পরাজয় ঘিরে বিএনপিতে অস্থিরতা, বহিষ্কার আতঙ্ক
Published: 22nd, January 2025 GMT
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ কেন্দ্র। নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে দলের পদধারী নেতাদের মধ্যে।
ইতোমধ্যে জেলা ও নগর বিএনপির নেতাদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিলেটের কমিটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা চলছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মামলা বাণিজ্য ও নিজেদের বিভেদই নির্বাচনে ভরাডুরির কারণ বলে উল্লেখ করছেন অনেকে।
গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। এতে ২৬ পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা জয়ী হন। এ ছাড়া বিএনপিপন্থি ছয়জন ও জামায়াতপন্থি পাঁচজন জয় পান। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থি এবং দু’জনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি।
নির্বাচনে সব পদেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অংশ নেন। ফল প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠে, বিএনপিপন্থিরা আওয়ামীপন্থিদের পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি তাদের জেতাতে বিএনপি ঘরানার ভোটাররাও সক্রিয় ছিলেন। এ কারণে বিএনপিপন্থি বেশির ভাগ আইনজীবী হেরে গেছেন। প্রার্থীদের ফল বিপর্যয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপির সিলেট জেলা ও নগর কমিটির শীর্ষ চার নেতাকে কারণ শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে জয়ী করার জন্য জেলা বা মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন ও নির্বিকার ভূমিকার জন্য নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটেছে।
নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন– জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমেদ চৌধুরী, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শোকজের জবাব জমা দিতে বলা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা নোটিশ পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন আবদুল কাইয়ুম ও রেজাউল হাসান।
এ বিষয়ে বুধবার আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আছি, শোকজের জবাব দিয়েছি।’ রেজাউল হাসান বলেন, ‘সময়ের মধ্যেই জবাব দিয়েছি। যারা আইনজীবী সমিতিতে আছেন, তাদের অধিকাংশই জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তার পরও আমরা আমাদের মতো করে ক্যাম্পেইন করেছি।’
এদিকে নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণে গত রোববার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেটের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানানো হয়। এ ছাড়া বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
পরাজিত সভাপতি প্রার্থী জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘আমাকে কৌশলে হারানো হয়েছে। আমি নিজ দলের রোষানলের শিকার। এর আগেও আমাকে পিপির আসনে বসতে দেওয়া হয়নি।’
নির্বাচনে ভরাডুবিতে তৃণমূলেও সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। ‘আমি আমার বিচার চাই’ শিরোনামে ফেসবুকে পোস্ট দেন মইনুল হক বুলবুল নামে এক আইনজীবী।
তিনি লিখেছেন, ‘সিলেট বারের নির্বাচনে বিএনপির বিপুল ভরাডুবি তাদের এক দিনের কর্মফল নয়। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আদালতপাড়া কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সিলেটের রাজনীতি কারা নিয়ন্ত্রণ করবে, বিএনপির সে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ। এর সূত্রপাত প্রথমে রাজনৈতিক মামলা বাণিজ্য দিয়ে। আদালতে বিএনপির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমেদের অনুসারী জেলা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রিপন আহমদ পাটওয়ারী ও দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাঈয়ীদ আহমেদের সক্রিয় প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে (পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য), যা নিয়ে সিলেট আদালতপাড়ায় বিএনপি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এর পর গেল বছরের অক্টোবরে পিপি-জিপি নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের দ্বিতীয় কিস্তির সূত্রপাত। বিএনপিন্থি আইনজীবীদের চর দখলের আদলে দৌরাত্ম্য ও বিরোধের কাণ্ডকারখানায় সিলেট বারের সাধারণ ভোটাররা নিজেদের নিরাপত্তায় উল্টো পথ ধরেন। এসবের ফলাফল যা হওয়ার তা হয়েছে, পূর্ণ প্যানেলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। দুর্বলতা বেরিয়ে আসে বিএনপির। যারা বিএনপির ভেতরে থেকে নিজের স্বার্থের জন্য দলকে ডুবাতে পিছপা হয়নি, তাদের সরানোর মিশন শুরু।’
আনোয়ার চৌধুরী নামে আরেকজন লেখেন, ‘অতিমাত্রায় আত্মতুষ্টি এবং মামলা বাণিজ্যে বেশি মনোযোগী হওয়ায় এই ফলাফল।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স র ব এনপ আইনজ ব র কম ট র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
পেছালো খালেদা জিয়ার নাইকো মামলার সাক্ষ্য
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক সাহেদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ছিলো। তবে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। এজন্য আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী এ তারিখ ঠিক করেন।
এদিন মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। তার পক্ষে আইনজীবী হাজিরা দাখিল করেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া জানান, মামলায় ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের সাক্ষ্য হয়েছে।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলা তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। গত বছর ১৯ মার্চ একই আদালত খালেদা জিয়াসহ ৮ আসামির অব্যাহতির আদালত নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন।
অপর আসামিরা হলেন- তৎকালীন মুখ্য সচিব কামাল উদ্দীন সিদ্দিকী,বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও বাগেরহাটের সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম। এদের মধ্য প্রথম তিন জন পলাতক রয়েছেন।
ঢাকা/মামুন/ইভা