সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের বিজয়ের পর বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে এমন খবর পৌঁছে গেছে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে। এর জেরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিলেট কিমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ চার নেতাকে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদের।

এদিকে, আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো.

জোবায়ের বখত দাবি করছেন তারা দলীয় পরিচয়ে প্রার্থী হননি। সাধারণ আইনজীবীরা তাদের বিজয়ী করেছেন।

আরো পড়ুন:

শায়েস্তাগঞ্জে শহীদ জিয়াউর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল

কিশোরগঞ্জে ছুরিকাঘাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু

জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন। বিএনপিপন্থি ছয়জন ও জামায়াতপন্থি পাঁচজন জয় পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থি। অন্য দুই জনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি। 

অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা শীর্ষ পদে বিজয়ী হলেও এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে র্শীষ দুই পদ হারায় বিএনপি। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি পদেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। এই সুযোগে আওয়ামী লীগের চলমান দুঃসময়েও দলটির সমর্থক অনেক আইনজীবী জয় পেয়ে আলোচনায় এসেছেন।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য নুরুল হককে ভেতরে-ভেতরে সমর্থন দেয়। তবে একই পদে এখানে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনও প্রার্থী হন। তাকে নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। 

এ অবস্থায় কিছুদিন প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত নুরুল হক প্রার্থী হননি। মূলত এরপর থেকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এর প্রভাব পড়ে নির্বাচনে। 

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন আনন্দোলনে দেশের বাইরে ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন। ফলে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসবে নিয়োগ পাওয়ার পরও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে চেয়ারে বসতে পারেননি ফয়েজ। তিনি যাতে অফিস করতে না পরেন এজন্য অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনের পরাজয় তরান্বিত করে। 

গত সোমবার সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক  মো. জোবায়ের বখতসহ কমিটির সবাই শপথ নিয়েছেন। অন্যদিকে একই ইস্যুতে বিএনপি নেতারা হাইকমান্ডের বিচারের মুখোমুখি। বিএনপির বিপর্যয়ের কারণে দলটির জেলা ও মহানগরের শীর্ষ চার নেতাকে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কারণ দর্শানোর  নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা নোটিশ তাদের কাছে পৌঁছেছে। 

নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।

নোটিশে বিএনপির শীর্ষ চার নেতাকে বলা হয়, সম্প্রতি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য জেলা বা মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন ও নির্বিকার ভূমিকার জন্য নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটে।

দায়িত্বহীনতার কারণে সিলেট বিএনপির চার শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ জবাব জমা দিতে হবে।

অন্যদিকে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ৩ সদস্য বিশিষ্ট  কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এরা সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম চৌধুরী কমিটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের পরাজয়ের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা আমাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আমরাও আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।”

মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের বখতও গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কোনো সময়ই দলীয়ভিত্তিক কিংবা দলীয় প্যানেলভিত্তিক হয়নি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা দলীয় পরিচয়ে কিংবা প্যানেলে নির্বাচন করেননি এবং দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিতও হননি। 

প্রসঙ্গত, সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সিলেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আইনজ ব দ র আইনজ ব র ব এনপ র র ব এনপ দল য় প আবদ ল ব ষয়ট আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন তিন দিনের রিমান্ডে

পঞ্চগড়ে সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদা আকতার জুলিয়েট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া আল আমিন নামে এক ইজিবাইকচালককে হত্যার পর লাশ গুমের মামলার প্রধান আসামি সুজন।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টার শুনানিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সকালে পুলিশি নিরাপত্তায় সুজনকে নিয়ে এলে আদালত চত্বরে লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

জানা গেছে, পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৪ আগস্ট নিখোঁজ হন আল আমিন নামে এক ইজিবাইকচালক। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মনু মিয়া গত ১০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা করেন। এ মামলায় ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি, জিপি আব্দুল বারী, এপিপি মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, এপিপি মোস্তাফিজুর রহমান, আইনজীবী হাবীব আল আমিন ফেরদৌসসহ অন্তত ১০ জন অংশগ্রহণ করেন। আসামিপক্ষে ছিলেন– মির্জা সারোয়ার হোসেন, সাবেক পিপি আমিনুর রহমান, আজিজার রহমান আজু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আলী আসমান বিপুলসহ ১০ থেকে ১২ জন আইনজীবী। 

আসামিপক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, সাবেক রেলমন্ত্রী মোবাইল ফোনে গুম ও পরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সে রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদী একটি এফিডেভিট দিয়েছেন; যাতে তিনি বলেছেন, আসামি সুজনকে তিনি চেনেন না। তাঁর জামিনের আবেদন করলেও আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতের পিপি আদম সুফি বলেন, ‘যেহেতু ভুক্তভোগীকে বা তাঁর লাশ পাওয়া যায়নি, তাই রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামির রিমান্ড প্রয়োজন। এটি আদালত অনুধাবন করায় রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামিপক্ষ যে এফিডেভিট দেখিয়েছে, তাতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই। এ মামলা কোনোভাবেই আপসযোগ্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনকে কড়া নিরাপত্তায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইমদাদুল, সাধারণ সম্পাদক শাকিল
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি
  • কর্নেল অলির ওপর হামলায় আ’লীগের ২০১ জন আসামি
  • চাঁদপুরে আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জহির, সম্পাদক ফয়সাল
  • দেশেই ফেসবুক, গুগলের সার্ভার আনার উদ্যোগ
  • ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত
  • সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন তিন দিনের রিমান্ডে
  • গত সরকারের সুবিধাভোগী ৩ জনের আবেদন বাতিল
  • সিলেটে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীর লাশ উত্তোলন
  • সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন আহমেদ আর নেই