আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভরাডুবি: দলীয় বিচারের মুখোমুখি বিএনপি নেতারা
Published: 22nd, January 2025 GMT
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের বিজয়ের পর বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে এমন খবর পৌঁছে গেছে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে। এর জেরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিলেট কিমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ চার নেতাকে। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে তাদের।
এদিকে, আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো.
আরো পড়ুন:
শায়েস্তাগঞ্জে শহীদ জিয়াউর রহমান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল
কিশোরগঞ্জে ছুরিকাঘাতে বিএনপি নেতার মৃত্যু
জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৬টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১২টিতে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন। বিএনপিপন্থি ছয়জন ও জামায়াতপন্থি পাঁচজন জয় পেয়েছেন। বাকিদের মধ্যে একজন জাসদপন্থি। অন্য দুই জনের দলীয় পরিচয় জানা যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিগত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা শীর্ষ পদে বিজয়ী হলেও এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে র্শীষ দুই পদ হারায় বিএনপি। সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রায় প্রতিটি পদেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন না। এই সুযোগে আওয়ামী লীগের চলমান দুঃসময়েও দলটির সমর্থক অনেক আইনজীবী জয় পেয়ে আলোচনায় এসেছেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য নুরুল হককে ভেতরে-ভেতরে সমর্থন দেয়। তবে একই পদে এখানে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনও প্রার্থী হন। তাকে নির্বাচন থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করলেও তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি।
এ অবস্থায় কিছুদিন প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত নুরুল হক প্রার্থী হননি। মূলত এরপর থেকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এর প্রভাব পড়ে নির্বাচনে।
গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন আনন্দোলনে দেশের বাইরে ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন। ফলে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসবে নিয়োগ পাওয়ার পরও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে চেয়ারে বসতে পারেননি ফয়েজ। তিনি যাতে অফিস করতে না পরেন এজন্য অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনের পরাজয় তরান্বিত করে।
গত সোমবার সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের বখতসহ কমিটির সবাই শপথ নিয়েছেন। অন্যদিকে একই ইস্যুতে বিএনপি নেতারা হাইকমান্ডের বিচারের মুখোমুখি। বিএনপির বিপর্যয়ের কারণে দলটির জেলা ও মহানগরের শীর্ষ চার নেতাকে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা নোটিশ তাদের কাছে পৌঁছেছে।
নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী এবং মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
নোটিশে বিএনপির শীর্ষ চার নেতাকে বলা হয়, সম্প্রতি সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলকে বিজয়ী করার জন্য জেলা বা মহানগর বিএনপি যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উদাসীন ও নির্বিকার ভূমিকার জন্য নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিপর্যয় ঘটে।
দায়িত্বহীনতার কারণে সিলেট বিএনপির চার শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না সে বিষয়ে লিখিত জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ জবাব জমা দিতে হবে।
অন্যদিকে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়। এছাড়া বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এরা সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম চৌধুরী কমিটি বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের পরাজয়ের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা আমাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আমরাও আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব।”
মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ও সাধারণ সম্পাদক মো. জোবায়ের বখতও গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কোনো সময়ই দলীয়ভিত্তিক কিংবা দলীয় প্যানেলভিত্তিক হয়নি। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তারা দলীয় পরিচয়ে কিংবা প্যানেলে নির্বাচন করেননি এবং দলীয় পরিচয়ে নির্বাচিতও হননি।
প্রসঙ্গত, সরওয়ার আহমদ চৌধুরী (আবদাল) ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সিলেটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আইনজ ব দ র আইনজ ব র ব এনপ র র ব এনপ দল য় প আবদ ল ব ষয়ট আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
পিএসসির নতুন সদস্যদের শপথ কাল
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদ্য নিয়োগ পাওয়া সাত সদস্যের শপথ গ্রহণ আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নতুন সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। এই সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরদৌস আরফিনা ওসমান, পররাষ্ট্র ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাব্বির আহমদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মুনির হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ সরকার, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা অধ্যাপক এ টি এম ফরিদ উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শরীফ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁদের নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৩৮ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতা বলে রাষ্ট্রপতি তাঁদের এ নিয়োগ দিয়েছেন। সংবিধানের ১৩৯ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সদস্যরা দায়িত্বভার গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর বা তাঁর ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার মধ্যে যা আগে ঘটে, সে কাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য পদে বহাল থাকবেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি পিএসসিতে নিয়োগ পাওয়া ছয় সদস্যের নিয়োগের আদেশ শপথ গ্রহণের আগেই বাতিল করা হয়। পিএসসির একটি সূত্র তখন প্রথম আলোকে বলেছিল, নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার কারণে তাঁদের শপথ স্থগিত করা হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন সদস্য বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় এই সমালোচনা হচ্ছিল। যাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন অধ্যাপক শাহনাজ সরকার, মো. মুনির হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ এফ জগলুল আহমেদ, মো. মিজানুর রহমান, শাব্বির আহমদ চৌধুরী ও অধ্যাপক সৈয়দা শাহিনা সোবহান।