নিখোঁজের ৩ দিন পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার
Published: 22nd, January 2025 GMT
তিন দিন আগে নিখোঁজ হওয়া বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার্থী রাব্বি হাওলাদারের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে বাড়ির পাশের বাগান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন সিকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, স্কুলছাত্র রাব্বি হাওলাদার (১৮) বাবুগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু হাওলাদারের ছেলে। সে উপজেলার মোহনগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
তিনি বলেন, “রাব্বি হাওলাদার মাদকাসক্ত ছিল। এলাকার বখাটে ও মাদকাসক্তদের সাথে চলাফেরা করত। গত ১৯ জানুয়ারি রাত একটার দিকে বাসা থেকে বের হয় সে। পরে রাত দুইটার দিকে তার বড় ভাই কল করলে সে পরে আসবে জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বলে। এরপর থেকে রাব্বির কোনো খোঁজ ছিল না।”
নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রাব্বির পরিবার। পুলিশ তদন্ত করে বাড়ির পাশের পূর্ব রহমতপুর গ্রামের গোডাউন এলাকার বাগানে রাব্বির লাশের সন্ধান পায়। সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওসি বলেন, “রাব্বির মাথায় ধারালো অস্ত্রের জখম রয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”
ঢাকা/পলাশ/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার মতো দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই’
বাবা ইজিবাইকচালক, মা গৃহিণী। এক টুকরো ভিটে ও টিনের ঘর ছাড়া কিছুই নেই। এই দারিদ্র্যও দমাতে পারেনি মেধাবী মেয়েটিকে। দারিদ্র্যকে জয় করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এমন কৃতিত্বের অধিকারী নন্দিনী রানী সরকার মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামের অনিল চন্দ্র সরকারের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
নন্দিনীর সাফল্যে পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষক ও এলাকার লোকজন সবাই খুশি। তবে আর্থিক টানাপড়েনে মেয়ের পড়াশোনার পরবর্তী খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই নন্দিনীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
নন্দিনী পিএসসিতে জিপিএ ৫, জেএসসিতে জিপিএ ৪.৪৬, এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান।
নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। প্রতিবেশীরা নন্দিনীর সাফল্যে তাদের বাড়িতে এসে শুভ কামনা জানাচ্ছেন। বাড়ির উঠানে রান্না করছেন নন্দিনীর মা সীমা সরকার। মায়ের পাশে বসে রয়েছেন নন্দিনী ও তাঁর বোন বিনা।
নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার জানান, ইজিবাইক চালিয়ে দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চলে। তাঁর দুই মেয়েই বেশ মেধাবী। মেয়েদের যে চাহিদা, সেটা বাবা হিসেবে কখনও পূরণ করতে পারেননি। মেয়ের স্কুলের শিক্ষকদের কারণে তাঁর মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে তিনি অনেক আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেলে পড়ানোর মতো টাকাপয়সা নাই আমার। মেডিকেলে মেয়ের পড়াশোনায় কেউ যদি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসত তাহলে চিন্তা থাকত না।’
নন্দিনীর মা সীমা রানী সরকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। পড়ার জন্য নাই কোনো টেবিল-চেয়ার। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়ে এতদূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’
নন্দিনী রানী সরকার একজন সফল চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছি। স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার সামর্থ্য নাই, এত টাকা দিয়ে আমাকে পড়াবেন। সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা করা সম্ভব হবে। আমার স্বপ্ন, আমি যেন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারি। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন নন্দিনী। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তাঁর স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি। এখন মেডিকেলে ভর্তির জন্য নন্দিনীর পাশে তার স্কুল থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমরা নন্দিনীর মতো অদম্য মেধাবীদের দিয়ে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। মেধাবীদের এগিয়ে নিতে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।