‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ’ কি মঙ্গল গ্রহকেও স্পর্শ করবে?
Published: 22nd, January 2025 GMT
ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণ করছিলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে তখন তাপমাত্রা তলানিতে। হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রার কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের অভ্যন্তরে স্থানান্তরিত হয়েছিল। উদ্বোধনের পূর্ববর্তী মিডিয়া ভাষ্যে আবহাওয়া পরিণত হয়েছিল প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে। রয়টার্সের প্রতিবেদনমতে, এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক দশকের মধ্যে ‘সবচেয়ে শীতল’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
আমি বেলা ১১টায় চারপাশ বোঝার চেষ্টা করছিলাম। এর মানে, ট্রাম্প মূল মঞ্চে আসার আগে আমার হাতে পুরো এক ঘণ্টা সময় ছিল। মনে হচ্ছিল, মঙ্গল গ্রহে বাইরের হিমশীতল আবহাওয়া জীবনের জন্য ভালো কিছু কিনা। মজার ব্যাপার, একটু পরই ট্রাম্প তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় বললেন, ‘আর আমরা নক্ষত্রের মধ্যে আমাদের প্রকাশ্য গন্তব্য অনুসরণ করব, মার্কিন মহাকাশচারীদের জন্য মঙ্গল গ্রহে নক্ষত্র ও জুপিটারের ওপর ডোরা কাটা দাগ দিয়ে দেব।’
নিশ্চিত বলা যায়, ট্রাম্প সোমবার শুধু আঞ্চলিক বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা নয়। তিনি মেক্সিকো উপসাগরকে ‘আমেরিকা উপসাগর’ হিসেবে পুনঃনামকরণ করার পাশাপাশি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য তাঁর দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। কারণ ‘মার্কিন জাহাজগুলোর ওপর মারাত্মকভাবে অতিরিক্ত চার্জ করা হচ্ছে। আর কোনো রকম বাছ-বিচার করে ন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে না।’
মঙ্গল গ্রহের ব্যাপারে মন্তব্য করলে দর্শকদের মধ্যে একজনকে বেশ উচ্ছ্বসিত হাসিতে দেখা গেছে। তিনি হলেন টেসলার সিইও ধনকুবের ইলন মাস্ক, যিনি এ ধরনের ধারণার জন্য পরিচিত। তিনি মনে করেন, ‘পরবর্তী সময়ে সত্যিই বড় জিনিসটি হলো মঙ্গলে স্বনির্ভর শহর গড়ে তোলা এবং সেখানে প্রাণী ও অন্যান্য জীব নিয়ে আসা।’ রোটান্ডায় জায়গা করে নেওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে অভিজাত প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হলেন ইলন মাস্ক। তা ছাড়া মাইক টাইসনের মতো অতি ধনী কিংবা দরিদ্র নন এমন ব্যক্তির বিপরীতে উপস্থিত ছিলেন মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ, অ্যামাজনের জেফ বেজোস ও টিকটকের সিইও শো জি চিউ।
উদ্বোধনের আগের দিন আলজাজিরা উল্লেখ করেছে, অ্যাপলের সিইও টিম কুক অনুষ্ঠানে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছেন। ‘গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও মেটা বলেছে, ওপেনএআইর সিইও স্যাম অল্টম্যানসহ তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করবে। ইতোমধ্যে তারা ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছে।’ ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ট্রাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের তহবিল রেকর্ড ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে যাই হোক, প্লুটোক্রেসি বা ধনিকতন্ত্রের ওপর অত্যধিক চার্জ করার চেয়ে ‘আমেরিকাকে আবার মহান করুন’ প্রচেষ্টায় এর চেয়ে ভালো উপায় আর কী!
ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই ঘোষণা করেন, ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। আমেরিকাতে জাতীয় ঐক্য ফিরে আসছে’– এমন মন্তব্যসহ আরও অনেক ভৌতিক কথাবার্তা তুলে ধরেছেন তিনি। এতে মনে করার কিছু নেই যে, গুটিকয়েক অত্যধিক ধনী লোকের অত্যাচার ঠিক একই সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত তিনি যা বলেন তা-ই যে এই গ্রহে ঘটবে– এমন নিশ্চয়তা নেই। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে ‘পুরো বিশ্বের ওপর সূর্যের আলো পড়ছে’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে ক্রমাগত আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রে গির্জা ও রাষ্ট্রের স্পষ্ট বিচ্ছেদের ব্যাপারেও সূক্ষ্ম উপহাস সৃষ্টি করেছিল। আর ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া রাজ্যে জুলাইয়ের একটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে থাকার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি আবারও আমেরিকাকে মহান করে গড়ে তোলার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা রক্ষা পেয়েছি।’
উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প তাঁর অভিষেকের মধ্য দিয়ে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবসকে ঢেকে ফেলার সুযোগ নিয়েছিলেন, যা প্রতিবছর জানুয়ারির তৃতীয় সোমবার উদযাপন হয়। দিনটির প্রতিশ্রুতি হলো, ‘আমরা তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করব।’ সেটা সম্ভবত তখনই সহজ হবে যদি ট্রাম্প নিজে আপাদমস্তক একজন বর্ণবাদী না হন।
প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের ধারণা, ‘আমাদের শক্তি সব ধরনের যুদ্ধ বন্ধ করবে এবং এমন একটি বিশ্বে ঐক্যের একটি নতুন চেতনা নিয়ে আসবে, যে বিশ্ব বর্তমানে রাগান্বিত, হিংসাত্মক ও সম্পূর্ণরূপে অনাকাঙ্ক্ষিত।’ এই ধারণা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বে সহিংসতার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালনকারী’ হিসেবে কারও কারও যে মূল্যায়ন, তার সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে বিরোধপূর্ণ।
এর কোনোটির মধ্য দিয়ে এটি বোঝানো হয় না যে, ডেমোক্র্যাটরা বৈশ্বিক সহিংসতা দূরীকরণ বা প্লুটোক্রেসি বা সম্পদশালীদের সরকার সমুন্নত রাখা, নিষ্ঠুর অসমতাকে চিরস্থায়ী করা, আশ্রয়প্রার্থীদের আতঙ্কগ্রস্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা পালন করেনি। কিন্তু সোমবারের উদ্বোধনী প্রহেলিকা ছিল নিহিলিজম তথা সবকিছু উড়িয়ে দেওয়ার চর্চা। আর যখন আমি আমার জগতে ফিরে আসি এবং ট্রাম্প আবার ডিস্টোপিয়া বা কল্পনার জগৎকে দুর্দান্ত করে তুলেই চলেছেন, তখন আমার মনে হলো, কোনো এক দিন আমি ‘আমেরিকার স্বর্ণযুগ’-এর মধ্য দিয়ে মঙ্গল গ্রহও অতিক্রম করব।
বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার কলামিস্ট; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।
স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’
তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।