চৌগাছায় প্রতারণা চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার
Published: 22nd, January 2025 GMT
চৌগাছা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র অবশেষে ধরা পড়েছে। এই চক্রটি নারী সদস্যদের ব্যবহার করে ফাঁদ পেতে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতো।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনায় রুস্তমপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে মোস্তাক হোসেন বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা তদন্তে চৌগাছা থানা ও যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের যৌথ অভিযানে নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, চক্রের সদস্য রুপালী খাতুন (৩৫) নামে এক নারী মোস্তাক হোসেনের ছোট ভাই আব্দুর রহমানকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। প্রথমে রুপালী তাকে পৌর শহরের কালিতলা এলাকার জনৈক সাইফুল ইসলামের বাড়িতে ডেকে নেয়। সেখানে চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে।
পরে তাকে আফরা গ্রামের জহিরুল ইসলামের বাড়িতে নিয়ে আটকানো হয়। ওই ঘরে তাকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
চৌগাছা থানা ও যশোর ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে রুপালী খাতুনকে প্রথমে ধরা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রুপালী খাতুন, নান্নু মিয়া, জাহিদ হাসান, দেলোয়ার হোসেন, হৃদয় মহিফুল ও জাকিয়া সুলতানা।
উদ্ধার হওয়া ভিকটিম আব্দুর রহমান জানান, চক্রের সদস্যরা তার মোবাইল ফোন থেকে তার পরিবারের কাছে প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে এক লাখ টাকা দাবি করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে বিউটি পার্লারের আড়ালে তাদের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তারা প্রথমে মিসকল বা টেক্সটের মাধ্যমে ভিকটিমদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে দেখা করার প্রস্তাব দিত। এরপর চক্রের সদস্যরা সুযোগ বুঝে ভিকটিমদের ফাঁদে ফেলে তাদের নগ্ন ছবি বা ভিডিও ধারণ করত। এই ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে ভিকটিমদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা আদায় করত চক্রটি।
এ চক্রের প্রতারণার শিকার হন চৌগাছা সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। তিনি চক্রের দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার অর্ধনগ্ন অবস্থায় একজন নারীর সঙ্গে জোরপূর্বক ভিডিও ধারণ করে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
চৌগাছার এক কলেজ অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জীবন এবং সম্মান ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই প্রতারণা চক্রের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে প্রশাসনের পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।”
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারণা রোধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জনগণকে এ ধরনের ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকা/রিটন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সদস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নুরুল হক নুর কি অন্য দলে যাচ্ছেন? কী বলছেন রাশেদ খান
‘গণ অধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে নুরুল হক নুরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা এখন এগুলো প্রচার করছেন মূলত মিডিয়ায় হাইপ (অতিরঞ্জিত) করার জন্য যে, তাদের দলে অনেক মানুষজন যোগদান করছে।’ ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপিতে) যোগ দিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে সমকালকে এ কথা বলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার রাতে সমকালের মামুন সোহাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপিতে যোগদানের কথা একটি জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে- এর সত্যতা কতটুকু- জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নুরুল হক নুর গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি। তিনি এই মুহূর্তে ইতালিতে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছেন। এখন আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, আমিও দেখলাম হান্নান মাসুদ (জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা) একটি বক্তব্য দিয়েছেন, আমার মনে হয় গণমাধ্যমের উচিত একপাক্ষিক বক্তব্য প্রচার না করে উভয়ের বক্তব্য নেওয়ার পরে একটি সিদ্ধান্তে আসা বা সেই বক্তব্য প্রচার করা। তিনি যা বলেছেন সেই কথাটার সত্যতা বা ভিত্তি কতটুকু?’ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।
রাশেদ খান বলেন, ‘বিভিন্ন সময় নাহিদ ইসলাম (অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, বর্তমানে এনসিপির আহ্বায়ক), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম (বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বের জায়গায় যারা রয়েছেন তারা আমাদের ডেকেছেন এবং আমাদের মতামত নিয়েছেন। মন্ত্রী পাড়ায় তাদের যেখানে বাসা সেখানেই সেই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তাদের দল গঠন থেকে শুরু করে জোট গঠন বা বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে। শুধু আমাদের সাথেই না এ রকম অনেকের সাথেই তারা বসেছে, কথা বলেছে, আলোচনা করেছে। সেখানে একটা সময় তারা আমাদের তাদের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বলি বাংলাদেশের রাজনৈতিকভাবে জোটের আসলে কতটুকু ভিত্তি আছে তা দেখেছি। জোটের মধ্যে মনোমালিন্য ভুল বোঝাবুঝি, জোট ভাঙার সমস্যা আছে। সেক্ষেত্রে আপনারা যেহেতু আমাদের সাথে রাজনীতি করেছেন, একসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন করেছি, এক সাথে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেছি, আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছি সুতরাং আমরা একসাথে কিছু করতে পারি। একীভুত হয়ে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় কিছু করার উদ্যোগ নিতে পারি। যেহেতু এখন গণমানুষের নতুন কিছু আকাঙ্খা আছে, গণতন্ত্রের আকাঙ্খা আছে এই বিষয়গুলো শুধু এভাবেই আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য যারা বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করছি তারা এক হয়ে কীভাবে বড় পরিসরে কোনো কিছু করা যায় এই জিনিসটা তারাই কিন্তু প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তারা এখন এভাবে প্রচার করছেন মিডিয়ায় যে, অনেক মানুষজন তাদের সঙ্গে যোগদান করছে। দেখেন তারা যখন দল গঠন করল, তার আগে কিন্তু এ ধরনের আলোচনা দেখলাম যে বিএনপি, গণ অধিকার পরিষদ বা অন্যান্য দলের নেতারা তাদের দলে যোগদান করছে। আসলে এটি কতটুকু সত্য? তারা মূলত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের ভাগিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা তাদের সরকারি যে ক্ষমতা সেটা কিন্তু ব্যবহার করছে। তারা বলছে যে, আপনারা আমাদের সাথে আসেন, আপনাদেরকে আমরা অমুক আসন থেকে নির্বাচন করার সুযোগ দেব এবং নির্বাচনের সমস্ত খরচ দেব।’
তিনি বলেন, ‘তারা এক্ষেত্রে এক ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ কথাগুলো আমি বলতে বাধ্য হলাম। কারণ আমার জায়গা থেকে এ ধরনের বিতর্কে সূত্রপাত করা, সেটি নিয়ে সমালোচনা, আলোচনা, পাল্টা বক্তব্য দেওয়া আসলে ঠিক না। এখন যেহেতু এটি নিয়ে বিভক্তি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং আপনি প্রশ্ন করলেন, জানতে চাইলেন সেটির আলোকে কিন্তু এই কথাগুলো বলা। আমি এই কথাগুলো বলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’
তাহলে নুরুল হক নুর অন্য কোনো দলে যাচ্ছেন না- এটি নিশ্চিত কিনা জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এই দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে উঠে এসেছে। এই দল তো কোনো কিংস পার্টি না, বা কোন সরকারি বলয়ের মধ্য থেকে গড়ে ওঠেনি। সুতরাং এই দল ছেড়ে তো অন্য কোনো দলে নুরুল হক নূরের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
তিনি বলেন, ‘যদি সেটিই হতো তাহলে তো আমরা দল গঠন না করে কেউ আওয়ামী লীগে, কেউ বিএনপিতে, কেউ জাতীয় পার্টিতে, কেউ জামায়াতে যোগ দিতাম। আমার মনে হয় না নুরুল হক নুর আসলে সেই দলে যুক্ত হবেন এমন কোনো কথা বলেছেন। আমার মনে হয় মিডিয়াই হাইপ (অতিরঞ্জিত) তৈরি করার জন্যই তারা এ রকম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার করছে। এর আগে দল গঠনের আগেও একই ধরনের বক্তব্য প্রচার করেছিল যে নুরুল হক নুর তাদের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। কমিটি তো হয়ে গেছে, তিনি তো যুক্ত হননি।’