ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. প্রিয়াংকা গোপের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড.

মামুন আহমেদ।

নবীন শিক্ষার্থীদের পক্ষে সেউতি সাহা সৃজা এবং বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সৌম্য স্নিগ্ধা ভঞ্জা অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, “সাধনা, চর্চা ও মনোযোগ সহকারে পড়াশোনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। দেশের সংগীত চর্চার উৎকর্ষ সাধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষা, গবেষণা, সহশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমগুলো যথাযথভাবে ডকুমেন্টেশন করতে হবে। এসব বিষয় যথাযথভাবে উপস্থাপন করা গেলে আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আরো সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নীত হবে। এ ক্ষেত্রে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি।”

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের অসীম সাহস ও অকুতোভয় নেতৃত্বে চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদের দুর্গ ভেঙে পড়ে। রাজনীতিতে সুদীর্ঘকালের অনিয়ম, গোষ্ঠীবাজি ও দুর্নীতির দোর্দণ্ড প্রতাপের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায় সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষের প্রতিবাদমুখর মিছিলের প্রথম সারিতে ছিলেন তরুণ নেতাকর্মী। এরই ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারে তরুণদের অংশগ্রহণ ও রাজনীতিতে তাদের দলের আত্মপ্রকাশ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, তরুণরা যে বড় সুযোগ ও দায়িত্ব পেয়েছেন, তার সযত্ন মূল্য তারা দেবেন। 

গণঅভ্যুত্থানের মাত্র ৯ মাস দূরত্বে দাঁড়িয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তরুণ নেতৃত্বের অনেকে তৃণমূলকে ভুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেল বা সচিবালয়ে বেশি আগ্রহী। সবচেয়ে উদ্বেগজনক, মাত্র ক’মাস আগে সরকারের দুর্নীতি ও জবাবদিহিহীনতার বিরুদ্ধে রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়া তারুণ্যের একটি অংশের বিরুদ্ধেই বিপুল দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগ উঠছে। 
গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী তরুণদের রাজনৈতিক দল এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দীন তানভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ খাত থেকে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সচিবালয়ে পদায়ন, বদলি, নিয়োগ ইত্যাদিতে তদবির ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তিনি পাজেরো গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, নিজের এলাকায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে পোস্টার, বিলবোর্ড বানিয়ে জনগণকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর দলীয় পদ সম্প্রতি স্থগিত করা হয়। 

রোববার রাতে একুশে টিভির ‘ফ্যাক্ট চেক’ অনুষ্ঠানে সব অভিযোগ অস্বীকার করে তানভীর বলেছেন, তাঁকে এক শুভাকাঙ্ক্ষী পাজেরো গাড়ি দিয়েছেন। এলাকায় প্রচারণার কাজে তিনি ‘মাত্র ১৫-১৬ লাখ টাকা’ খরচ করেছেন। ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তীর্ণ তিনি এত টাকা কোথা থেকে পেলেন– প্রশ্নের উত্তরে তানভীর বলেন, তিনি চাকরি ও ব্যবসা করেন।
আরেক ছাত্রনেতা সারজিস আলমও তাঁর এলাকায় দুই শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে শোভাযাত্রা করে বিপুলভাবে সমালোচিত হয়ে বলে বসেন, এসব তাঁর দাদার সম্পত্তি! অথচ ২০১৮ সাল থেকে সামাজিক মাধ্যমে তাঁর সাধারণ জীবনযাপনের ছাপ স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করবার পেছনে যে কারণ সারজিস দেখিয়েছেন, তাও যুক্তিসংগত নয়। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আমলে হলে সিট পেতে হলে প্রত্যেক ছাত্রকে ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে হতো। তিনি তাই ছাত্রলীগের মিছিলে গিয়েছেন। অথচ ছাত্রলীগে যুক্ত না হয়ে নানা অত্যাচার-অপমান সহ্য করেও হলে থাকার অজস্র উদাহরণ আছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সারজিসের আবেগমথিত উত্তাল বক্তৃতাও কি হলে থাকবার জন্য?

এছাড়া, ছাত্রনেতাদের গাড়িবিলাসের জবাব কী? আজ মার্সিডিজ, কাল পাজেরো, পরশু আরও বড় কোনো ব্র্যান্ড। কীভাবে এসব গাড়িতে চড়েন? টেলিভিশন টকশোতে এই প্রশ্নের উত্তরে ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছিলেন, একেক দিন একেক বড় ভাই একেক গাড়ি ব্যবহার করতে দেন! আরেক ছাত্রনেতা হান্নান মাসুদও বলেছেন, জামায়াতসংশ্লিষ্ট এক বড় ভাই তাঁকে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন!

এমনও জানা যায়, পাঁচতারকা হোটেলে রীতিমতো স্যুট নিয়ে দিনের পর দিন থাকতে শুরু করেছেন কোনো কোনো ছাত্রনেতা। 
সমকাল জানাচ্ছে, ‘২২ এপ্রিল যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও (ছাত্র উপদেষ্টা) তুহিন ফারাবিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়’ (২৫.০৪.২৫)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন এই দুই এপিএস-পিও।

২.
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পিতা বিল্লাল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগরের আকবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। আসিফ যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, সেই মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্য তাঁর পিতার ঠিকাদারি লাইসেন্সের খবর ছড়ালে সমালোচনা শুরু হয়। সেই প্রেক্ষিতে আসিফ ফেসবুকে পোস্ট লিখে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চান। 
পুত্র স্বয়ং মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, পিতা এক স্কুলের প্রধান  শিক্ষক– দু’বছর আছে অবসর গ্রহণের; এই অবস্থায় সেই মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঠিকাদারি লাইসেন্স নেওয়ার আগ্রহের পেছনের কারণ সন্ধানে ত্রিকালদর্শী হতে হয় না নিশ্চয়ই। এখানে স্বার্থের সংঘাতই শুধু নয়, পরিমিতিবোধের অভাবও প্রকট।   

৩.
পরিমিতিবোধের অভাব তরুণ নেতৃবৃন্দের কারও কারও মধ্যে যেমন, এনসিপির কার্যক্রমের মধ্যেও তা দেখা যাচ্ছে। জাঁকজমকের সঙ্গে পার্টির অভিষেক অনুষ্ঠান কিংবা পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠানের চেয়ে তৃণমূলের হাটবাজার-গঞ্জই হওয়া উচিত এনসিপির মূল গন্তব্য। ওখানেই বাংলাদেশের প্রাণ, বাংলাদেশের কেন্দ্র। 

গত ৯ মাসে তিন ধাপে এনসিপি বর্তমান অবয়বে এসেছে; প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পরের ধাপে নাগরিক কমিটি, এরপর ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে এনসিপি। এই পুরো সময়টিতে এনসিপি অনেক বেশি রাজধানীকেন্দ্রিক, মিডিয়ানির্ভর। ‘৩৬ জুলাই’ ক্ষমতা কাঠামোর যে দম্ভ চূর্ণ করার অবিনাশী আয়োজনে নেতৃত্ব দেন এই ছাত্রনেতারা– তার প্রত্যয় ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। এই অভূতপূর্ব আন্দোলনের সময় এনসিপি নেতাদের কারও গাড়ি-বাড়ি বা শান-শওকত ছিল না। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তপ্ত রোদে এক বোতল পানি দু’তিনজনে ভাগ করে পান করে স্লোগান দিতেন; আজ তাদের কারও কারও কেন মনে হচ্ছে– রাজনীতি করতে চাইলে শতাধিক গাড়িবহরের শোভাযাত্রা করতে হবে, রঙিন পোস্টারে ছেয়ে দিতে হবে নিজের এলাকা? কিংবা পাঠ্যপুস্তকের কাগজের ব্যবসা করে ধনী হতে হবে? বদলি বাণিজ্যে বড়লোক হতে হবে? কিংবা জামায়াতের নেতার টাকায় প্রাডো গাড়ি চালাতে হবে? 
এসবই ঘুণে ধরা ক্লিশে রাজনীতির পরম্পরা! রাজনীতি করতে হলে প্রচুর অর্থ থাকতে হবে। টাকা দিয়ে লোক (ভোট) কিনে নিতে হবে; এই ধারণা থেকে গণঅভ্যুত্থানজয়ী তরুণরা বের হয়ে আসতে না পারলে কে পারবেন? যে ক্লিশে বড়লোকি রাজনীতি বছরের পর বছর দেশকে দমবন্ধ করে রেখেছে, এর থেকে পরিবর্তনের কাণ্ডারি গণঅভ্যুত্থানজয়ী তরুণ ছাড়া আর কে হবে? তাই দেশের তরুণ ছাত্র নেতাকর্মীকে বিলাসী জীবনের মোহ ছেড়ে যৌক্তিক প্রশ্ন ও দাবি নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। 

আত্মজিজ্ঞাসার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনবিরোধী অবস্থান না নিয়েও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের অটুট অবস্থান দৃঢ় করতে হবে। বড় দল বিশেষত বিএনপি মৌলিক সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে; এনসিপিকে এখানে সুস্পষ্ট ও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যায় আসতে হবে– কেন এক ব্যক্তির শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশের মানুষের মুক্তি অনিবার্য; এর পক্ষে তাদের কথা বলে যেতেই হবে। এনসিপিকে যেতে হবে তৃণমূলে, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। সবই হতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে তার ভোট সব চলে আসবে এনসিপির গোলায়– এত সরল নয় দেশের নির্বাচনী রাজনীতি। বরং আওয়ামী লীগ যে বীভৎস একনায়কতন্ত্র পরিচালনা করেছে; সেই তথ্য মনে রেখে আগামী দিনে একনায়কতান্ত্রিক শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে তরুণ নেতৃবৃন্দের দাবি ও স্বপ্ন জোরালোভাবে উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠা করাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন প্রাণপ্রবাহ আনতে পারে।

মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল; সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ