বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক করা হয়েছে।

তিনি আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগের শাহজাহানপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সেক্রেটারি। তার নামে হত্যাচেষ্টাসহ ১৭ টি মামলা আছে বলে জানা গেছে। 

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এলাকায় স্থানীয় একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি। পরে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তাকে চিনতে পেরে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। 

এদিকে নুরুজ্জামানকে আটকের খবর পেয়ে তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে আসেন।

তিনি জানান, সরকার পতনের পর তিনি ঢাকা খিলক্ষেত এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় থাকতেন। তার ছেলেমেয়েদের ঢাকায় স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করছিলেন। পাশাপাশি ঢাকায় তিনি ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করছিলেন। এনআইডি কার্ড পরিবর্তনের জন্য একজনের সঙ্গে দেখা করতে আজ তিনি জাহাঙ্গীরনগরে এসেছিলেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল বলেন, “বিকেলে শিক্ষার্থীরা ফোন দিয়ে আটকের খবর জানায়। নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে আমরা নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসি। পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রক্টরের উপস্থিতিতে আমরা আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে তাকে সোপর্দ করি।” 

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “আমরা তাকে থানায় নিয়ে এসেছি। তার নামে মামলা রয়েছে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মোহ কাঠের নৌকা: বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি

‘মোহ কাঠের নৌকা’ উপন্যাসে আধুনিক সমাজের জটিলতা, পেশাগত টানাপোড়েন, ব্যক্তিগত সংকট ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় চরিত্র রবীন গ্রাম থেকে শহরে এসে উচ্চশিক্ষা শেষে এক অখ্যাত অনলাইন সংবাদমাধ্যমে যোগ দেয় বড় স্বপ্ন নিয়ে। বাস্তবতা তাকে হতাশ করে তোলে। অফিসের রাজনীতি, অনিয়মিত বেতন ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা তাকে এক ধরনের পেশাগত দুঃখবোধে ফেলে। এ ছাড়া রবীনের জীবনে একের পর এক সংকট আসে– নিজের একাকিত্ব, পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সমাজের নানা অসংগতি। একসময় তার পরিচয় হয় জলি নামে এক মেয়ের সঙ্গে, যার বাবা গুমের শিকার। জলি চরিত্রের মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেন গুম হওয়া পরিবারের কষ্ট, অনিশ্চয়তা ও অবহেলার যন্ত্রণা। অন্যদিকে, গ্রামের স্মৃতি রবীনের মনে গভীরভাবে গেঁথে থাকলেও বাস্তবতা সেখানে গিয়ে বদলে গেছে। বিদেশের অর্থে বদলে যাওয়া গ্রামীণ সমাজ, পারিবারিক মূল্যবোধে পরিবর্তন এবং দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তাকে আরও ব্যথিত করে তোলে। রবীনের জীবনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রুবি– এক ব্যাংক কর্মকর্তা, যে নিজেও জীবন সংগ্রামে এগিয়ে এসেছে। রুবির মা চায় রবীনের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হোক। সম্ভবত রুবিও তা চায়। জীবনের নানা দোলাচলের মধ্যে রুবিই রবীনের জীবনে একমাত্র স্থিরতার প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রশ্ন থেকে যায়, রবীন কি পারবে এই ‘মোহ কাঠের নৌকা’য় উঠে জীবনের নিরাপদ তীরে ভিড়তে? নাকি বাস্তবতার ঢেউ সেই নৌকাকে ডুবিয়ে দেবে?
রবীন: রবীন একজন স্বপ্নবান যুবক, যে সাংবাদিকতা দিয়ে সমাজে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়। চারপাশের বাস্তবতায় ধীরে ধীরে তার ভেতরের স্বপ্নগুলো নিঃশব্দে ভেঙে পড়ে। রবীনের চরিত্রে দেখা যায় একজন সাধারণ ছেলের ভেতরের গভীর অনুভব, লড়াই আর স্বপ্নভাঙার হতাশা। সে জীবনের কাছে হেরে গিয়েও চুপচাপ বাঁচতে থাকে– যেমনটা করে অসংখ্য বাস্তব মানুষ।
রুবি: রুবি একজন সফল নারী– প্রাইভেট ব্যাংকের কর্মকর্তা। প্রেম, পারিবারিক টানাপোড়েন আর অতীতের জটিল স্মৃতি তাকে সব সময় তাড়া করে। মা অনেক ত্যাগে তাকে গড়েছেন, কিন্তু সেই মাও অসুখী। রুবির চরিত্রে উঠে এসেছে নারীর আত্মত্যাগ, গভীর আবেগ, জীবনের এমন অনিশ্চয়তা; যা মানুষকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়।
মানবসমাজের সহজাত প্রবণতা হলো, আমরা সত্যের মুখোমুখি হতে চাই না। আমরা চোখ ফিরিয়ে নিতে চাই কঠিন বাস্তবতা থেকে। অথচ    ‘ মোহ কাঠের নৌকা’ সেই তেতো সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়। এই উপন্যাস কেবল একটি গল্প নয়, বরং আমাদের সময়, সমাজ এবং সম্পর্কের এক নির্মোহ আয়না। এদের মধ্য দিয়ে সমাজের মধ্যবিত্ত মানসিকতা, অতিমাত্রায় আত্মমর্যাদা বোধের চাপ এবং সম্পর্কের টানাপোড়েন অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। লেখক এই উপন্যাসে একটি সময়কে ধরার চেষ্টা করেছেন যেখানে শহর ও গ্রামের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজব্যবস্থা, আর্থসামাজিক অসংগতি, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ব্যক্তিগত জীবনের অস্থিরতাগুলো একসঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে। 
সময়ের এই চলমান প্রবাহে লেখক সম্পর্কের জটিলতা নিয়েও অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি মন্তব্য রেখেছেন– ‘আশ্রয়হীন মানুষরা আশ্রয়ের তিল পরিমাণ সন্ধান পেলেই ভুলে যায়, সব আশ্রয় তার জন্য ইতিবাচক নাও হতে পারে।’
এই বাক্যটিই যেন উপন্যাসের সারকথা হয়ে ওঠে। বাস্তবতা ও অনুভূতির দ্বন্দ্বে মানুষের ভেতরের একাকিত্ব, অস্থিরতা ও টিকে থাকার লড়াই– সবই মূর্ত হয়ে উঠেছে এই উপন্যাসে। এ ধরনের বাস্তবভিত্তিক উপন্যাস পাঠকের কাছ থেকে কিছুটা ধৈর্য দাবি করে। কারণ– এখানে রোমাঞ্চ নেই, নেই চমকজাগানো মোড়। অনেকটা যেন নিরবধি বয়ে চলা নদীর মতো, যার স্রোতের গভীরতা উপলব্ধি করতে হয় ধীরে ধীরে। মনে হয়েছে, ‘মোহ কাঠের নৌকা’ শুধু উপন্যাস নয়, এটি সমাজের বিবেকের কাছে একটি প্রশ্নপত্র– যেখানে এই সমাজে কি সত্যিই কারও নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার নৌকা আছে, নাকি বাস্তবতার ঢেউয়ে সবকিছুই তলিয়ে যায়?
যারা বাস্তববাদী সাহিত্য, সাংবাদিকতার ভেতরকার জটিলতা কিংবা সমাজের দ্রুত পরিবর্তনের অভিঘাত নিয়ে ভাবতে ভালোবাসেন, তারা এই উপন্যাস পাঠে গভীর আনন্দ পেতে পারেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ
  • লেখক যখন শল্যচিকিৎসক
  • ফেরার ইঙ্গিত দিলেন শুভ
  • অন্য অভিবাসীদের আটকে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান ট্রাম্প
  • আল্লাহর জন্য কাঁদার উপায়
  • টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং: দেশসেরা বুয়েট, ২য় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবির অবস্থান কত
  • মোহ কাঠের নৌকা: বাস্তবতার এক প্রতিচ্ছবি
  • জাবিতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের দাবিতে শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি
  • কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি, আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশন
  • কুয়েট ভিসিকে অপসারণের দাবিতে আমরণ অনশনের ঘোষণা জাবি শিক্ষার্থীদের