‘রাত ১টা-দেড়টার দিকে হঠাৎ মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়, ডাকাত ঢুকেছে। সবাই সতর্ক থাকুন। এ খবর শুনে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পাহারা দিতে থাকি।’ 

কথাগুলো পটুয়াখালী সদরের চর লাউকাঠি গ্রামের মো. গোলাম মোস্তফার। তাঁর মতোই এ উপজেলার দুই ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের মানুষকে মঙ্গলবার রাত কাটাতে হয়েছে ঘুমহীন। ডাকাত দলের আতঙ্কে রাত কেটেছে তাদের। ডাকাতের কোনো অস্তিত্ব আর তারা পাননি।

জানা গেছে, সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের পূর্ব লাউকাঠি, উত্তর লাউকাঠি, চর লাউকাঠি, শ্রীরামপুর ও জামুরা এবং বদরপুর ইউনিয়নের বদরপুর, মৌকরণ, শিয়ালি ও খলিসাখালী গ্রামের মসজিদের মাইকে রাত ১টা থেকে দেড়টার দিকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরই সব গ্রামের মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি পৌঁছে যায় লাউকাঠি নদী পেরিয়ে পটুয়াখালী শহরেও। এ সময় শহরের মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের কেউ কেউ রাতেই সংবাদকর্মীদের ফোন নম্বরে কল দিয়ে ঘটনার খোঁজ নেন। কেউ কেউ আবার নিজ নিজ বাসাবাড়ির ভবনের ছাদে উঠে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

যদিও ওই রাতে কোনো বাড়িতে ডাকাতি হয়নি বলে জানান বদরপুর এলাকার মো.

জাফর হাওলাদার ও কাজী জিয়াদ। তারা বলেন, মসজিদের মাইকে ডাকাত আসছে বলে প্রচার করা হয়েছিল। এর পর আতঙ্কে মানুষ বাড়িঘর থেকে বের হয়ে যায়। তারাই রাস্তায় রাস্তায় পাহারা দেয় সকাল পর্যন্ত।

লাউকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ বাচ্চু বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে কোনো ডাকাত আসেনি। এখানে কোনোদিন ডাকাতি হয়নি। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ও দোসররা সরকারের ভারমূর্তি নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে ডাকাতের গুজব ছড়াচ্ছে।’ কারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ডাকাতের খবর ছড়িয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়ে  তিনি বলেন, তাহলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মাহমুদের ভাষ্য, লাউকাঠি ও বদরপুরের কয়েকটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল। কোনো বাড়িতে ডাকাতির খবর পাননি। তাদের ধারণা, মসজিদের মাইকে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া ও লোকজন রাস্তায় বের হওয়ায় ডাকাতরা চলে গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে পুরুষ আসামির সাক্ষাৎ

বগুড়ায় আলোচিত ১৭ মামলার আসামি তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আদালত পুলিশের ২ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ৫ সাক্ষাত প্রার্থীকে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে।

সোমবার বিকেলে বগুড়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ২ সদস্য হলেন- সহকারী টাউন উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিন ও নারী কনস্টেবল ইকসানা খাতুন।

জানা যায়, তুফান সরকার বগুড়া শহর যুব শ্রমিকলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার মজিবর সরকারের ছেলে। তিনি হত্যা, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ ১৭ মামলার আসামি।

জানা যায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্বিতীয় তলায় নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ভেতরে তুফান সরকার, তার স্ত্রী, ছোট বোন, শাশুড়ি, স্ত্রীর বড় বোন এবং একজন আইনজীবীর সহকারী মিলে গল্প করছিলেন। পরে নারী হাজতখানায় পুরুষ আসামি ঢুকার বিষয়টি জানাজানি হলে আদালত চত্বরে হৈ চৈ পড়ে যায়। পরে দ্রুত তুফান সরকারকে প্রিজন ভ্যানে কারাগারে পাঠানো হয়।

এসময় তুফান সরকারের সঙ্গে দেখা করতে আসা নারী হাজত খানা থেকে ওই ৫ জন সরে যান। পরে তাদের আদালত চত্বর থেকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হয়।

আটক ৫ জন হলেন, তুফানের শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, তুফান সরকারের স্ত্রী আশা বেগম, শ্যালিকা ফেরদৌসি বেগম, শ্যালক নয়ন, তুফানের আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।

বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সকালে তুফান সরকারকে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে হাজিরার জন্য কারাগার থেকে আনা হয়। কারাগার থেকে আনা অন্য সব হাজতিকে দুপুরের মধ্যেই প্রিজন ভ্যানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাদ পড়ে তুফান সরকার। হাজতখানার চাবি এটিএসআই জয়নাল আবেদিনের কাছে থাকে। তুফান সরকারকে কারাগারে না পাঠিয়ে তাকে নারী হাজতখানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাত করার সুযোগ করে দেয় জয়নাল আবেদিন। আদালতের সবার অগোচরে ঘটনাটি ঘটে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, পুরুষ আসামিকে নারী হাজত খানায় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে এটিএসআই জয়নাল আবেদিন ও এক নারী কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  পুলিশের আরও যাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এক কলেজ ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে। পরে শালিস ডেকে ভুক্তভোগী নারী ও তার মা'কে দোষী উল্লেখ করে মারধর করে এবং মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয় তুফান সরকার। সেই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে তুফান সরকার গ্রেপ্তার হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ