Samakal:
2025-03-03@21:20:54 GMT

টেকসই উন্নয়ন ও হাওর পরিকল্পনা

Published: 22nd, January 2025 GMT

টেকসই উন্নয়ন ও হাওর পরিকল্পনা

ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কারণে হাওর অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মোট আয়তনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ হাওর অঞ্চল। অঞ্চলটি সাতটি জেলার ৫৩ উপজেলাকে যুক্ত করেছে। হাওর কেবল প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এলাকা নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাণিসম্পদ ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।

এ ছাড়া দেশের মোট গবাদি পশুর প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ এ অঞ্চলে পালন করা হয়। এখানকার প্রাকৃতিক চারণভূমি (বাথান) ও পানির সহজলভ্যতা গবাদি পশুর প্রজনন বৃদ্ধিতে সহায়ক। গবাদি পশু দুধ, মাংস, চামড়া ও সার উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দেশের মোট হাঁসের প্রায় ২২ শতাংশ এ অঞ্চল সরবরাহ করে।

কৃষিক্ষেত্রেও হাওরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের মোট বোরো ধানের ৬০ শতাংশ হাওর থেকে আসে। পাশাপাশি নদী, খাল, বিল এবং জলাশয় মৎস্য উৎপাদনের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কৃষিজমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য প্রাণঘাতী পরিবেশ তৈরি করে। ফলে শৈবাল বৃদ্ধির কারণে পানির নিচে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, যা মাছসহ জলজ জীবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়।

হাওরে মৃত গবাদি পশু সঠিকভাবে সৎকার করা হয় না, যেগুলো পচে গিয়ে জলাশয়ের পানি দূষিত করে। এতে আমাশয় ও ডায়রিয়ার মতো পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

অনেক মানুষ স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার না করে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করে। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে তা বদ্ধ পানিকে দূষণ করে এবং প্রাণিদেহে বিভিন্ন রোগব্যাধির সৃষ্টি করে। কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ও অপ্রতুল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং প্লাস্টিক, পলিথিনের মতো অপচনশীল বর্জ্য জলাশয়ে পড়ে পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে এবং মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট করে। বৃক্ষ নিধনের ফলে ঝোড়ো হাওয়া, বজ্রপাত ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বেড়েই চলেছে। তাই এ অঞ্চলের টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য আবশ্যক। হাওর অঞ্চলের ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলে এ সংকট দূর করা সম্ভব।

এক.

হাওরের মাটি অত্যন্ত উর্বর, যা ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করতে পারি। দুই. হাওর অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষ কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশু লালন-পালনে সরাসরি জড়িত। তাদের মাধ্যমে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে পারি। তিন. খাল, বিল ও নদীর সুরক্ষা করে মাছ উৎপাদন আরও বাড়ানো যেতে পারে। চার. হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ঘাস ও চারণভূমি, যা গবাদি পশু পালনে খরচ কমিয়ে আনে। 

তবে এ অঞ্চলের কিছু দুর্বলতাও রয়েছে। যেমন এখানে অধিকাংশ জমিতে একক ফসল ফলে, বিশেষত ধান চাষ হয়ে থাকে। শাক-সবজি ও ফলমূলের উৎপাদন সীমিত থাকায় এখানকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় না; বর্ষাকালে বিশেষ করে সবুজ ঘাসের অভাব দেখা দেয়; বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য যথেষ্ট কর্মসংস্থান নেই; কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশু পালনে আধুনিক সুবিধা এখনও পুরোপুরি গৃহীত হয়নি, যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়; হাওরের মাটিতে শাক-সবজি চাষ তুলনামূলক কম; মৌসুমভিত্তিক ফসল উৎপাদনে বৈচিত্র্যের অভাব এবং কৃষিক্ষেত্রে বহুমুখী সমন্বিত চাষাবাদ ব্যবস্থা না থাকায় টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, ‘সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা’ চালুর মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের আর্থসামজিক উন্নয়ন সম্ভব। সেই সঙ্গে স্থানীয়দের আধুনিক কৃষি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন করলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় পণ্যের প্রসার ঘটবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি থাকা জরুরি।

ড. মো. আবুল কালাম আজাদ: পরিচালক, হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান

‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।     

এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। 

রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম  (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’

তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা,  সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’ 

তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ 

তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ