বিমানে তল্লাশি করে বোমা পাওয়া যায়নি: কর্তৃপক্ষ
Published: 22nd, January 2025 GMT
ইতালির রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি ঘিরে পুরো বিমানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে এতে বোমা সদৃশ বা সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা থেকে ইতালির রোমে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ওই এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি আজ বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে রোম থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় ফ্লাইটে ২৫০ জন যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু ছিলেন।
কিন্তু ফ্লাইট অবতরণের আগে বিমান থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়, ওই বিমানের কেউ বা কোনো যাত্রী বোমা বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছেন। পরে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ফ্লাইটটি অবতরণের পর বিমানটিকে নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিমানের ভেতর, যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কোথাও বোমার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এ সময় পর্যন্ত বিমানের সব যাত্রীর ইমিগ্রেশন বন্ধ ছিল। তাদের বিমানবন্দরের ভেতরে একটি নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ফ্লাইটটি অবতরণের পর সব যাত্রী এবং ক্রুকে নিরাপদে বের করা হয়েছে। যাত্রীদের টার্মিনালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মাঝ আকাশে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ও সামরিক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষের পর নদীতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সবাই নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টায় রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩-এর কাছাকাছি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্য দিয়ে দেশটির ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার আমেরিকান এয়ারলাইন্স জানায়, ওয়াশিংটনে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি কানসাসের উইচিটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে যাচ্ছিল। ওয়াশিংটন ডিসির মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ ও মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা জানান, সামরিক হেলিকপ্টারটিতে তিন সেনা সদস্য ছিলেন। এটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে উড্ডয়ন করেছিল।
ওয়াশিংটন ডিসির দমকল বাহিনীর প্রধান জন ডোনেলি জানান, সংঘর্ষের পর দুটি উড়োযানই হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হওয়া তিনি কারও বেঁচে থাকার আশা করছেন না।
বৃহস্পতিবার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই দুর্ঘটনাকে ‘দেশের রাজধানীর অন্ধকার ও বেদনাদায়ক রাত’ এবং ‘ভয়াবহ অনুপাতের ট্র্যাজেডি’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিধ্বস্ত হওয়া যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ফ্লাইট ডেটা (উড্ডয়ন–সংক্রান্ত তথ্য) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার হয়েছে।
এ ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিবিএস নিউজ ও এবিসি নিউজকে বৃহস্পতিবার বলেছে, আমেরিকান এয়ারলাইনসের ওই উড়োজাহাজের রেকর্ডিং যন্ত্রগুলো (ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) উদ্ধার হয়েছে, যা সাধারণত ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এখন ব্ল্যাক বক্সের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করবে। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডই এ ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে পটোম্যাক নদীতে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়েছে। তবে ডুবুরিদের আশা, সব দেহাবশেষ তারা উদ্ধার করতে পারবেন।
কী ঘটেছিল
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির দক্ষিণ-পশ্চিমে পটোম্যাক নদীর তীরে অবস্থিত রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে কাছে পৌঁছানোর সময় কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বোম্বার্ডিয়ারের তৈরি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের (ফ্লাইট ৫৩৪২) সঙ্গে সিকোরস্কি ব্ল্যাক হক আর্মির একটি হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়।
অবতরণের আগে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা পাইলটদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তারা রানওয়ে ৩৩ এ অবতরণ করতে পারে কিনা। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলো দেখিয়েছিল- কন্ট্রোলারদের কথায় সাড়া দিয়ে পাইলটরা উড়োজাহাজ অবতরণ করার কথা জানান।
বিধ্বস্ত হওয়ার ৩০ সেকেন্ডেরও কম সময় আগে এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারটিকে জিজ্ঞাসা করেন, যে তারা উড়োজাহাজটি দেখতে পাচ্ছে কিনা।
দুর্ঘটনার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের বলতে শোনা যায়, ‘ক্র্যাশ, ক্র্যাশ, ক্র্যাশ, দিস ইজ অ্যালার্ট থ্রি।’
এক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার বলেন, আমি শুধু একটি আগুনের গোলা দেখেছি। নদীতে নামার পর থেকে কিছুই দেখিনি।
একটি সিসিটিভি ক্যামেরা দেখা যায়, সংঘর্ষে দুটি উড়োযানেই আগুন লাগে। পরে পটোম্যাক নদীতে পড়ে যায়
নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে যা জানা গেছে
ইউএস ফিগার স্কেটিং গভর্নিং বডি জানিয়েছে, উড়োজাহাজাটিতে থাকা ৬০ জন যাত্রীর মধ্যে বেশ কয়েকজন মার্কিন আইস স্কেটার, পরিবারের সদস্য এবং ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতা শেষে একটি ক্যাম্প থেকে ফিরে আসা কোচ ছিলেন। হেলিকপ্টারে থাকা তিনজনই সৈনিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, অন্তত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা জীবিতদের সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজের যাত্রীদের মধ্যে রুশ আইস স্কেটিং প্রশিক্ষক এবং সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এক দম্পতি ছিলেন। ইয়েভজেনিয়া শিশকোভা ও ভাদিম নাউমভ ১৯৯৪ সালে ফিগার স্কেটিংয়ের যুগল ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তারা ১৯৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সেখানেই তরুণ স্কেটারদের তারা প্রশিক্ষণ দিতেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতের সংখ্যা ঘোষণা করা না হলেও মার্কিন সিনেটর রজার মার্শাল জানিয়েছেন, উড়োজাহাজের সবাই না হলেও তাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি লিখেছেন, উড়োজাহজটি তার সঠিক পথেই বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু হেলিকপ্টারটি অনেকক্ষণ ধরেই সরাসরি উড়োজাহাজটির দিকে এগোচ্ছিল।
রাতের আকাশ যথেষ্ট পরিষ্কার ছিল। বিমানে আলো জ্বলছিল। হেলিকপ্টারটি উপরে উঠে যেতে পারত, নিচে নেমে আসতে পারত কিংবা উল্টো দিকে ঘুরে যেতে পারত। কেন তা করা হল না? কন্ট্রোল টাওয়ার থেকেই বা কেন হেলিকপ্টারকে এ সংক্রান্ত সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হলো না?
কন্ট্রোল টাওয়ারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প লিখেছেন, হেলিকপ্টারের পাইলট উড়োজাহাজটি দেখেছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে কন্ট্রোল টাওয়ার কেন হেলিকপ্টারটিকে কী করতে হবে তা জানায়নি?
ট্রাস্প এ দুর্ঘটনাকে ‘ভয়ানক বিপর্যয়’ উল্লেখ করে বলেন, এই রাত কত ভয়াবহই না ছিল! খুবই খারাপ একটি পরিস্থিতি গেছে। দেখে মনে হচ্ছে এটা ঠেকানো যেত। ভালো হলো না।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, এ দুর্ঘটনার তদন্ত করা হবে।
পরে পেন্টাগনের পোস্ট করা এক ভিডিওতে হেগসেথ বলেন, এই দুর্ঘটনা একটি ট্র্যাজেডি। ঘটনার সময় উড়োজাহাজটি করিডোরে এবং সঠিক উচ্চতায় ছিল কিনা তা তদন্তে দ্রুত জানা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ যত উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা
২০০১ আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি জেট নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ২৬০ জন নিহত হন এবং বিমানের বাইরে পাঁচজন মারা যান। বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় হতাহত হয় ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বিমান ধ্বংস হয়।
আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি হাইজ্যাক করা বিমান বোস্টন থেকে ছেড়ে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ভবনে বিধ্বস্ত হয়, এতে ৯২ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। বিধ্বস্তের সময় আশপাশে থাকা ১ হাজার ৬০০ জন মারা যান। আরেকটি হাইজ্যাক করা ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের জেটও বোস্টন থেকে উড্ডয়ন করে এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত হানে, এতে ৬৫ জন যাত্রী নিহত হন। আর দুর্ঘটনার স্থানে থাকা প্রায় ৯০০ জন মারা যান।
ওয়াশিংটন-ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে তৃতীয় একটি হাইজ্যাক করা আমেরিকান এয়ারলাইনসের জেট পেন্টাগনের ওপর বিধ্বস্ত হয়, এতে ৬৪ জন যাত্রী নিহত হন। দুর্ঘটনার স্থানে থাকা প্রায় ১২৫ জন মারা যান।
আর ইউনাইটেড এয়ারলাইনের হাইজ্যাক করা জেটটি নিউজার্সি থেকে উড্ডয়ন করে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়, এতে ৪৪ জন যাত্রী নিহত হন।
এছাড়া ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে দেশটিতে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে। ২০০৩ সালে ইউএস এয়ারওয়েজ এক্সপ্রেসের একটি টার্বোপ্রপ বিমান উত্তর ক্যারোলিনার শার্লটে উড্ডয়ন করার পর দুর্ঘটনায় পড়ে। উড়োজাহাজের ২১ জন আরোহী মারা যান। পরের বছর ২০০৪ সালে করপোরেট এয়ারলাইনসের একটি টার্বোপ্রপ বিমান মিজৌরির কার্কসভিলে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে, এতে ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন নিহত হন। ২০০৫ সালে ফ্লোরিডার মায়ামি থেকে উড্ডয়নের পর চক’স ওশান এয়ারলাইনের একটি টার্বোপ্রপ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ২০ জন আরোহীর সবাই নিহত হন। ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের লেক্সিংটন থেকে উড্ডয়নের সময় রানওয়েতে ছিটকে পড়ে কমএয়ারের একটি রিজওনাল জেট। এতে বিমানের ৫০ জন আরোহীর মধ্যে ৪৯ জন মারা যান। ২০০৯ কলগান এয়ারের একটি টার্বোপ্রপ বিমান নিউইয়র্কের বাফেলোতে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে বিমানে থাকা ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। আর বিমানের বাইরের একজন নিহত হন।