধারণ কৃষকের এত টাকা বহনের ক্ষমতা নেই। যে কারণে গভীর নলকূপটি ৫ বছর ধরে অকেজো। এতে একদিকে পাম্প হাউসের মেশিন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ সেচের ড্রেনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বীর নোয়াকান্দির বাসিন্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সোবহান। তিনি গভীর নলকূপটির ব্যবস্থাপকের দায়িত্বেও রয়েছেন। আব্দুস সোবহানের ভাষ্য, পুরো সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাকা সেচ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে সেচ বন্ধ থাকায় ড্রেনগুলোও বেশির ভাগ জায়গায় ভেঙে গেছে। পাম্প চালু করার আগে সেসব ড্রেনও নির্মাণ জরুরি। ড্রেন নির্মাণ ও ট্রান্সফরমার বসানোর মতো বিপুল পরিমাণ খরচ বহনে বিএডিসির অনীহা আছে। যে কারণে এলাকাবাসী অসহায়।
সেচের বিষয়টি বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) আওতাভুক্ত হলেও ওই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে করণীয় বিষয়ে পদক্ষেপের আশ্বাস দেন কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবার কটিয়াদীতে ১২ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখনও আবাদ শেষ হয়নি। ফলে কয়েক দিনের মধ্যে গভীর নলকূপের সমস্যার সমাধান করা গেলে বীর নোয়াকান্দিতে এবারই আবাদ সম্ভব হবে।
বীর নোয়াকান্দি সেচ এলাকাটি বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) কুলিয়ারচর জোনের অধীনে। কুলিয়ারচর জোনের সহকারী প্রকৌশলী শাওনা মালাকার এই দায়িত্বে এসেছেন দেড় বছর আগে। এই গভীর নলকূপের বিষয়টি তিনি জানতেন না। এ বিষয়ে কেউ যোগাযোগও করেননি। কেউ যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন। শাওনা মালাকারের ভাষ্য, কোনো কিছু চুরি গেলে বিএডিসির পক্ষ থেকে আর সেটা দেওয়া হয় না। এটা নীতিমালার মধ্যেই বলা আছে। কিছু মেরামতের প্রয়োজন হলে সেটা করার সুযোগ থাকে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ ব দ কর র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, ১৮ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ পেল পাঁচ গ্রামের মানুষ, ভোগান্তি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামে টানা ১৮ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এসেছে। গতকাল সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে সরাইল সরকারি কলেজ–সংলগ্ন ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়ে যায়। এতে সরাইল সরকারি কলেজ, নাথপাড়া, দত্তপাড়া, সূত্রধরপাড়া, কর্মকারপাড়া ও ঘোষপাড়া বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। পরে ওই পাঁচ গ্রামে বিদ্যুৎ আসে গতকাল রাত সাড়ে ১১ টায়।
কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নাথপাড়া, দত্তপাড়া, সূত্রধরপাড়া, কর্মকারপাড়া ও ঘোষপাড়া গ্রাম পাঁচটি পাশাপাশি অবস্থিত। আবার এই গ্রামগুলো সরাইল সদর ইউনিয়নঘেঁষা। এই পাঁচ গ্রামে পড়েছে স্থানীয় সরকারি কলেজ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এখানে জনবসতি ছিল কম। প্রায় ৩০ বছর আগে এই নিরিবিলি এলাকার জন্য স্থাপন করা হয়েছিল মাত্র একটি ট্রান্সফরমার। বর্তমানে এই পাঁচ গ্রামের লোকসংখ্যা বেড়েছে। ছোট ছোট শিল্পকারখানাও গড়ে উঠেছে। ফলে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। তাই ৩০ বছরের পুরোনো ট্রান্সফরমারটি বাড়তি চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। কয়েক দিন পরপর এটি বিকল হয়ে পড়ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে পাঁচ গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ট্রান্সফরমার একবার বিকল হলে তা মেরামত করতে দু-তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগে যায়। আবার চাঁদা তুলে টাকাও দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে।
গতকাল ভোর থেকে বিদ্যুৎহীন হওয়ার পর ভোগান্তিতে পড়েন পাঁচ গ্রামের মানুষ। নাথপাড়ার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক আ ফ ম দেলোয়ার পাভেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের এলাকার ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়ে। কয়েক দিন পরপর এমনটি হয়ে আসছে। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে মেরামতের পর আমরা বিদ্যুৎ পাই। একবার ট্রান্সফরমার বিকল হলে দু-তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় ভোগান্তির সীমা থাকে না। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি।’
সূত্রধরপাড়ার বাসিন্দা দুলাল সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। এখানে বিদ্যুৎ গেলে আর আসে না। আমাদের পাড়ার ওপর দিয়ে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। ছয় মাস ধরে বসতবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পানিতে একটি তার ঝুলে আছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলছি, কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না।’
ঘোষপাড়ার বাসিন্দা স্থানীয় সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল বলেন, ‘এখানে কয়েক দিন পরপর বিদ্যুৎ–সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সরাইল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে বজ্রপাতে ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়ে পড়েছিল। এটি প্রতিস্থাপন করতে সময় লেগেছে। এ জন্য এমনটি হয়েছে। ওই পাঁচ গ্রামের জন্য আরেকটি ট্রান্সফরমার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।