আমাদের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে অবিশ্বাস: আফজাল হোসেন
Published: 22nd, January 2025 GMT
চিরসবুজ নায়ক আফজাল হোসেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নির্মাতা ও চিত্রশিল্পী। এছাড়া লেখালেখিও করেন। প্রায় সময়ই তার লেখায় উঠে আসে নানা ইস্যু। এবার তার লেখায় উঠে এল সমাজে অবিশ্বাসের এক প্রতিচ্ছবি।
আজ (২২ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকে অবিশ্বাস। অবিশ্বাস সেখানে নিয়মিত ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে চলেছে। সেই বাচ্চারা ছোট-বড় কিংবা মাঝারি, নানা সাইজের। পৃথিবীর বহু দেশে অবিশ্বাস বসবাসের জন্য জায়গা পায় না। আমাদের মনে তার জন্য অগাধ জায়গা। সে জায়গা অতি নিরাপদ। অবিশ্বাস বাসা বেধেই বুঝে ফেলে, এখন থেকে কখনোই উচ্ছেদ হতে হবে না।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কোনও বাড়ির ঠিকানা খুঁজছেন, কেউ একজন দেখিয়ে দিলো- বাম দিক দিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ডাইনে রাস্তা পাবেন। সে রাস্তা ধরে খানিকটা সামনে গেলে বামে পাবেন আপনার ঠিকানা। বিস্তারিত শুনে আপনি এগোচ্ছেন কিন্তু মনে সন্দেহ নিশপিশ করবে, লোকটা ভুল রাস্তা দেখিয়ে দেয়নি তো!’
দোকানে কোনো পণ্য কেনার পরও অবিশ্বাসের চিত্রটা একই। এই নায়কের মতে, ‘দোকান থেকে অনেক দরাদরি করে কোনও জিনিস কিনেতে যে দাম বলেছিল তার থেকে ছয়শত টাকা কমাতে পেরে খুশিমনে কি বাড়ি ফিরতে পারেন? মনে হতে থাকবে ছয়শত টাকা কমানো গেছে তার মানে আরও শ’খানেক হয়তো কমানো যেতো। দোকানদার ব্যাটা অনেক ঠকিয়েছে। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে দিয়েছে। মাত্র তিনটা ওষুধের নাম। মনে সন্দেহ লাফঝাঁপ দেয়া শুরু করে দেবে- এই কটা ওষুধে রোগ ভালো হবে কি?’
অফিসের বিষয় তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘কোনও বড় কর্তার অফিসরুমের বাইরে কেউ অপেক্ষা করছেন। জানানো হয়েছে রুমে একজন রয়েছেন, তিনি বের হলে আপনি যাবেন। কুড়ি বাইশ মিনিট পরে কর্তার ঘর থেকে একজন নারী বেরিয়ে আসেন। বাইরে অপেক্ষারত মানুষটা উঠে দাঁড়ান। যে সমস্যা নিয়ে কর্তার কাছে আসা- তা মাথা থেকে হুট করে সরে গেছে। মাথায় ঢুকে পড়েছে বড় কর্তা আর বেরিয়ে যাওয়া মেয়েটি। এতটা সময় তাকে বাইরে বসিয়ে রেখে ঘরে আসলে কি হচ্ছিলো?’
আফজাল হোসেনের মতে, ‘মাছ বিক্রেতা বলছে, দ্যাখেন স্যার টাটকা মাছ। মনে মনে হাসবে ক্রেতা- ব্যাটা পচা মাছ টাটকা দেখানোর নতুন কোনও ত্বরিকা পেয়ে গেছে বোধহয়! পদে পদে এইরকম অসংখ্য বিষয়ে অবিশ্বাস ছায়ার মতো আমাদের অনুসরণ করে চলেছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে খবর শোনে, দেখে, পড়ে- সবই অভ্যাসবশত, বিশ্বাস করেনা। কেউ একজন বলল- নিরাশ হওয়ার কিছু নেই, দেশের ভালো হবে। শোনে, বিশ্বাস করে না। আবার কেউ যদি খুবই বিরক্তি দেখিয়ে বলে- দেশের ভালো হবে, তার কোনও লক্ষণ দেখি না। এরকম মন্দ কিছু বললে, শুনলে মন সন্তুষ্ট হয়। মন্দ কথা সহজে বিশ্বাস করে ফেলে।’
সবশেষে তিনি লিখেছেন, ‘মন্দে আমাদের আস্থা বেড়েছে। কারও প্রসঙ্গে, যে কোনও বিষয়ে মন্দ কথা মন্দভাবে বললে আমাদের বিশ্বাস করতে আরাম লাগে। ভালোয় আমাদের প্রবল অবিশ্বাস আর সকল মন্দে সপে দিয়েছি মন। এটা ভয়ঙ্কর এক রোগ। যার চিকিৎসা করা প্রয়োজন, তাও মনে করি না কেউ, বরং যদি কাউকে শোনানো হয়, এটা একটা রোগ- উল্লেখ করা মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। মন্দে মন্দে আমরা আরও রুগ্ন হয়ে মরবো। জীবনভর অবিশ্বাসের সুখ ভোগ করে করে যখন মরবো- তখনও কি আমাদের মরদেহ অবিশ্বাস আক্রান্ত থাকবে?’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আফজ ল হ স ন ব শ ব স কর
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মাপাড়ের মাটি বিক্রি করছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা, হুমকিতে পুলিশ একাডেমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। এতে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের ফসলের জমি, অন্যদিকে লাগাতার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, বিজিবি ক্যাম্প, স্লুইসগেট, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, গুচ্ছগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এ ব্যাপারে ১৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বড়াল নদের উৎসমুখে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার ভয়াবহতা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে এলাকাটি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করে চারঘাটের ঐতিহ্য খয়েরবাগান সৃজন এবং একটি মিনি শিশুপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন।
উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিবেদন ও উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মতলেবুর রহমান ওরফে মতলেব। তাঁকে সহযোগিতা করছেন উপজেলা বিএনপির একজন নেতা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে শত শত ড্রামট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনায় পাঠানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারঘাট বাজারের স্লুইসগেট সংলগ্ন পদ্মা ও বড়াল নদের মোহনা বালুমহাল হিসেবে সরকার প্রতিবছর ইজারা দিত। কিন্তু বালু তোলার কারণে ক্যাডেট কলেজ, পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়ায় উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় দুই বছর ধরে বালুমহালের ইজারা বন্ধ আছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বালুমহাল সংলগ্ন পদ্মাপাড়ের জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদল নেতা মতলেবুর রহমান। সেখান থেকে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসন সেখানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও মতলেব ও তাঁর লোকজন বালু তোলা বন্ধ করেননি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে মাটি কাটার জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেখানে সরকারি খাসজমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এ সময় জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্প ‘ইনোভেশনস ফর ক্লাইমেট-স্মার্ট আরবান ডেভেলপমেন্টের’ প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙন রোধে সেখানে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়েরগাছ রোপণের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এদিকে ওই দিন দুপুরে গাছের চারা রোপণের পর রাত থেকেই আবারও মাটি কাটা শুরু হয়। মাটি পরিবহন করতে গিয়ে রোপণ করা গাছগুলোও নষ্ট করা হয়। সীমানা নির্ধারণের লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়। এরপর স্থানীয় লোকজনের ফসল নষ্টের অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বিকেলে সেখানে অভিযানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। অভিযানে সহযোগিতায় ছিল মাত্র চারজন আনসার সদস্য।
আগামী মৌসুমে এই এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।পার্থ সরকার, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-২–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মীরা এক্সকাভেটর মেশিন অকেজো করার চেষ্টা করলে সেখানে উপস্থিত হন মতলেবুর রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশি অস্ত্রধারী। এ অবস্থায় যথেষ্ট ফোর্স না থাকায় অভিযান না চালিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয় উপজেলা প্রশাসন। ওসি নিজে সেখানে উপস্থিত থাকলেও মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে থেকেও ঘণ্টাখানেক সময়েও থানার পুলিশ ফোর্স সেখান উপস্থিত হননি।
প্রকাশ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রশাসনের লোকজনকেই মাটি খননে জড়িত লোকজন ঘিরে ধরেন। তাই চারঘাটের মুক্তারপুর থেকে নৌকা নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভুট্টাখেতের পাশ থেকে নদীপাড়ের মাটি খনন করা হচ্ছে। ৩০-৪০ ফুট গভীরে মাটি কাটায় সমতল ভূমি থেকে যন্ত্রটির মাথা দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার ছবি তুলতে দেখেই খাদের মধ্যে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন এই প্রতিবেদককে সালাম দেন। ছবি নিয়ে চলে আসতে গেলে একজন পেছন পেছন দৌড়ে আসতে থাকেন। ডাকতে ডাকতে বলেন, ‘ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান, ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান।’
স্থানীয় গোপালপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, পদ্মা নদীতে অসময়েও ভাঙন চলছে। একের পর এক ফসল জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন আগামী বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে। যেভাবে নির্বিচার নদীর পাড়ের মাটি পুকুরসমান গর্ত করে কাটা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা নদীর মধ্যে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে নদীর পাড়ে যেখানে ফসল ফলত, এখন সেখানে দুই মানুষ গর্ত হয়ে গেছে। যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান