বিমানে হামলার হুমকি: তল্লাশিতে বোমা পাওয়া যায়নি
Published: 22nd, January 2025 GMT
ইতালির রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে পুরো প্লেনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে, বোমা বা বোমার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেছেন, “পুরো প্লেন তল্লাশি করে কোনো বোমা বা বোমা সদৃশ কিছু পাওয়া যায়নি। যাত্রীদের সব ব্যাগেজ চেক করা হয়েছে। কোথাও বিস্ফোরক বা কিছু পাওয়া যায়নি।”
তিনি আরো বলেন, “যাত্রীদের ব্যাগেজ বুঝিয়ে দেওয়া হবে কিছুক্ষণ পর থেকে। থ্রেট ও তল্লাশির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।”
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বোমা ডিসপোজাল ইউনিট প্লেনের ভেতরে সিট, করিডোর, টয়লেট, ক্যাফেতে তল্লাশি চালায়। যাত্রীদের জরুরি ভিত্তিতে নামানো হলেও তাদের হ্যান্ড ব্যাগেজ বিমানেই থাকে। সেগুলো একে একে তল্লাশি করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজ ফেরত দেওয়া হবে।
ইতালির রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বোমা হামলার হুমকি পাওয়া যায়। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফোন করে এ হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পর বিজি-৩৫৬ নম্বর ফ্লাইটটি বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় বোমা ডিসপোজাল ইউনিট প্লেনটির ভেতর প্রবেশ করে।
ফ্লাইটটি মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় রাত ৮টায় রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়েছিল।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি
শাবান মূলত পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত তথা রোজা-নামাজ ইত্যাদি আমল করতেন। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ, শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপন; রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল তোলা।
প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ ও সালাম প্রদানের নির্দেশনা-সংবলিত আয়াতটি শাবান মাসেই অবতীর্ণ হয়। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা নবীজির (সা.) প্রতি পরিপূর্ণ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতাগণ নবীজির (সা.) জন্য রহমত কামনা করেন; হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে
সালাম পেশ করো।’
(সুরা-আহজাব, আয়াত: ৫৬)
ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় শাবান মাস। নফল রোজা ও নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-কালাম, দান-সদকাহ-খয়রাত, ওমরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়।
রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমাদান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ফারসি পরিভাষায় শব অর্থ রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবেবরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবেবরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যদিবসের রজনী বলা হয়েছে।
শাবান মাসের রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, একদা মহানবীকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মানার্থে শাবান মাসে কৃত রোজার ফজিলত বেশি। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘রমজান মাসে কৃত দানের ফজিলত বেশি।’ (বায়হাকি)
হজরত উসামা বিন জায়েদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এত
পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এত বেশি রোজা রাখেন?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটি এমন একটি মাস, যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ উদাসীন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে, রমজান তো আছেই।’ (নাসাঈ)
হাদিস সূত্রে জানা যায়, শাবান মাস আসার আগেই মহানবী (সা.) দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও পড়তে বলতেন– ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। তাই এ মাসকে বলা হয় মাহে রমজানের আগমনী বার্তা।
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘মহানবী (সা.) কখনও নফল রোজা রাখতে শুরু করলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি বিরতি দেবেন না। আর রোজার বিরতি দিলে আমরা বলতাম যে, তিনি মনে হয় এখন আর নফল রোজা রাখবেন না। আমি মহানবী (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন।’ (মুসলিম)
মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের শাবান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।
ড. মো. শাহজাহান কবীর: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা