দায় নিচ্ছেন না ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা
Published: 22nd, January 2025 GMT
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে আড়াই শতাধিক বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া দুই এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর খোঁজ মেলেনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ বিষয়ে সমকালে গত ১৪ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এনজিও দুটির ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থাকা সদস্যরা এর দায় নিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, কমিটির পদে থাকার বিষয়ে তারা জানতেনই না। আবার উপজেলা সমবায় অফিস বলছে, অডিটে কখনোই ওই তিন এনজিওর প্রতারণার বিষয়টি তারা জানতে পারেননি। গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওই দুই এনজিও হলো পারভীন সমাজকল্যাণ সংস্থা ও সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি। প্রতিষ্ঠান দুটির তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু হাশেম মো.
জানা গেছে, ২০১৭ সালে আক্কেলপুরের ছয় ব্যক্তি উপজেলা সমবায় অফিসে আবেদন করে সমতা সমবায় সমিতি নামে নিবন্ধন নেয়। পরে সেটি সংশোধন করে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে আওতাভুক্ত সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচি পরিচালনা করে। ওই সমিতিতে ২০২২ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন হয়। তার পর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত কমিটির সভাপতি রায়কালী ইউনিয়নের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সুলতান মাহমুদ, সহসভাপতি পোপীনাথপুর ইউনিয়ের আব্দুল আজিজের মেয়ে স্বপ্না বানু, সম্পাদক তিলকপুর ইউনিয়নের আলতাফ হোসেনের ছেলে কে এম নুরুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ রায়কালী ইউনিয়নের ফারুকুল ইসলামের ছেলে এনায়েত আহম্মেদ এবং সদস্য তিলকপুর ইউনিয়নের রেজাউল ইসলামের মেয়ে নূরুন নেছা এবং রায়কালী ইউনিয়নের আহম্মেদ আলীর ছেলে মুক্তার হোসেন দায়িত্বে রয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অডিট অনুযায়ী, তাদের মূলধন ছিল ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৪ টাকা। মোট সদস্য ছিল ৪৮৫ জন।
সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয় উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের চন্দনদীঘি বাজারে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির পদে থাকা ছয় ব্যক্তিই আক্কেলপুরের। অপরদিকে পারভিন সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান কার্যালয় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে। কিন্তু গ্রাহকদের বলা হতো, সান্তাহার ও নওগাঁয় সদরদপ্তর তাদের। উপজেলায় ছয়টি শাখায় দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম একই কার্যালয় এবং একই কর্মী দ্বারা পরিচালিত হতো।
এ বিষয়ে জানতে সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সম্পাদক কে এম নুরুজ্জামান ও সদস্য মুক্তার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তারাও ফোন বন্ধ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে অপর তিনজন বলছেন ভিন্ন কথা। সহসভাপতি স্বপ্না বানু ও কোষাধ্যক্ষ এনায়েত আহম্মেদের ভাষ্য, তারা সমতাতে চাকরি করতেন। এর বেশি তাদের জানা নেই। ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেন।
কমিটির আরেক সদস্য নূরুন নেছা বলেন, কয়েক বছর আগে আমি ওই প্রতিষ্ঠানে একটি সঞ্চয় রেখেছিলাম। এর বেশি আমার জানা নেই। আমি কখনও ওই প্রতিষ্ঠানে যাইনি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মর্জিনা বেগম জানান, সমতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। অডিটের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণে আছি; এখন কথা বলতে পারব না।
এ বিষয়ে আক্কেলপুরের ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, সাধারণ মানুষ বেশি মুনাফার লাভে পড়ে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে টাকা আমানত রেখেছিলেন। দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় বর্তমানে তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষ দ র ব যবস য় কম ট র এনজ ও ইউন য় সদস য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দেড় ঘণ্টায় শেষ সুলভ মূল্যের ডিম-দুধ, পাননি অনেকেই
নির্ধারিত এলাকায় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাড়ি পৌঁছায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এরপর শুরু হয় সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও গরুর মাংস বিক্রি। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল গাড়িতে ডিম ও দুধ নেই। কেবল ১৬ কেজি গরুর মাংস অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে সুলভ মূল্যে বিক্রির জন্য আনা দুধ ও ডিম।
আজ সোমবার চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকায় দেখা গেছে এমন চিত্র। এদিন নগরের ওয়্যারলেস ও টেক্সটাইল এলাকায় এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এই কর্মসূচির আওতায় পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ প্রতিটি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ১ হাজার ৫০০ পিস ডিম ও ৭৫ কেজি করে মাংস ছিল। সে হিসেবে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ২০০ লিটার দুধ ও ১২৫ ডজন ডিম বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। তবে দুপুর ১২টার দিকে তেমন ভিড় দেখা যায়নি সেখানে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, তাঁরা অনেকে আগে এসেও পণ্য পাননি।
এদিন অন্তত ১০ ক্রেতা দুধ-ডিম না পেয়ে ফেরত গেছেন। ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি দুপুর ১২টার দিকে এসে ডিম পাই নাই। বাসা থেকে আসতে আসতেই দেখি সব শেষ। তাঁরা নাকি দেড় হাজার ডিম আনছে। তাহলে আমরা পাই নাই কেন?’
গাড়ি থেকে এসব পণ্য কেনার জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে স্লিপ নিতে হয়। কর্মকর্তারা জানান, একজন সর্বোচ্চ এক ডজন ডিম, এক বা দুই লিটার দুধ ও এক কেজি মাংস কিনতে পারেন। কেউ চাইলে শুধু ডিম, দুধ অথবা মাংস কিনতে পারবেন। তবে মাংসের চাহিদা তুলনামূলক কম।
দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকায় ফ্রিজার ট্রাক রয়েছে। ফলে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য পণ্য নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু চট্টগ্রামে সে সুযোগ নেই। তাই পরিমাণ কম। আবার দ্রুত ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা বোয়ালখালী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সবাইকে পণ্য দেওয়া হয়েছে। মাংসের চাহিদা কম থাকায় কিছু মাংস থেকে গেছে। ডিমের চাহিদা বেশি ছিল। দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় শেষ হয়ে গেছে।