গাঁজা না পেয়ে ট্রাকচালককে হত্যা করে হেলপার
Published: 22nd, January 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দাফনের প্রায় ৩৮ দিন পর কবর থেকে তরিকুল শেখ (৩২) নামের এক ট্রাকচালকের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের উত্তর কয়া বাইতু্ল মামুর কবরস্থান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই এলাকার ছাবদুল শেখের ছেলে ছিলেন।
আদালতের নির্দেশে মরদেহটি উত্তোলন করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.
পুলিশ বলছে, গাঁজা না পেয়ে চালককে হত্যা করেছিলেন হেলপার আল আমিন।
স্বজনের ভাষ্য, পাওনা টাকার জেরে তরিকুলকে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিলেন হেলপার আল আমিন শেখ। তিনি খোকসার শিংগুড়িয়ার চরপাড়া এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে।
তবে পুলিশ জানায়, নিহত তরিকুল শেখ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ট্রাকচালক ছিলেন। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তরিকুল মোংলার বন্দরে থেকে পঞ্চগড় যাচ্ছিলেন। পথে কুষ্টিয়ার বাইপাস সড়কের জগতি এলাকায় পৌঁছালে তার কাছে গাঁজা চান হেলপার আল আমিন। সেসময় গাঁজা না দেওয়ায় লোহার গ্রিসগান দিয়ে তরিকুলের মাথা, গলা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে হত্যা করেন তিনি। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজান এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হিসেবে ওই দিনই ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি দাফন করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার দুদিন পর ১৬ ডিসেম্বর হেলপার আল আমিন আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন। সেদিন নিহত তরিকুলের চাচা মো. আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় হেলপার আল আমিনকে আসামি করা হয়। পর দিন পুলিশ মরদেহ উত্তোলনের জন্য আবেদন করে। আদালত ২২ ডিসেম্বর মরদেহ উত্তোলনের অনুমতি দেন। আর প্রক্রিয়া শেষে আজ মরদেহটি উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, তারিকুলের কাছে ৫০ হাজার টাকা চান হেলপার আল আমিন। টাকা না পেয়ে তরিকুলকে লোহার গ্রিসগান দিয়ে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিলেন। পরে আসামি সত্যটা স্বীকার করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খায়রুজ্জামান বলেন, গাঁজা না পেয়ে চালককে হত্যা করেছিলেন আল আমিন। আদালতের জবানবন্দিতে আসামি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বর্তমানে আসামি কারাগারে রয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কবর থেকে মরদেহটি উত্তোলন করে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন মরদ হ ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
উদ্যোক্তার ঋণ তুলে আত্মসাৎ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার
বগুড়া সদরের সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হকের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের আওতাধীন যুবক-যুবতীদের নামে বরাদ্দ ঋণের টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একাধিকবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তদন্ত কমিটি সত্যতাও পায়। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বহাল রয়েছেন এনামুল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এনামুল জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান মো. রায়হানুল হকের কাছে ঋণ ছাড়ে একাধিকবার অনুরোধ করেন। এ জন্য তিনি পাঁচবিবির ঢাকারপাড়া গ্রামের মনিরা চৌধুরী মেমিকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাঁর নামে দুই বছর আগে দুই লাখ টাকা ঋণ নেন। টাকা নেওয়ার পর আর কিস্তি দেননি মেমি। এমনকি ঠিকানাতেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। রায়হানুল যোগাযোগ করলে এনামুল বলেন, মেমির সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই। ফলে ঋণ পরিশোধে তিনি কোনো সহায়তা করতে পারবেন না।
এ ঘটনায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতিয়ার রহমান সহায়তা চেয়ে বগুড়া জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে প্রতারণার জন্য এনামুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ঋণের টাকা আদায়ে অনুরোধ জানানো হয়।
এনামুল কাহালুতে চাকরি করাকালে উপজেলার দুর্গাপুরের নূহুর আলী নামে এক ব্যবসায়ী ঋণের জন্য আবেদন করেন। তাঁকে ঋণ দেওয়ার জন্য মর্টগেজ হিসেবে একটি জমির মূল দলিল নেন তিনি। পরে এটি দিয়ে আব্দুল মজিদের নামে ২০ হাজার টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন এনামুল।
নূহুর আলী বলেন, ‘আমার দলিলে অন্যজনের নামে ঋণ নেওয়া হলো। অথচ আমি জানতেও পারলাম না। কয়েক বছর ঘুরেও দলিল ফেরত পাচ্ছি না।’
জানা যায়, নূহুর আলীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক এ এইচ এম এনামুল হকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হয়। কমিটি গত বছর ২৭ অক্টোবর প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এনামুল হক প্রতারণার মাধ্যমে একজনের দলিল দিয়ে আরেকজনের নামে ঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।
ঋণ ছাড়ে ঘুষ, জালিয়াতি ছাড়াও এনামুলের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বগুড়ার শাজাহানপুরে কর্মরত অবস্থায় ভাড়া বাসায় নারী নিয়ে ফুর্তি করার সময় ধরা পড়েন। পরে এনামুলকে সুনামগঞ্জের ছাতকে বদলি করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর রাজনৈতিক তদবিরে আবারও বগুড়া সদরে আসেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, এনামুল আগে আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। এখন ভোল পাল্টে ভর করেছেন বিএনপির নেতাদের ঘাড়ে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না যুব অধিদপ্তর।
অভিযোগের বিষয়ে এনামুল হক বলেন, ‘আমি সব টাকা পরিশোধ করেছি। সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এনামুল হকের বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে উল্টো আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক অভিযোগ করা হয়। এরপরও এনামুলের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’