জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক জবরদখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট। 

আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ আনা হয়। ‘এরশাদপুত্র শাহাতা জারাব এরশাদ এরিকের নিরাপত্তাজনিত বিষয়, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের হয়রানি এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি জবরদখলের ষড়যন্ত্রের’ বিষয়টি তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন ট্রাস্টের সদস্য কাজী মো.

মামুনুর রশিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর ও সদস্য খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু। 

লিখিত বক্তব্যে কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল সম্পাদিত এক দলিলে ট্রাস্ট গঠন করে তার বিষয়-সম্পত্তির বড় অংশ দান করেন এরশাদ। ট্রাস্টের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ছেলে শাহাতা জারাব এরিকের ভরণ-পোষণ ও জনহিতকর কাজে ব্যয় হবে সম্পত্তি থেকে অর্জিত আয়। ট্রাস্টের আয় ভোগ ও কর্মকাণ্ডে অংশীদার হতে পারবেন না বিদিশা। তিনি এমন দাবি করলে তা আইনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি তিনি প্রেসিডেন্ট পার্কেও থাকতে পারবেন না। 

তিনি বলেন, কিন্তু এরশাদের মৃত্যুর চার মাস পরই পুত্র এরিককে খাওয়ানোর কথা বলে বারিধারা প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢোকেন এরশাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। ট্রাস্টের অসিয়ত না মেনেই নিকেতনে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট থাকতেও তিনি আর প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের হননি। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রেসিডেন্ট পার্কের পুরনো সব কর্মচারীদের বিদায় করে দেন তিনি। বর্তমানে বিদিশা প্রেসিডেন্ট পার্কেই অবস্থান করছেন এবং সেখানে তিনি স্বেচ্ছাচারিতামূলক জীবনযাপন করছেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এরিকের খরচ বাবদ প্রতিমাসে বনানীর কুয়েত মৈত্রী মার্কেটে একটি দোকান, গুলশান ও বনানীতে দুইটি ফ্লাট থেকে প্রাপ্ত ভাড়া প্রায় তিন লাখ বিশ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু বিদিশা সিদ্দিক এরিক এরশাদের ভরণ-পোষণের উসিলা দিয়ে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা অর্থ দাবি করে আসছেন ট্রাস্টের কাছে। বিদিশা একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছেন এরিক এরশাদকে।

ট্রাস্টভুক্ত সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘২০২২ সালের ১৪ আগস্টের পর থেকে আমরা এরশাদের রেখে যাওয়া ব্যাংক থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন করিনি। দু’টি ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা ইতিমধ্যে মূল টাকায় যোগ হয়েছে। এছাড়া অসিয়তনামায় বিভিন্ন জনহিতকর কাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা বলা হলেও সেটা আমি নিজ অর্থায়নে করেছি। এরশাদের রেখে যাওয়া একটি টাকাও উত্তোলন করা হয়নি। এরিকের ভরণ-পোষণের জন্য শুধুমাত্র একটি ব্যাংক থেকে কিছু লভ্যাংশ উত্তোলন করা হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংকে চিঠি দিয়ে লেনদেন বন্ধ রেখেছে। যাতে অবৈধভাবে কেউ অর্থ উত্তোলন করতে না পারে।’

বর্তমানে ট্রাস্টের অধিকাংশ সম্পদ বিদিশা জবরদখল করে রেখেছেন- এমন অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পার্ক দখলের মাধ্যমে এরশাদের রেখে যাওয়া অর্থের জন্য ট্রাস্ট সদস্যদের একের পর এক হুমকি নিয়ে যাচ্ছেন বিদিশা এবং তার নিযুক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী। বিদিশার বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে ধরে ট্রাস্টকে মুক্ত করতে প্রশাসনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে ও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানান মামুনুর রশিদ। 

এক প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশিদ বলেন, ট্রাস্টের পুনর্গঠনের স্বার্থে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। ট্রাস্টের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে এরশাদ পরিবারের সদস্যসহ জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকবেন। আমি ট্রাস্টের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। 

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই হস্তক্ষেপ, জবরদখল বন্ধ হোক। ট্রাস্ট নিয়মমাফিক চলুক। পারিবারিকভাবে এটার সুরাহা হোক।’

বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি। এরিক এরশাদও অভিযোগ করেছেন। উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই তদন্তাধীন এ বিষয়ে আপাতত আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচবছর আগে ২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি রেকর্ডকৃত এরিকের একটি অডিওবার্তা সাংবাদিকদের শোনানো হয়। সেখানে এরিককে বলতে শোনা যায়, ‘আমি এতিম একটি ছেলে, আমাকে বাঁচান। আমার মা বিদিশা এখানে অবৈধভাবে থাকছেন।’ এছাড়া সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বরাবর পাঠানো এরিক এরশাদের একটি চিঠিও পড়ে শোনানো হয়। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব দ শ এরশ দ য গ কর ছ এর ক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইউজিসির নজরদারি সংস্থার অধীনে যাচ্ছে সাত কলেজ

রাজধানীর আলোচিত সাত কলেজ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে এসেছে সরকার। এ জন্য আপাতত একটি ‘নজরদারি সংস্থা’ গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য এ সংস্থার নেতৃত্ব দেবেন। সাত অধ্যক্ষের যে কোনো একজন সংস্থাটির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন। নজরদারি সংস্থার কার্যালয় হবে সাত কলেজের যে কোনোটির ক্যাম্পাসে।

এ ছাড়া সাত কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তি কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, ভর্তি ও রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং হিসাব বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সাময়িক কাঠামো থাকবে, যা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এসব কাজের জন্য সাত কলেজের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পৃথক ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদার স্বতন্ত্র কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে সাত কলেজ পরিচালিত হবে।
সরকারের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীনের সই করা চিঠিতে এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ এই উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক। 
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কমিটির সদস্য।
এ কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে একাধিক সভায় মিলিত হয়ে সরকারের কাছে যে সুপারিশমালা পেশ করেছে, তা সরকার গ্রহণ করেছে।
কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ জাপান সফরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে তিনি সমকালকে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সমমর্যাদার স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে সাত কলেজ কীভাবে চলবে, সে বিষয়ে আমরা সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়েছি।

গতকাল ঢাবি উপাচার্যকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, ইউজিসি এবং অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাত কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত ঢাবির সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সাত কলেজ হলো– ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থাকা রাজধানীর এই বড় সাতটি কলেজকে ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়েছিল। প্রায় ৮ বছর ঢাবির অধীনে চলে সাতটি কলেজ। গত ২৭ জানুয়ারি অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাবি। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এখন সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্ন্তবর্তী সরকার। তার আগ পর্যন্ত এই নজরদারি সংস্থার অধীনে চলবে সাত কলেজ।

কেমন হবে নজরদারি সংস্থার কাঠামো
নজরদারি সংস্থার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট শাখা মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সাত কলেজের অনলাইন ভর্তি কমিটির মাধ্যমে আবেদন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কলেজগুলোর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এই কাঠামো।

সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রশাসনিক জটিলতা ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে বর্তমান ব্যবস্থা চালু রাখবে।’
আরও বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ পর্ষদে (একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট) জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদিত হতে হবে।’
উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ অনুসারে, ‘সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদানের জন্য স্ব স্ব কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে; নিয়োগপ্রাপ্তির পরেই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়েল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।’


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ