ঢাবির গাছে ঝুলন্ত মরদেহ: হত্যা নাকি আত্মহত্যা?
Published: 22nd, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগ সংলগ্ন ফুটপাতে মেহগনি গাছের মগডাল থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলন্ত এক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে উদ্ধার হওয়া ওই মৃত ব্যক্তির নাম আবু সালেহ (৪৫)। তিনি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নয়া মসজিদ রোডের বাসিন্দা মো. আব্দুর রব ও লুৎফুন্নেছার ছেলে।
আবু সালেহর এ রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ঢাবি চলছে বেশ গুঞ্জন। স্থানীয়দের মনেও দেখা দিয়েছে নানা সন্দেহ। এটা হত্যাকাণ্ড কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মরদেহের গায়ে ছিল সবুজ রঙের টি-শার্ট এবং সাদা রঙের কোট। পরনে নীল রঙের ট্রাউজার। মরদেহ উদ্ধারের সময় বিষয়টিকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করছিলেন পথচারী এবং উপস্থিত জনতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদ মিনার এলাকার একজন রিকশাচালক বলেন, “আমরা ভোরে লাশটি দেখতে পাই। তবে অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে। এটাকে আত্মহত্যা বলে মনে হয় না।”
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ঢাবি শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা সকালে ক্লাস করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। এ সময় দেখি, কিছু মানুষ জটলা হয়ে উপরে তাকিয়ে আছে। পরে গিয়ে দেখি একটা লাশ ঝুলছে।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মোর্শেদ আলম শফিক বলেন, “তিনি হয়ত ফুটপাতে ঘুমাতেন। কাপড় ফুটপাতে পড়ে ছিল।”
আবু সালেহর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনের একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মরদেহের গলায় অর্ধচন্দ্রাকৃতির কালো দাগ রয়েছে। এছাড়া মৃতদেহে আর কোন আঘাত বা সন্দেহজনক কোন কিছু মেলেনি।
বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন তারই ছোট দুই ভাই আবু হায়দার ছোটন ও মোহাম্মদ আলী এবং ভাতিজা মো.
এ সময় ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার নগরকসবা গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুর রব। তবে তারা পরিবার নিয়ে বহু বছর ধরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ কালীগঞ্জের নয়াবাড়ি এলাকায় থাকেন। আবু সালেহ অবিবাহিত। এলাকাতে একটি টেইলার্সে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। সেখান থেকেই কিছু বাজে বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় পড়ে জড়িয়ে পড়েন মাদকে।
তিনি জানান, প্রথম প্রথম তাকে সবাই বুঝিয়ে মাদক থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। তবে দিন দিন তার আসক্তি বাড়তে থাকে। গত ৩ বছর আগে টেইলার্সের কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ি থেকেও চলে এসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে থাকা শুরু করেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাড়িতে যেতেন। সেখানে দু-একদিন থেকে মা-বাবা, ভাইদের কাছ থেকে কিছু টাকা-পয়সা চেয়ে নিয়ে আবার হুট করেই চলে আসতেন। তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হত না।”
তিনি আরো জানান, গত পাঁচদিন আগে সালেহ বাড়িতে গিয়েছিল। তখন মায়ের কাছ থেকে ওষুধ কেনার কথা বলে ১ হাজার টাকা নিয়ে আসেন। এরপর তার সঙ্গে আর কারো যোগাযোগ হয়নি। আজ বুধবার দুপুরে শাহবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে তার মরদেহ উদ্ধার হওয়ার খবর শুনতে পান তারা।
আবু সালেহের আরেক ছোট ভাই আবু হায়দার ছোটন জানান, মাদকাসক্ত হওয়ার পর গত ৭-৮ বছর আগে একবার নিজেদের বাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সেই আগুন নেভানো হয়। এরপর গত ৫ বছর আগে একবার কেরানীগঞ্জের ওই এলাকার একটি বড় গাছে ওঠে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্থানীয়রা দেখে তাকে গাছ থেকে নিচে নামান।
তিনি জানান, আবু সালেহ মাঝে মধ্যেই উদ্ভট কথাবার্তা বলতেন। বিশেষ করে যারা মারা গেছেন, তারা নাকি তাকে ডাকাডাকি করেন বলেও মাঝেমধ্যেই বলতেন পরিবারের সদস্যদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, “মৃত্যুর কারণ জানতে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পুলিশ অবগত করবে।”
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না। পোস্ট মর্টেম আসতে ৫-৭ দিন লাগতে পারে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে প্রাণ হারাল দুজন
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সোমবার সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ দুই কিশোর নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও ভাওড়পাড়া এলাকার আজহারুল ইসলামের ছেলে আশিকুর হক (১৬) ও একই গ্রামের মক্তবপাড়া এলাকার আকরামের ছেলে মিনহাজ (১৬)। আশিকুর এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
স্থানীয়রা জানান, ঈদের দিন মোটরসাইকেলে তিন বন্ধু পাশের টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজারের কাছে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মিনহাজ মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে আশিকুর মারা যায়। এ ঘটনায় তাদের সঙ্গে থাকা অপর বন্ধু জিহাদ গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি রাশেদুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে সখিপুর থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।