বিদিশার বিরুদ্ধে এরশাদের সম্পত্তি জবরদখলের অভিযোগ
Published: 22nd, January 2025 GMT
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক জবরদখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট।
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ আনা হয়। ‘এরশাদপুত্র শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের নিরাপত্তাজনিত বিষয়, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের হয়রানি এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি জবরদখলের ষড়যন্ত্রের’ বিষয়টি তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো.
লিখিত বক্তব্যে কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা। তিনি এমন দাবি করলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কেও থাকতে পারবেন না।
তিনি বলেন, কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর চার মাস পরই পুত্র এরিককে খাওয়ানোর কথা বলে বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢোকেন এরশাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। ট্রাস্টের অসিয়ত না মেনেই নিকেতনে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকতেও তিনি আর প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হননি। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট পার্কের পুরনো সব কর্মচারীদের বিদায় করে দেন তিনি। বর্তমানে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কেই অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি স্বেচ্ছাচারিতামূলক জীবনযাপন করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরিকের খরচ বাবদ প্রতিমাসে বনানীর কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুইটি ফ্লাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা অর্থ দাবি করে আসছেন ট্রাস্টের কাছে। বিদিশা একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছেন এরিক এরশাদকে।
ট্রাস্টভুক্ত সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে আমরা এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করিনি। দু’টি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতিমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে। এছাড়া অসিয়তনামায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা বলা হলেও সেটা আমি নিজ অর্থায়নে করেছি। এরশাদের রেখে যাওয়া একটি টাকাও উত্তোলন করা হয়নি। এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যাংক থেকে কিছু লভ্যাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছে। যাতে অবৈধভাবে কেউ অর্থ উত্তোলন করতে না পারে।’
বর্তমানে ট্রাস্টের অধিকাংশ সম্পদ বিদিশা জবরদখল করে রেখেছেন- এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পার্ক দখলের মাধ্যমে এরশাদের রেখে যাওয়া অর্থের জন্য ট্রাস্ট সদস্যদের একের পর এক হুমকি নিয়ে যাচ্ছেন বিদিশা এবং তার নিযুক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী। বিদিশার বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে ধরে ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানান মামুনুর রশিদ।
এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশিদ বলেন, ট্রাস্টের পুনর্গঠনের স্বার্থে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। ট্রাস্টের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে এরশাদ পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকবেন। আমি ট্রাস্টের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই হস্তক্ষেপ, জবরদখল বন্ধ হোক। ট্রাস্ট নিয়মমাফিক চলুক। পারিবারিকভাবে এটার সুরাহা হোক।’
বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি। এরিক এরশাদও অভিযোগ করেছেন। উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে আপাতত আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচবছর আগে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি রেকর্ডকৃত এরিকের একটি অডিওবার্তা সাংবাদিকদের শোনানো হয়। সেখানে এরিককে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এতিম একটি ছেলে, আমাকে বাঁচান। আমার মা বিদিশা এখানে অবৈধভাবে থাকছেন।’ এছাড়া সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বরাবর পাঠানো এরিক এরশাদের একটি চিঠিও পড়ে শোনানো হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব দ শ এরশ দ য গ কর ছ এর ক র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা
পটুয়াখালীর দুই সাংবাদিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম ফারুক অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে মির্জাগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে কামরুজ্জামান জুয়েল নিজেকে মির্জাগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক দিনকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি উল্লেখ করেছেন।
আসামিরা হলেন– দৈনিক সমকালের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি মুফতী সালাহউদ্দিন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এম কে রানা ও মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম সুবিদখালী এলাকার বাসিন্দা মাসুম হাওলাদার।
গত ১৬ এপ্রিল দৈনিক সমকালে ‘চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর বিএনপি নেতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একই দিন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনলাইনে ‘মাসে ৫০ হাজার টাকা না দিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি বিএনপি নেতার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মাসুম হাওলাদার তাঁর ফেসবুকে প্রতিবেদনটি শেয়ার করায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সংবাদগুলো ভিত্তিহীন, মনগড়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এগুলো বাদীর সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে।
এ ব্যাপারে মুফতী সালাহউদ্দিন ও এম কে রানা জানান, কারও মর্যাদা ক্ষুণ্ন নয়, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেছেন তারা। এমন কিছু না ঘটলে রাসেল মৃধা অভ্যন্তরীণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার দাবি করে অভিযোগ প্রত্যাহারে কেন থানায় আবেদন করেছেন?
এদিকে মামলাটি নিয়ে পটুয়াখালীর সাংবাদিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং সাংবাদিকদের হয়রানি করতে এটি করা হয়েছে জানিয়ে দ্রুত মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।