Samakal:
2025-03-04@05:18:46 GMT

আলু আবাদ করে পুঁজিতে টান কৃষকের

Published: 23rd, January 2025 GMT

আলু আবাদ করে পুঁজিতে টান কৃষকের

‘হামার তিস্তার চরে এবার আলু নয়, সোনা ফলছে। সেই সোনা দেখে খুশি হইছুনু। কিন্তু এখন আলু হামাগোর গলার কাঁটা হইছে। লোনের চাপে পানির দামে বিক্রি করবার নাগছি। তাতে অর্ধেক লোকসান হইবে। এখন কী করমো, কী খামো সে চিন্তায় আইতোত (রাতে) নিন্দ (ঘুম) আইসে না।’

আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুরের অর্জুনেরচরের কৃষক নজরুল ইসলাম। তিন একর জমিতে আলু আবাদ করতে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছে তাঁকে। প্রতি একরে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলেও দাম পাচ্ছেন না। উৎপাদন খরচ নিয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২০ টাকা পড়লেও, বিক্রি করতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গোড়াই পিয়ার চরের আলুচাষি চাঁদ মিয়া বলেন, ‘আড়তদারের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়া চড়া দামে সার-বীজ ও জমি ভাড়া করে ৮ একর জমিত আলুর আবাদ করছি। এখন ১০০ টাকার আলু ১৩ টাকায় বিক্রি করছি। যুদ্ধ করে আবাদ করে আমার কী হয়। কৃষককে দেখার কেউ নেই।’

কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে তিস্তার দুই পারে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২১টি চরেই ৬০০ হেক্টরে আলুর চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলন হলেও, ভালো বাজার দাম না পেয়ে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শত শত বিঘা জমির আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। আড়তদারের ঋণের চাপ সামলাতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন ইঁদুর মারার চরের হামজা শেখ ও চর নাটসালার নুর ইসলামের মতো অনেক কৃষক।

তাদের স্বজনরা জানান, দাম কমে যাওয়ায় আলু ক্ষেতেই পড়ে আছে। তুলতে গেলে শ্রমিকের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাবে। ঋণ শোধ করা সম্ভব হবে না। আলু চাষ করে এবার তারা ফকির হয়ে গেছেন।

কিশোরপুর চরের কৃষক সাইদুর রহমান জানান, এলাকায় হিমাগার নেই। আলু সংরক্ষণের জন্য কুড়িগ্রাম শহরে যেতে হয়। সব কৃষক আবার এ সুযোগ পান না। দালালরা আগে থেকেই হিমাগার বুকিং দিয়ে রাখে। তাদের কারণে সবাই হিমাগারে সাশ্রয়ী মূল্যে আলু রাখার সুযোগ পান না। তাতে খুব একটা লাভ পান না কৃষক। আলু সংরক্ষণে তারা উলিপুরে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

হিমাগার অগ্রিম বুকিংয়ের বিষয়ে কথা বলতে উলিপুরে বিক্রয় প্রতিনিধি মতিয়ার রহমান ও রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করেননি তারা।

থেতরাই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, কৃষকরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আবাদ করেন। সেই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করেন। এ কারণে ভালো ফলন হলেও দাম না পেয়ে তাদের ভাগ্য ফেরে না। আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, সংকট নিরসনে উপজেলা পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আলু ও সবজি সংরক্ষণে স্থানীয় পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে। তখন কৃষক ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন দল, কঠিন পথ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বা গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন একটি দিন বা মাসের ঘটনা নয়। এটা দেশে এক নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছে। অভ্যুত্থান-পর্ব শেষে এখন সেই নতুন রাজনীতি শুরুর পথে বাংলাদেশ।

গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা অনেকের মনেই হতাশার জন্ম দিতে পারে। কিন্তু নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা থেকে বাংলাদেশের মানুষ সরে আসেনি। অনেকের মুখেই শুনি এই গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, এর ব্যর্থতার ভার বহন করার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই।

বাংলাদেশের বিভিন্ন গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থানে ছাত্ররা সব সময়েই ছিলেন সামনের সৈনিক। কিন্তু চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান অনন্য। এবার তাঁরা ছিলেন নেতৃত্বে। গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্ররা নতুন রাজনীতি শুরুর দায় নিতে আগ্রহী হয়েছেন। তঁারা অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হয়েছেন, এখন নতুন দল করে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন দল গঠনকে তাই একটি অভাবিত ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বড়সড় সমাবেশ করে ছাত্ররা যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করেছেন, তার ঘোষণাপত্রে দল গঠনের উদ্দেশ্য ও আদর্শের বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

নতুন দলের ঘোষণার শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘আমরা হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় বঙ্গীয় বদ্বীপের জনগোষ্ঠী হিসেবে এক সমৃদ্ধ ও স্বকীয় সংস্কৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।’

এরপর ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে নতুন সংগ্রাম ও একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দিলেও গণতন্ত্রের জন্য যে জনগণের লড়াই থামেনি, সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ রয়েছে।

বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানও দেশে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারেনি। আর গত ১৫ বছরে দেশে এমন একটি নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল, যা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এ সময়ে বিরোধী কণ্ঠ দমন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থ পাচার একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়।

নতুন দল এনসিপি গঠনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, তখন থেকেই এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি করবে। বিএনপিও দেশের রাজনীতিতে মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিবেচিত। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, বিএনপির সঙ্গে এই নতুন দলের আদর্শগত পার্থক্য কী হবে? তা ছাড়া নতুন দলের মধ্যপন্থার ভরকেন্দ্র কোন দিকে ঝুঁকে থাকবে? ডানে না বাঁয়ে? দল গঠনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মতপথের ছাত্রদের মধ্যে একধরনের ‘পাওয়ার স্ট্রাগল’ দেখা গেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক বা আদর্শগত অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে।

দল ঘোষণার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে নতুন স্বাধীনতা পাওয়া গেছে, তার উদ্দেশ্য কেবল একটি সরকারের পতন ঘটিয়ে আরেকটি সরকার বসানো নয়। জনগণ এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে রাষ্ট্রের আষ্টেপৃষ্ঠে জেঁকে বসা ফ্যাসিবাদী-ব্যবস্থা বিলোপ করে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের আকাঙ্ক্ষা থেকে।

নতুন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি। এটি হবে একটি গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল।’

ঘোষণায় দলের মূল যে দুটি লক্ষ্য স্পষ্ট হয়েছে, তা হচ্ছে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা এবং গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা। সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র যেন বাংলাদেশে আর কোনোভাবেই চেপে বসতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।

নতুন দল এনসিপি গঠনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, তখন থেকেই এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি করবে। বিএনপিও দেশের রাজনীতিতে মধ্যপন্থী দল হিসেবে বিবেচিত। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, বিএনপির সঙ্গে এই নতুন দলের আদর্শগত পার্থক্য কী হবে? তা ছাড়া নতুন দলের মধ্যপন্থার ভরকেন্দ্র কোন দিকে ঝুঁকে থাকবে? ডানে না বাঁয়ে? দল গঠনের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মতপথের ছাত্রদের মধ্যে একধরনের ‘পাওয়ার স্ট্রাগল’ দেখা গেছে। ফলে দলটির রাজনৈতিক বা আদর্শগত অবস্থান শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে।

নতুন দলের মধ্যপন্থার ঝোঁকটা শেষ পর্যন্ত দক্ষিণে ঝুঁকে থাকবে কি না, এই প্রশ্ন সমাজের অনেককেই ভাবাচ্ছে। দলের সমাবেশে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান নিয়ে অনেককে প্রশ্ন করতে শুনেছি। এটা কী তাদের দলীয় স্লোগান?

সংবাদমাধ্যমগুলো মানুষের কৌতূহল মেটাতে এই স্লোগানের উৎপত্তি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছে। এটা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বা কমিউনিস্ট পার্টির স্লোগান—এসব তথ্যও অনেকের অস্বস্তি দূর করতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে। এই স্লোগানের শব্দগত অর্থ যা-ই হোক বা এর যত ঐতিহাসিক গুরুত্বই থাক, সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই শব্দ কীভাবে জনমানসে জায়গা করে নিয়েছে, সেটাই সম্ভবত অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বোঝা যায়, দলটিকে এ ধরনের অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। খুঁটিনাটি অনেক কিছু দিয়েই এই দলের চরিত্র বিচারের চেষ্টা চলবে।

নতুন দলটি রাজনৈতিকভাবে বিএনপিসহ বেশ কিছু প্রচলিত রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখে পড়বে, এটা প্রায় নিশ্চিত। এনসিপির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের ধারণাকে তারা অনেকটা বাতিলই করে দিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ কী, তা তিনি বোঝেন না। দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি এখনো বুঝি নাই সেকেন্ড রিপাবলিক কী। কী বোঝায়, আপনারা বুঝেছেন কি না জানি না? অর্থাৎ একটা অসিলা ধরে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। দয়া করে খেয়াল রাখবেন।’

বিএনপির এই অবস্থানের বাইরে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ সম্পর্কে জনগণের ধারণাও খুব পরিষ্কার বলে মনে হয় না। ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা মুক্তিযুদ্ধকে পেছনে ঠেলে দেবে কি না, সেই ভয় ও প্রশ্নও অনেকের মধ্যে রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারে নির্বাচন বা কতটা সংস্কারের পর নির্বাচন—এসব নিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে নতুন দলের বিরোধ সামনের দিনগুলোতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। এনসিপি যে কিংস পার্টি নয়, তার পক্ষে দলটির নেতারা নানা ব্যাখ্যা ও যুক্তিতর্ক দিলেও এই তকমা থেকে তাদের মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না।

নতুন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দল গঠনের প্রক্রিয়ার সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন, দল ঘোষণার আগমুহূর্তে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং ছাত্রদের দুই প্রতিনিধি এখনো সরকারে আছেন—এসব নিয়ে সমালোচনাকে উপেক্ষা করা দলটির জন্য কঠিন হবে। গণ অধিকার পরিষদ এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার স্বার্থে দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুনরাজনীতির নতুন সময়ে নতুন দলকে নতুন কিছু দিতে হবে০২ মার্চ ২০২৫

বোঝা যায়, নতুন দলের সামনের পথটি কঠিন। বাংলাদেশের রাজনীতি যে ধারায় চলে আসছে, সেই পথ যেমন পিচ্ছিল এবং চোরাবালিতে ভরা। সেই অবস্থা বদলে গেছে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। সেখানে নতুন দল নতুন কী নিয়ে হাজির হয়, সেদিকেই সবাই তাকিয়ে আছে। এটা এক কঠিন পরীক্ষা। হাসিনার পতন মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মুক্ত করেছে। মানুষ এখন কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের মতপ্রকাশ করছে। নতুন দলকে একেবারে শুরু থেকেই এসব বাধাহীন সমালোচনার মধ্যে পথ চলতে হবে।

দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে যে এত ঘটা করে সমাবেশ হলো বা বড় কার্যালয়ে দল গঠনের যে প্রক্রিয়া চলেছে, সেই খরচ কোথা থেকে এসেছে—এই প্রশ্ন অনেকে খোলামেলাভাবেই তুলছেন। এনসিপির নতুন রাজনীতির একটি সূচনা হতে পারে এসব অর্থের উৎস ও খরচের হিসাব প্রকাশের মাধ্যমে। তারা কি এমন কিছু করে নতুন রাজনীতির ইঙ্গিত দেবে?

এনসিপি এখন জনগণসহ সব মহলের আতশি কাচের নিচে থাকবে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী এলোমেলো পরিস্থিতিতে নানা ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে দলটির অবস্থান কী, তার ওপর ভিত্তি করেই মানুষ নতুন দলকে বিচার করবে। মনে রাখতে হবে, হাসিনার দীর্ঘ ও প্রতিষ্ঠিত শাসনকে ধ্বংস করে যাদের উত্থান, দেশের প্রচলিত রাজনীতি ও ব্যবস্থা সেই শক্তিকে স্বাগত জানাতে খুব আগ্রহী হবে না। নতুন দলটিকে নির্ভর করতে হবে জনগণ ও তাদের সমর্থনের ওপর। নিজেদের স্বচ্ছ ও স্পষ্ট অবস্থানের মধ্য দিয়েই তারা তা পেতে পারে।

এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক

ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ