ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কারণে হাওর অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মোট আয়তনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হাওর অঞ্চল। অঞ্চলটি সাতটি জেলার ৫৩ উপজেলাকে যুক্ত করেছে। হাওর কেবল প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এলাকা নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিসম্পদ ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
এ ছাড়া দেশের মোট গবাদি পশুর প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ এ অঞ্চলে পালন করা হয়। এখানকার প্রাকৃতিক চারণভূমি (বাথান) ও পানির সহজলভ্যতা গবাদি পশুর প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক। গবাদি পশু দুধ, মাংস, চামড়া ও সার উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের মোট হাঁসের প্রায় ২২ শতাংশ এ অঞ্চল সরবরাহ করে।
কৃষিক্ষেত্রেও হাওরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের মোট বোরো ধানের ৬০ শতাংশ হাওর থেকে আসে। পাশাপাশি নদী, খাল, বিল এবং জলাশয় মৎস্য উৎপাদনের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কৃষিজমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য প্রাণঘাতী পরিবেশ তৈরি করে। ফলে শৈবাল বৃদ্ধির কারণে পানির নিচে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, যা মাছসহ জলজ জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।
হাওরে মৃত গবাদি পশু সঠিকভাবে সৎকার করা হয় না, যেগুলো পচে গিয়ে জলাশয়ের পানি দূষিত করে। এতে আমাশয় ও ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
অনেক মানুষ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার না করে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তা বদ্ধ পানিকে দূষণ করে এবং প্রাণিদেহে বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি করে। কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং প্লাস্টিক, পলিথিনের মতো অপচনশীল বর্জ্য জলাশয়ে পড়ে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে এবং মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট করে। বৃক্ষ নিধনের ফলে ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রপাত ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বেড়েই চলেছে। তাই এ অঞ্চলের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য আবশ্যক। হাওর অঞ্চলের ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলে এ সংকট দূর করা সম্ভব।
এক.
তবে এ অঞ্চলের কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। যেমন এখানে অধিকাংশ জমিতে একক ফসল ফলে, বিশেষত ধান চাষ হয়ে থাকে। শাক-সবজি ও ফলমূলের উৎপাদন সীমিত থাকায় এখানকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না; বর্ষাকালে বিশেষ করে সবুজ ঘাসের অভাব দেখা দেয়; বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই; কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশু পালনে আধুনিক সুবিধা এখনও পুরোপুরি গৃহীত হয়নি, যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়; হাওরের মাটিতে শাক-সবজি চাষ তুলনামূলক কম; মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্যের অভাব এবং কৃষিক্ষেত্রে বহুমুখী সমন্বিত চাষাবাদ ব্যবস্থা না থাকায় টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ‘সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা’ চালুর মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের আর্থসামজিক উন্নয়ন সম্ভব। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের আধুনিক কৃষি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় পণ্যের প্রসার ঘটবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি থাকা জরুরি।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ: পরিচালক, হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারী।
বৃহস্পতিবার ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মীর সই করা এক হাজার ৪২৮ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপি উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, সংস্কার দাবির কারণে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করে। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং আরও ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই ঘটনায় সমিতির কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে কিছু এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
স্মারকলিপি আরও বলা হয়, আরইবি এখনও মামলা, চাকরিচ্যুতি, বদলি, সাসপেন্ড বিভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। শুধু স্মারকলিপিতে সই দেওয়ার কারণেও সম্প্রতি মাদারীপুর ও রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত করে তদন্তের নামে হয়রানি ও শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চাকরি হারিয়ে, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সমিতির ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সই করা স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে।