ইউক্রেন যুদ্ধ ‘আশু বন্ধে’ পুতিনকে কড়া হুমকি ট্রাম্পের
Published: 22nd, January 2025 GMT
খুব শিগগির ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশু যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়ার ওপর শুল্ক, কর ও নিষেধাজ্ঞার খগ্ড় চালাবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।
বিবিসি লিখেছে, বুধবার (২২ জানুয়ারি) ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে পুতিনকে এই হুমকি দেন।
“রুশ জনগণের প্রতি তার ‘ভালোবাসা’ ও পুতিনের সঙ্গে তার ‘ভালো সম্পর্কের’ কথা তুলে ধরে শুরু করা পোস্টে ট্রাম্প প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলেছেন, “এখনই এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।”
ট্রাম্প লিখেছেন, “এটি কেবল আরো খারাপ হতে চলেছে। আমরা যদি ‘চুক্তি’ না করি এবং শিগগির সেটি না করি; তাহলে রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে বিক্রি করা সব কিছুর ওপর উচ্চমাত্রার কর, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প থাকবে না।”
“এখনই ‘একটি চুক্তি’ করার সময়। আর কোনো জীবন হারানো উচিত নয়,” পোস্টে যোগ করেন ট্রাম্প।
এরই মধ্যে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ; যার খুবই কম সম্পদ বা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে; যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েনি।
অবশ্য রাশিয়ার ব্যাংকগুলো এবং সামরিক-শিল্প কারখানাগুলো নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে যেকোনো উপায় অবলম্বনের কথা বলেছিলেন। তিনি আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় বসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধের ইতি টানবেন। অবশ্য তেমনটি না হলেও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি।
ট্রাম্পের আগ্রহ দেখে বোঝা যাচ্ছে, শিগগিরই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কির বক্তব্যেও তার পরিষ্কার আভাস রয়েছে।
২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে জেলোনস্কি বলেন, মস্কোর সঙ্গে যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির পর নতুন কোনো রুশ আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেইনের অন্তত দুই লাখ ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, “পুরো ইউরোপ থেকে। অন্তত দুই লাখ। এটা লাগবেই, না হলে কিছুই হবে না।”
ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার এক দিন পর জেলেনস্কিও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কথা বললেন। তিনি ইউরোপ মহাদেশের সুরক্ষায় ইউরোপীয় নেতাদের আরো বেশি কিছু করারও তাগিদ দিয়ে বলেন, এখনই কিছু করার সময়।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেন অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর কাছ থেকে। তবে যুদ্ধের মাঠে নিজ দেশের সেনাবাহিনী ও জনযোদ্ধাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে জেলোনস্কিকে। সামরিক শক্তির বিচারে রাশিয়ার বহু দূরে ইউক্রেন।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। এই সংখ্যার অর্ধেক নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। সৈন্য সংখ্যার এই পার্থক্য তুলে ধরে যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তা বজায় রাখতে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের ওপর জোর দিচ্ছেন জেলোনস্কি।
এ অবস্থায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজছেন ট্রাম্পও। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনও যুদ্ধটি যেকোনোভাবে বন্ধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে পুতিনকে প্রকাশ্য হুমকি দিতেও পিছপা হচ্ছে না ট্রাম্প।
হুমকিই শুধু নয়, ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে শিগগির তিনি বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক হবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক আইন সংশোধনের দাবি
হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। আর এই তামাক ব্যবহার জনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। অথচ এটি প্রতিরোধযোগ্য। তাই প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যু কমাতে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি অবিলম্বে পাস করার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আইনটিকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করতে ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল–এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংশোধনীর প্রস্তাব করে বলা হয়, সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ (ডিএসএ) নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (পয়েন্ট অব সেল) তামাকজাত পণ্য প্রদর্শনী (প্রোডাক্ট ডিসপ্লে) নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা এবং ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অগ্রগতি ও তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক সেমিনারে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিকের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে আশঙ্কাজনকভাবে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন (গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে)। একইসঙ্গে ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে ৯ জন উপদেষ্টা ও তিন জন সচিবের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে। আমাদের দাবি, অধূমপায়ীদের সুরক্ষা ও তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত আইনটি পাস করা প্রয়োজন।
প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে পরিবারের অর্থনীতি ঠিক থাকে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সমাজের কোনো অংশেই অবদান রাখা যায় না। তাই তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক আইন সংশোধনের তাগিদ দেওয়া হয়।
সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এসিডিজি’র অভীষ্ট ৩.৪ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি অর্জনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন এফসিটিসি’র আলোকে সংশোধন করা প্রয়োজন।’’
সেমিনারের প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘তুলনামূলক সহজলভ্য হওয়ায় আমাদের দেশে তামাক সেবনের হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি। তামাকজনিত মৃত্যু আমাদের আতঙ্কিত করে তুলছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে দুটি হাতিয়ার একটি আইন, অন্যটি ট্যাক্স বৃদ্ধি করা। ট্যাক্স বাড়ানো হলে তামাকের ব্যবহার কমে আসে। এজন্যই তামাক কোম্পানিগুলো সব সময় আইন তৈরি ও ট্যাক্স বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এমতাবস্থায় অধূমপায়ীদের সুরক্ষা প্রদান এবং নতুন প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর দিক থেকে বাঁচাতে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাস করতে হবে।’’
সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা-তুন-নেসা মালিকের বলেন, ‘‘নিকোটিন শিশু-কিশোর ও তরুণদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে; মূলত মস্তিষ্কের সেই অংশে যা মনোযোগ, নতুন কিছু শেখা, মেজাজ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। তাই আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখতে এখনই বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে।’’
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মসূচি পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনুবিভাগ) শেখ মোমেনা মনি ও মহাপরিচালক মো. আখতারউজ-জামান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলমগীর হোসেন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, বিসিআইসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের এন্টি-টোব্যাকো অ্যাডভোকেসি’র মেম্বার সেক্রেটারি ডা. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইনসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/রাজীব