কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে ইয়াসিন মিয়া (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে-এমন অভিযোগ এনে থানার ওসি, তিন এসআই ও এক কনস্টেবলসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে।

গত রবিবার (জানুয়ারি) কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মারা যাওয়া ইয়াসিন মিয়ার মেয়ে মরিয়ম আক্তার।

আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের হারুন বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

জাহাজের সুকানি হত্যা মামলায় ২ আসামির যাবজ্জীবন

কিশোরগঞ্জে ছুরিকাঘাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন- কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন, মস্তফা মিয়া, নাহিদ হাসান ও কনস্টেবল আশরাফুল ইসলাম।

এর আগে এ ঘটনায় ওসি ছাড়া বাকি চারজনকে প্রত্যাহার করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ইয়াসিনের মৃত্যুর কারণ জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মো.

তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাছান চৌধুরী। 

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, “আমার বাবা ইয়াসিন মিয়া পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। সাত থেকে আট বছর ধরে কটিয়াদী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা সড়কে অটোরিকশা চালান। গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে আমি ও আমার বোন কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করছিলাম। পরে বাবার অটোরিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে বাবা আমাদের বসিয়ে রেখে পাওনা টাকা পেতে কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বাড়িতে যান। পুলিশ তখন লিটনকে গ্রেপ্তার করতে লিটনের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে আমার বাবাকে পেয়ে আসামি মনে করে মারধর শুরু করে। আমার বাবা দৌঁড়ে অটোরিকশার কাছে চলে আসেন। পুলিশও বাবার পিছু নেয়। পরে আমার বাবাকে ধরে আমাদের সামনে মারধর শুরু করে। বাবাকে বাঁচাতে পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারিনি। একপর্যায়ে ১ নম্বর আসামি এসআই কামাল হোসেন পায়ের বুট দিয়ে বাবার গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।”

মামলার বাদী মরিয়ম আক্তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবাকে আমাদের দুই বোনের সামনে নির্যাতন করে হত্যা করেছে পুলিশ। আমরা এতদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা করতে পারিনি। বিভিন্ন মানুষ নানাভাবে আমাদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মামলা করতে একটু সময় নিতে হয়েছে।”

অভিযুক্ত ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, “এখনো মামলা হয়নি। আদালতে অভিযোগ হয়েছে। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।”

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের হারুন বলেন, “আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে মামলার নম্বর যুক্ত করেছেন।” 

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “মামলা হয়েছে কি না সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কারণ এখন পর্যন্ত মামলার কোনো কাগজপত্র আমি হাতে পাইনি।” 

এলাকার স্থানীয় লোকজন বলছেন, কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বাড়িতে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। লিটন মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। মূলত লিটনকে ধরতে ওই দিন পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন প্রত্যাহার হওয়া এসআই কামাল হোসেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে লিটনের বাড়ির লোকজন দৌঁড়ে পালিয়ে যান। অভিযানের সময় লিটনের বাড়িতে ইয়াসিনও ছিলেন। ইয়াসিনের বাড়ি নরসিংদী। শুরু থেকেই পরিবারের সদস্যরা পুলিশের নির্যাতনে ইয়াসিনের মৃত্যুর অভিযোগ করে আসছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন ভয়ে এতদিন মামলা করতে পারেননি।

পুলিশের দাবি, দৌঁড়ানোর সময় ইয়াসিন অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা/রুমন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক শ রগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে পুলিশের হাত থেকে আটক ব্যক্তি ছিনতাই

ফরিদপুরের সদরপুর থানা পুলিশের হাত থেকে এক আটক ব্যক্তি ছিনতাই হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আটক ওই ব্যক্তিকে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

জানা গেছে, বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল মোড় এলাকা থেকে ফারুক হোসেন বাকু নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তিনি আটরশি এলাকার সাড়ে সাতরশি গ্রামের মৃত মানিক মল্লিকের ছেলে। 

এ বিষয়ে সদরপুর থানা পুলিশের ভাষ্য, আটরশি উরস শরীফকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি আটরশি এলাকায় ফারুক হোসেন বাকু পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা থানার দুর্বৃত্তকারী লোকজন নিয়ে প্রতিনিয়ত মহরা দেয় নিজের শক্তি জানান দেওয়ার জন্য। পরে পুলিশ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বাকুকে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। 

বাকুকে আটকের পর থেকে মুক্ত করতে সদরপুর উপজেলা স্থানীয় বিএনপির’র একটি অংশ থানায় ছুটে আসেন। 

এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাকতালীয় ভাবে আটক বাকু অসুস্থতার কথা জানালে স্থানীয় বিএনপির ওই অংশ তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। ওই সময় থানার এসআই হাদীউজ্জামান ও সঙ্গীয় কনস্টেবল দিয়ে বাকুকে চিকিৎসার জন্য সদরপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাইদুল হাসান শাওন তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন। 

এসআই হাদীউজ্জামান বলেন, ওই সময় আমি ও একজন কনস্টেবল ছিলাম। বাকুর প্রায় ২০ জন লোক ছিল। হাসপাতাল থেকে বের হলেই বাকুর লোকজন পুলিশের হাত থেকে তাকে ছিনিয়ে একটি প্রাইভেট কারে উঠিয়ে নিয়ে যায়। 

এ বিষয়ে সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোতালেব হোসেন জানান, পুলিশের নিকট থেকে আটকৃত ফারুক হোসেন বাকুকে যারা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এবং তাকে আটক করতে থানা পুলিশের অভিযান চলছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফরিদপুরে পুলিশের হাত থেকে আটক ব্যক্তি ছিনতাই
  • হবিগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলায় ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
  • চুরির অপবাদে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
  • বান্ধবীকে জন্মদিনের উপহার দিতে পিস্তল নিয়ে জুতা চুরিতে শিক্ষার্থী
  • পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন-গুলির অভিযোগ, সাবেক ২ ওসিসহ ১৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
  • ওসিসহ ৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ
  • ব্যস্ত জংশনে শুনশান নীরবতা