জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘‘জাতীয় পার্টির সাথে বৈষম্য শুরু হয়েছে। রাজনীতিতে আমাদের কোণঠাসা করতে চাচ্ছে সরকার। আমাদের স্বাভাবিক রাজনীতিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মামলা হচ্ছে। সে হিসাবে আমরা নব্য ফ্যাসিবাদের শিকার মনে হচ্ছে।’’

বুধবার (২২ জানুয়ারি) জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে নরসিংদী জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

‘দেশ এখন সঠিকভাবে চলছে না’ জা‌নি‌য়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এমন গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মাঝে হাহাকার উঠছে। সাধারণ মানুষ আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। আধাপেট খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।’’

‘‘এককথায় দেশে অভুক্ত ও অর্ধভুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়লে তখন যে কোনো অজুহাতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এতে অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হলে রাজনীতিতে অস্থিতিশীল ও বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে’’ ব‌লেও মন্তব‌্য ক‌রেন তি‌নি।

জাপা চেয়ারম‌্যান ব‌লেন, ‘‘বর্তমান সরকার স্বাভাবিকভাবে দেশ চালাতে পারছে না। সরকার চেষ্টা করছে, তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু তারা সফল হতে পারছে না। তাদের নির্দেশ ও পরিকল্পনা অনেক সময় কার্যকর হচ্ছে না, এটাই বাস্তবতা।’’ 

‘‘এমন বাস্তবতায় দেশে একটি শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন যাতে জনগণের ইচ্ছার সঠিক প্রতিফলন হয়, সে ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার ছাড়া এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব মনে হচ্ছে না’’ ব‌লেও ম‌নে ক‌রেন তি‌নি।

সরকা‌রের সমালোচনা ক‌রে জিএম কা‌দের ব‌লেন, ‘‘দেশ ও বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে যে পথে হাঁটতে হবে, সরকার সে পথে হাঁটছে বলে মনে হচ্ছে না। দেশের ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দলের সাথে বর্তমান সরকার ঐক্য করছে। এতে দেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যাচ্ছে আলোচনার বাইরে।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ দিতে পারছে না গণমাধ্যম, যেটা বিগত সরকারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দেশের মানুষ বিচার পাচ্ছে না, সেবা পাচ্ছে না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সহায়তা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশ একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে ধাবিত বলে আশঙ্কা করছি।’’ 

জাতীয় পার্টি নরসিংদী জেলা শাখার ১১১ সদস্য বিশিষ্ট অনুমোদিত কমিটির সাংগঠনিক সভায় ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পার্টির মহাসচিব মো.

মজিবুল হক চুন্নু, জেলা সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মো. শামীম হাসান ও সদস্য আবু সাঈদ স্বপন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নি, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন খান, দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান ও জেলা নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত র জন ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। 

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসলমানসহ সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে। 

এ বছর তিন ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৯ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ৩-৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। 

সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র‌্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। 

র‌্যাব জানায়, সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র‌্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ ৫টি ব্যাটালিয়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। 

ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে উঁচু ভবনসমূহে বাইনোকুলারসহ র‌্যাব সদস্য নিয়োগ এবং র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও, র‌্যাব কর্তৃক ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ-পথে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে তিন ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ইজতেমা এলাকার আশপাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকসেবন, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। 

মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ ইজতেমা এলাকায় অবৈধ টোল বা চাঁদা আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

ইজতেমা এলাকায় র‌্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। 

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য র‌্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোনো ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। 

এ ছাড়াও যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র‌্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র‌্যাব ব্যাটালিয়নকে অবহিত করণসহ র‌্যাবকে (র‌্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে মোবাইল: ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
  • ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব
  • ‘ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্য’
  • বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর