তুরস্কের রিসোর্টে অগ্নিকাণ্ড, নিহত ৭৬
Published: 22nd, January 2025 GMT
তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বোলু পার্বত্য এলাকায় গ্র্যান্ড কারতাল হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৭৬ জন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৫০ জনেরও বেশি মানুষ; তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া মঙ্গলবার রাতে এক বার্তায় জানিয়েছেন এ তথ্য।
তিনি বলেন, নিহতদের পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চলছে, তবে অনেকেই পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিচয় এখনও জানা যায় নি। সূত্র : রয়টার্স
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিটে আগুন লাগে গ্র্যান্ড কারতাল হোটেলে। আগুনের সূত্রপাত ঘটেছিল রান্নাঘর থেকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বার্তায় বলেন, পাহাড়ি উঁচু-নিচু পথের কারণে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস বাহিনীর কর্মীদের সেখানে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল ৪৫ মিনিট। এই ৪৫ মিনিটে ভয়াবহ রূপ নেয় আগুন।
১২ তলার গ্র্যান্ড কারতাল হোটেলে কক্ষের সংখ্যা মোট ১৬১টি। আগুন লাগার সময় সেখানে ছিলেন ২৩৮ জন অতিথি। স্কুল ছুটি থাকায় অনেক শিশু ও অভিভাবকও ছিলেন এ অতিথিদের মধ্যে।
পৃথক এক বিবৃতিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বরেন, “আমি শোকাহত। নিহতদের আত্মীয় পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতের সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমি এ ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।”
হোটেলের বাইরের আবরণ কাঠ দিয়ে তৈরি বলে আগুন লাগার পর তা অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মেভলুত ওজের নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, “এটা ছিল রীতিমতো একটি মহা বিপর্যয়কর ঘটনা। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে আগুন পুরো হোটেলকে গ্রাস করে ফেলেছিল।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ওমর সাকরাক বলেন, “আতঙ্কে দিশাহারা লোকজনের অনেকই হোটেলের জানালা থেকে লাফিয়ে পড়েছে। আমি নিজে এক ব্যক্তিকে ১১ তলা থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখেছি। জানি না তিনি বেঁচে আছেন কি না।”
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত রস ক
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে: তাহির জামান প্রিয়র মা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা সামসি আরা জামান বলেছেন, আজকে আট মাস পরে আমার উপলব্ধি হচ্ছে আন্দোলন মনে হয় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সবাই মনে হয় সবার জায়গা থেকে বাণিজ্য করছে। মামলা বাণিজ্য হচ্ছে যতটুকু বুঝি। এরা কারা করছে আমরা সবাই বুঝি। খুনি হাসিনাকে যেমন আশেপাশে সবাই ফ্যাসিস্ট হতে সাহায্য করেছিল, আমি চাই না আর কেউ ফ্যাসিস্ট হোক।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শামসি আরা জামান। এ সময় প্রিয়র চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিরা জামানও তার সঙ্গে ছিলেন।
সামসি আরা জামান বলেন, আমি এত রাজনীতি বুঝি না। আমি মা। ১৯ জুলাই যখন আমার ছেলে নিহত হয়, ২০ আগস্ট যখন মামলা করতে আসি, আমাকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, গেটের বাইরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি ছেলেরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছে, প্রিয় ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। আস্তে আস্তে পুরো থানা ভরে গেলো। আন্দোলনে যেভাবে একসঙ্গে এত মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছিল। আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন ক্ষমতার চর্চা চলছে, কে কীভাবে কে ক্ষমতায় যাবে। যে ক্ষমতাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে বিদায় করেছে, সেই আবার ক্ষমতার লড়াই দেখছি। এই সংগঠন ক্ষমতার জন্য না, জনগণের জন্য মানুষের জন্য কাজ করছে। আগামীতে কেউ যেন ফ্যাস্টিস্ট না হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, আমিও সঙ্গে থাকবো।
সমাবেশ শেষে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর হয়ে জিমনেশিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনির সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। এ ছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, শামসুল আলম সজ্জন ও বাকী বিল্লাহ; সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগীব আহসান মুন্না প্রমুখ।
রাগীব নাঈম তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটাতে সক্ষম হলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর সম্পূর্ণ বিলোপ এখনো সম্ভব হয়নি। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিতে টালবাহানা, সকল শহীদ পরিবারে সহায়তা পৌঁছাতে না পারা, শ্রমিকদের উপর নির্বিচার গুলি চালানো, ছাত্র আন্দোলনে ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলা অব্যাহত রাখাসহ নানা ঘটনা আমরা লক্ষ্য করছি।
তিনি বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের ভূমিকা ও নিষ্ক্রিয়তা নিশ্চিতভাবেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি। হাসিনার পতনের বছরপূর্তি হবার আগেই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন থেকে দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা আমাদেরকে পুনর্বার রাজপথে নামার আহ্বান জানাচ্ছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক তামজীদ হায়দার চঞ্চল বলেন, জুলাইয়ে শুরু হওয়া সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মকে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারকারীদের কাছে সরকার একরকম আত্মসমর্পন করে বসে আছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশি-বিদেশী স্বার্থান্বেষী মহলের আজ্ঞাবহতা বর্জন করে সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে।
সম্মেলনে শুভকামনা জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন্সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ছাত্র ইউনিয়নের ৪২তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে। আগামী ২৬ এপ্রিল বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সংগঠনের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।