বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে পুলিশ-র‍্যাব-আনসার বাহিনীর পোশাকে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই পরিবর্তিত পোশাকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর নতুন পোশাক। তবে নেটিজেনদের অনেকেই পছন্দ করছেন না নতুন রঙয়ের পোশাকগুলো। কেউ কেউ করছেন সমালোচনাও।

 জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর তো এই তিন বাহিনীর পোশাকের ডিজাইনার, অনুমোদনকারীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। 

নিজের ফেসবুকে আসিফ লিখেছেন, তিন বাহিনীর এই পোশাকের ডিজাইনার, অনুমোদনকারী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসার জন্য রুচিহীনতার অভিয়োগে দ্রুত গ্রেফতার করা হউক, মানসিক ডাক্তারদের মাধ‍্যমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে উন্নত চিকিৎসার তাদের পাবনার হেমায়েতপুর পাগলা গারদে প্রেরণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। 

সবশেষে জনপ্রিয় এ গায়ক বলেন, সারা দেশে রুচিহীনতা ছড়িয়ে পড়লে সব দায়দায়িত্ব রুচিহীন সরকারকেই নিতে হবে।

ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে অনেকেই আসিফের সঙ্গে একমত হয়েছেন। কেউ বিষয়টিকে রুচির দুর্ভিক্ষ বলে মনে করছেন। অনেকে উচিত কথা বলায় গায়ককে দিচ্ছেন ধন্যবাদ।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

চলনবিলের খেজুরের গুড়

চলনবিল অঞ্চলে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগেই খেজুর গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করেন। তাদের সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে আসা গাছিরাও চলনবিল অঞ্চলে ভালো মানের খেজুর গুড় তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখছেন বছরের পর বছর। মৌসুমে ভালো আয়-রোজগারও করছেন। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মনিকগ্রাম ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা জামরুল ইসলাম (৪৩)। তাঁর বাবা আকবর আলী মারা গেছেন। জীবিত অবস্থায় তিনিও ছিলেন ওই এলাকার পরিচিত গাছি। আকবর আলী চোখের পলকে উঠে যেতে পারতেন যে কোনো উঁচু খেজুর গাছে। তৈরি করতেন সুস্বাদু পাটালি, বাটি, নালি ও মসলা গুড়। বাবার কাছেই অল্প বয়সে গাছিয়া হওয়ার হাতেখড়ি নেন জামরুল। রপ্ত করেছেন বাবার মতোই ভালো মানের গুড় তৈরির কলাকৌশল। এ কাজটিকে পেশা হিসেবে নিয়ে তিনিও পার করেছেন প্রায় এক যুগ। নিজেও হয়েছেন স্বাবলম্বী। 
রাজশাহী অঞ্চলে শীতকালে তেমন কাজ থাকে না। আয়-রোজগারের আশায় পুরো সময়টাই চলনবিলের সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার সেরাজপুর, ওয়াশিন, কাস্তা, বেত্রাশিন গ্রামে গুড় তৈরির কাজ করেন তিনি। এ বছর শীত মৌসুম শুরুর আগেই কার্তিক মাসে প্রায় ২০৭টি খেজুর গাছ টাকা নয়, গুড়ের বিনিময়ে লিজ নিয়ে দিব্যি বাবার মতোই নজরুল ইসলাম ও মকবুল হোসেন নামের অভিজ্ঞ দুই গাছিকে সঙ্গী করে তৈরি করছেন সুস্বাদু বিভিন্ন ধরনের খেজুরের গুড়। জামরুলের গুড় কিনতে এলাকার বাইরে থেকেও লোকজন আসেন তাড়াশের সেরাজপুর গ্রামের কৃষক সাত্তারের বাড়ির উঠানে গেঁড়ে বসা অস্থায়ী আস্তানায়। মৌসুমি এ কাজে যে আয় হয় তাতেই বছরের কয়েক মাস খাওয়া-পরাসহ সাংসারিক খরচ মেটাবেন জামরুলসহ অন্য গাছিরা। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকা থেকে এবার দুই শতাধিক গাছি চলনবিল এলাকায় এসেছেন।
তাড়াশের পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার দোবিরগঞ্জ গ্রামে প্রায় ৩০০ খেজুর গাছ লিজ নিয়ে গুড় তৈরি করছেন নাটোর জেলার বাগাতীপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামের আবুল কাসেম। এ কাজের সঙ্গী স্ত্রী ও দুই কিশোর ছেলে। একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে প্রায় সাড়ে চার মাসের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে গাছিদের। যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার তৈরি খেজুরের গুড় বগুড়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব গাছি মনছের সরদার জানান, কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে ধারালো ছেনি, বাটাল কিনে ও শান দিয়ে, রসের হাঁড়ি বা ডুকি, তাওয়া বা কড়াই, হরপাট, হাদা বা দা, মাটির তৈরি বাটি, খাদা, রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, বিছানাপত্র ও নানা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে আসেন চলনবিলের কোনো এক গৃহস্থের বাড়িতে। সেখানে বানান থাকার মতো টংঘর। প্রথমে গাছে উঠে নিজের নিরাপত্তার জন্য মোটা রশি বা তাদের ভাষায় শক্ত করে ডোড়া বেঁধে লোহার তৈরি দা কিংবা ছেনি দিয়ে লিজ নেওয়া গাছের অপ্রয়োজনীয় ডাল-পাতা ছেঁটে ফেলেন। তারপর রস বের করতে নিখুঁতভাবে ধারালো বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের উপরিভাগে অল্প অল্প করে গাছিদের ভাষায় কপালি বা কোটর কাটতে থাকেন। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহেই রসের হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন। এর আগেই মাটির বড়সড় আখা বা চুলা, জ্বালানি হিসেবে মরা ডালপালা, খড় কিংবা বর্তমান সময়ে গার্মেন্টসের ঝুট সংগ্রহ করে রাখতে হয়। রস এলেই শুরু হয় গুড় তৈরি।
কাসেম গাছি জানান, গাছিরা বেলা ১১টার দিকে খাবার খেয়েই রসের জন্য ছেনি-বাটাল দিয়ে খেজুর গাছের কপালি কাটতে গাছে উঠে যান। মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিটে একেকটি গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলাতে পারেন তারা। এভাবে বিকেলের মধ্যেই গাছের কপালি কাটা ও হাঁড়ি ঝোলানো শেষ করে ফেরেন টংঘরে। পরে রান্না করে সন্ধ্যার পরপরই খাবার খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে যান। আবার রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে জেগে একেকটি খেজুর গাছ থেকে রসভরা হাঁড়ি নামিয়ে আনার কাজ শুরু করেন; যা ভোর হওয়ার মধ্যে শেষ করতে হয়। পড়ে আখা বা চুলায় অ্যালুমিনিয়ামের বড় কড়াই বা তাওয়ায় মণ পাঁচেক ওজনের রস ঢেলে শুরু হয় চুলায় জ্বাল দেওয়া। একসময় রসের জ্বাল দেওয়া পাত্রের রসে বলক উঠতে থাকে। তখন রসের ফেনা ফেলে দেওয়া, কাঠের তৈরি লম্বা হাতলের সাপরপাট দিয়ে অবিরাম নাড়ানাড়ি চলতে থাকে। এরপর গুড়ের রং এলে তা গাঢ় হওয়া পর্যন্ত রস চুলায় জ্বাল দেন। পাশাপাশি সেখান থেকে অল্প পরিমাণ গাঢ় গুড় নিয়ে গরম তাওয়ায় সারপাট দিয়ে মলে মলে তৈরি হয় গুড়ের বীজ। সে বীজ পুরো তাওয়ায় রাখা গুড়ে মিশিয়ে দিয়ে পাটালি বা বাটি আকারের পাত্রে রেখে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে তা শক্ত হয়ে গেলে হয় পরিপূর্ণ পাটালি খেজুর গুড়। তখন পাত্র থেকে তুলে কাগজ বা প্লাস্টিকের কার্টনে ভরে সে গুড় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। নালি বা ঝোলা গুড় তৈরিতে গুড়ের বীজ মেশাতে হয় না। 
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলনবিল এলাকায় চাঁচকৈড়, মীর্জাপুর, হান্ডিয়াল, নওগাঁ, সলঙ্গা, নিগাছি, কাছিকাটা, সাইকোলাসহ ১৫ থেকে ২০টি হাটে সাপ্তাহিক হাটবারে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার গুড় বিক্রি হয়। তা থেকে যে আয় আসে তাতে গাছি বা কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ার ফুটপাত থেকে অভিজাত রেস্তোরাঁ—সবখানেই বাহারি ইফতারির পসরা
  • ‘বিতর্ক সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে শক্তি দেয়’
  • লক্ষ্মীপুরে যুবদলের কমিটি ঘোষণা, দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল-সংবাদ সম্মেলন
  • চলনবিলের খেজুরের গুড়
  • মা-বাবার পাশে শায়িত নোমান