ঢাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুই সেনাসদস্যসহ ৪ জন গ্রেপ্তার: পুলিশ
Published: 22nd, January 2025 GMT
রাজধানীর বনানীতে ডাকাতির প্রস্তুতির সময় দুই সেনাসদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, মঙ্গলবার রাতে মগবাজার এলাকায় ডাকাতি করার জন্য একটি দল বনানী এলাকায় প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরোয়ার বলেন, ২১ জানুয়ারি রাতে ১৭ নম্বর সড়কের স্টার কাবাবের সামনে তারা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেখানে এ সময় উপস্থিত থাকা আরো দুই সেনাসদস্যসহ তিনজন পালিয়ে গেছেন। গ্রেপ্তার দুই সেনাসদস্যকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দুজনকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম জানাননি ওসি।
এদিকে, গ্রেপ্তার দুই সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে সেনা আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআর-এর পক্ষ থেকে দুই সেনাসদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
আইএসপিআর জানায়, গ্রেপ্তার দুই সদস্যকে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সেনা আইনে বিচার করা হবে।
এর আগে, গত বছরের ১১ অক্টোবর রাতে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় ও কার্যালয়ে ডাকাতি হয়। এ সময় সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরা ডাকাতরা নিজেদের যৌথ বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দেন। তারা ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করেন বলে গৃহকর্তা ও পুলিশ সূত্র জানায়। এই ডাকাতির তদন্তে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। ওই কর্মকর্তা র্যাব সদর দপ্তরের একটি শাখার প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালে তাকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অকালীন (বাধ্যতামূলক) অবসরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া এই ডাকাতির ঘটনায় র্যাব ৪-এ কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের (নন-কমিশন্ড) নাম এসেছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয় বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ ই স ন সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো অপরাধী যাতে ছাড় না পায়
অপরাধীদের ধরতে ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ঢাকায় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। সেদিন দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে পরিস্থিতি টের পাবেন।’ গত কয়েক দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়, অবনতি হয়নি। এর অর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভাষায়, অপরাধীরা কিছুটা টের পেয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বরাতে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, রাজধানীতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৭৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৬৫টি তল্লাশিচৌকি পরিচালনার পাশাপাশি ৫৫০টি টহল দল দায়িত্ব পালন করেছে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরিচালিত অপারেশন ডেভিল হান্টে ১৯ দিনে ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই হালনাগাদ খবর জানাচ্ছে ডিএমপি। এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাত তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকে নজির সৃষ্টি করেছিলেন। পরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও রাতে সাংবাদিকদের ডেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছেন।
গত কয়েক দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি না হলেও ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। যে অপরাধীরা পাড়ায় পাড়ায় মানুষের আতঙ্কের কারণ ছিল, তারাই এখন আতঙ্কের মধ্যে আছে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হবে অপরাধীরা যেখানেই পালিয়ে থাকুক না কেন, খুঁজে বের করে বিচারে সোপর্দ করা।
পবিত্র রমজান মাস প্রায় সমাগত। রোজার সময় কেনাকাটা ও ইফতার, সাহ্রি উপলক্ষে রাতে মানুষের চলাচল বাড়বে। ফলে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির আশঙ্কাও বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে রোজার মাসে রাতে অভিযানও জোরদার করতে হবে।
এখানে আরও একটি কথা জরুরি মনে করি। অপরাধীদের কতজন ধরা পড়েছে, কেবল তা নিয়ে অভিযানের সাফল্য নিরূপণ করা যাবে না। যারা ধরা পড়েনি, তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। কোনো এলাকায় অভিযান জোরদার করে কোনো এলাকায় শিথিল করা যাবে না। দেশের সব এলাকায় একযোগে অভিযান পরিচালিত হলে অপরাধীরা ধরা পড়তে বাধ্য।
অতীতে এ ধরনের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। অনেক সময় দেখা গেছে, সরকার অপরাধী হিসেবে যাদের ধরেছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের লোক। এরপর নানা প্রভাব খাটিয়ে তাদের বের করে আনা হয়েছে। যেহেতু বর্তমান সরকার পুরোপুরি অরাজনৈতিক, ফলে তাদের ‘নিজস্ব লোক’ থাকার কথা নয়। প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। দেখতে হবে যাতে নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয় কিংবা অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে না যায়।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি।
আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচনের বিষয়ে জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, সেটা বাস্তবায়ন করাও কঠিন হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাইরে আমরা আরেকজন উপদেষ্টাকেও দেখলাম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে সবাই এগিয়ে আসবেন আশা করি। অন্তত ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কেবল নির্দেশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ না করে টহল তদারকির কাজটি সরেজমিনে দেখতে পারেন।