বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে ‘নিরপেক্ষ সরকার’ লাগবে
Published: 22nd, January 2025 GMT
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা, সংস্কার প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়াসহ আরো অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন।’’
ফখরুল বলেন, ‘‘আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং বিশ্বাস করি, আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে যেমন দেখেছি, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু নয়। এটা পসিবল, যদি গভর্নমেন্ট চায়, ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা আগস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।’’
বিএনপি সুনির্দিষ্ট কোনো সময়ে নির্বাচন চায় কি না, জানতে চাইলে দলের মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা সুনির্দিষ্ট সময় ওইভাবে বলতে চাই না এজন্য যে, তাতে তো লাভ হবে না। কারণ গভর্নমেন্টকেও চাইতে হবে। আলাদা পলিটিক্যাল পার্টিগুলোকেও চাইতে হবে, সবাই মিলে একসঙ্গে চাইতে হবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি, অসম্ভব কিছু নয়। খুবই সম্ভব এবং যত দ্রুত হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল।’’
আরো পড়ুন:
নেতাকর্মীদের বক্তৃতা ও স্লোগানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে: ফখরুল
ঋণ খেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না বিএনপি, ফখরুলের অঙ্গীকার
নির্বাচনটা বিএনপি যে সময়ে আশা করছে, সেই সময়ে না হলে কী পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব এবং আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন-আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।’’
সংস্কার কাজ শেষ করা পর্যন্ত বিএনপি অপেক্ষা করতে রাজি কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘পার্লামেন্ট ছাড়া সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। সংবিধানে পরিবর্তন আনা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব নয়। সেজন্যই তারা মনে করেন, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তো এই সরকারের মেয়াদ থাকবে, এটাই সবার ধারণা- এ নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন পরিচালনা করা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।’’
এই সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ্য করছি, ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছে। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবে, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।’’
সরকারের নিরপেক্ষতা এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখন কোনো প্রশ্ন নেই। তাদের কাছে কোনো প্রশ্ন নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে যে সম্পর্কটা ছিল, তারা মনে করেন তা-ই আছে।’’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশকিছু দাবি নিয়ে বিএনপির আপত্তি নিয়ে জানতে চাইলে দলের মহাসচিব বলেন, ‘‘আপত্তির কারণ খুব সঙ্গত। আমরা তো একটা সংবিধানের অধীনে আছি। রাষ্ট্রের যে সংবিধান, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা আছি। এই সরকারও শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানের অধীনে।’’
ঢাকা/নাজমুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ সরক র র ফখর ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ঘরবাড়ি ও তাঁবুর মতো আশ্রয়কেন্দ্রও ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দখলদার দেশটি। পাশাপাশি আট সপ্তাহ ধরে উপত্যকায় খাদ্য, ওষুধ ও ত্রাণসামগ্রী প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে।
আলজাজিরার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাতভর এবং বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতের কাছে একটি তাঁবুতে তিন শিশু এবং গাজা শহরের একটি বাড়িতে এক নারী ও চার শিশু নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক এক হামলায় স্থানীয় সাংবাদিক সাঈদ আবু হাসানাইনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে কমপক্ষে ২৩২ সাংবাদিক নিহত হলেন।
গাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকা স্পষ্টতই ইসরায়েলি সেনা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের সাক্ষী হচ্ছে। এখানকার অক্ষত ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকারীরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘ইসরায়েলের আক্রমণের কোনো বিরতি নেই, কোনো করুণা নেই, কোনো মানবতা নেই।’
প্রায় দুই মাস ধরে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তা অবরোধ করে রাখায় গাজার মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। এটিকে জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ‘ফিলিস্তিনি জীবনের ইচ্ছাকৃত ধ্বংসাবশেষ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকা এখন সম্ভবত ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলা শুরুর পর ১৮ মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অপুষ্টির সম্মুখীন নারী ও শিশুদের বিপজ্জনক ও বিপর্যয়কর ক্ষতির কথা তুলে ধরেছে। তারা অনেকেই পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং শিশুর খাবারের অভাবের মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েলের গাজায় সাহায্য পাঠাতে অব্যাহত অস্বীকৃতি ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি আদেশকে লঙ্ঘন করে। সেই আদেশে দুর্ভিক্ষ ও অনাহার রোধে জরুরি ভিত্তিতে উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) আগামী সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত গণশুনানির একটি সূচি প্রকাশ করেছে। সেখানে গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ, এনজিওর কার্যকলাপকে অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের আইনি বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী সোমবার শুরু হতে যাওয়া এ শুনানির আগে প্রায় ৪৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে, বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ১৮ মাসে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ হাজার ৩০৫ জন নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৬ জন আহত হয়েছেন।