প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ওভাল অফিসে রেজোলিউট ডেস্কে বসে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছিলেন, তখন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। ট্রাম্প রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ার খুলে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের রেখে যাওয়া একটি চিঠি খুঁজে পান। চিঠিটি একটি সাদা খামে ছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘৪৭’। আমেরিকান রাজনীতিতে এটি দীর্ঘদিনের একটি প্রথা, যেখানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির জন্য একটি ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান।

একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, বাইডেন কোনো চিঠি রেখে গেছেন কি না। তখন ট্রাম্প হেসে বলেন, ‘সম্ভবত রেখেছেন’। এরপর রেজোলিউট ডেস্কের ড্রয়ার খুলে তিনি এই চিঠিটি পান। চিঠি পেয়ে ট্রাম্প চমকপ্রদ ভঙ্গিতে বলেন, ‘ওহহ’।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদেরও খামটি দেখান। এ সময় তিনি মজা করে বলেন, ‘তুমি না বললে হয়ত আমাকে এটা খুঁজে পেতে কয়েক বছর লেগে যেত।’

চিঠি পেয়েই ট্রাম্প প্রথমে বলেন, ‘চলুন আমরা সবাই একসঙ্গে এটা পড়ি।’ তবে পরে তিনি মত পরিবর্তন করে বলেন, ‘প্রথমে আমি পড়ি, তারপর আপনাদের শোনাব।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজেও বাইডেনের জন্য ড্রয়ারে একটি চিঠি রেখে গিয়েছিলাম।’

এই চিঠি বিনিময়ের প্রথা শুরু হয়েছিল ১৯৮৯ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মাধ্যমে। তিনি তাঁর উত্তরসূরি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য একটি মজার নোট লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে ছিল টার্কি পরিবেষ্টিত এক হাতির ছবি, এবং তাতে লেখা ছিল— ‘টার্কিগুলো যেন তোমাকে হতাশ না করে।’

এরপর থেকেই প্রত্যেক বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির জন্য ব্যক্তিগত বার্তা রেখে যান। যেখানে ভালোবাসা, শুভকামনা এবং প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হয়।

কিছু ঐতিহাসিক চিঠি

রিগ্যান থেকে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ (১৯৮৯)

১৯৮৯ সালে হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে রোনাল্ড রিগ্যান জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের জন্য লিখেছিলেন, ‘তোমার এমন মুহূর্ত আসবে যখন তুমি এই টেবিলটি ব্যবহার করছ। জর্জ, তোমার এবং বারবারার জন্য শুভকামনা রইল। তুমি আমার প্রার্থনায় থাকবে। আমাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যাহ্নভোজটা আমি মিস করব।’

জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ থেকে বিল ক্লিনটন (১৯৯৩)

১৯৯৩ জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বিল ক্লিনটনকে লিখেছিলেন, ‘তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, তখন তুমি আমাদের প্রেসিডেন্ট। তোমার সাফল্য, এখন আমাদের দেশের সাফল্য। তোমার জন্য শুভকামনা।’

বিল ক্লিনটন থেকে জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০১)

২০০১ সালে বিল ক্লিনটন জর্জ ডব্লিউ বুশকে লেখেন, ‘আজ তুমি সবচেয়ে বড় একটি দায়িত্ব গ্রহণ করছ। তুমি একটি গর্বিত জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছ। আমি তোমার সাফল্য এবং সুখ কামনা করি।’

জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে বারাক ওবামা (২০০৯)

২০০৯ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উদ্দেশ্যে রেখে যাওয়া চিঠিতে লেখেন, ‘প্রিয় ওবামা, অভিনন্দন। তোমার কঠিন সময় আসবে, তুমি সমালোচনার মুখোমুখি হবে। কিন্তু তোমার পাশে থাকবে ঈশ্বর, তোমার পরিবার, আমি এবং এ দেশের হাজারো মানুষ।’

বারাক ওবামা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প (২০১৭)

২০১৭ সালে প্রথমবার ট্রাম্পের জন্য এ চিঠি রেখে যান বারাক ওবামা। ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আমরা এই অফিসের সাময়িক বাসিন্দা। আমাদের কাজ হলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের পূর্বপুরুষদের মতোই শক্তিশালী রেখে যাওয়া। মিশেল এবং আমি তোমার ও মেলানিয়ার জন্য শুভকামনা জানাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সিরিয়ায় বাড়িতে ঢুকে আলাউইতদের হত্যা করা হয়েছে

সিরিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের অনুগত অঞ্চলগুলোয় নৃশংসতা ও প্রতিশোধমূলক হত্যা অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের নেতারা দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া ও তারতুসে শত শত মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই দুই প্রদেশ আসাদ–সমর্থকদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে লুটপাট ও গণহারে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। শিশুদেরও হত্যা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার উপকূলীয় নগরী বানিয়াসের পাশের শহরতলি হাই আল কুসুর আলাউইতদের এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, সেখানে সড়কে মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে আছে, স্তূপ হয়ে আছে এবং সড়ক রক্তে ভেসে গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সেখানে বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

আলাউইত সম্প্রদায় শিয়াপন্থী ইসলামের একটি শাখা। সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ আলাউইত। দেশটির বেশির ভাগ মানুষ সুন্নি মুসলিম। আসাদ আলাউইত সম্প্রদায়ের ছিলেন।

গত শুক্রবার সেখানে লোকজন এমনকি বাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে ভয় পাচ্ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না, তবে যখনই ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছিল, তখন স্থানীয় লোকজন ফেসবুক পোস্টে প্রতিবেশীদের মৃত্যুর খবর জানতে পারছিলেন।

আয়মান ফারেস নামের এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন, সম্প্রতি তিনি কারাদণ্ড ভোগ করে এসেছেন, এ কারণে বেঁচে গেছেন। ২০২৩ সালের আগস্টে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের অভিযোগ তুলে আসাদের সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন আয়মান। এর পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আসাদ–বিরোধী বাহিনী দেশটির কারাগারগুলো থেকে কারাবন্দীদের মুক্ত করে দেয়। আয়মানও তখন কারামুক্ত হন।

যে যোদ্ধারা হাই আল কুসুরের সড়কে অভিযান চালাচ্ছেন, তাঁরা আয়মানকে চিনতে পেরেছিলেন। তাই মৃত্যুর হাত থেকে তিনি বেঁচে গেছেন, কিন্তু লুটপাটের শিকার হয়েছেন। যোদ্ধারা তাঁর গাড়ি নিয়ে গেছেন এবং অন্যান্য বাড়িতেও অভিযান চলছে।

বিবিসির প্রতিবেদককে ফোনে আয়মান আরও বলেন, ‘তাঁরা অচেনা ছিলেন, আমি তাঁদের পরিচয় বা ভাষা বুঝতে পারিনি, তবে তাঁদের উজবেক অথবা চেচেন মনে হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন সিরিয়ানও ছিলেন, তবে তাঁরা সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ নন। যাঁরা মানুষ হত্যা করছেন, তাঁদের দলে কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।’

আয়মান বলেন, তিনি বাড়ির ভেতর বাসিন্দাদের হত্যা করতে দেখেছেন। দেখেছেন নারী ও শিশুরা রক্তে ভিজে আছে। কয়েকটি পরিবার প্রাণ বাঁচাতে বাড়ির ছাদের দিকে দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়তে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু প্রাণে রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন, ‘এটা ভয়ংকর।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস উপকূলীয় নগরী লাতাকিয়া, জাবলেহ ও বানিয়াসে ৭৪০ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার তথ্য লিপিবদ্ধ করেছে। এর বাইরে নিরাপত্তা বাহিনী ও আসাদ বাহিনীর অবশিষ্টদের মধ্যে লড়াইয়ে আরও ৩০০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

বিবিসি স্বাধীনভাবে নিহতের সংখ্যা যাচাই করে দেখতে পারেনি।

আয়মান বলেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী বানিয়াস শহরে পৌঁছালে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। তাঁরা অন্যান্য বাহিনীকে শহর থেকে বের করে দিয়েছে এবং পরিবারগুলোকে নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার রাস্তা করে দিয়েছে।

আয়মানের মতো একই কথা বলেছেন বানিয়াসের আরেক বাসিন্দা আলী। তিনি বিবিসিকে তাঁর পুরো নাম প্রকাশ না করতে বলেছেন। আলী স্ত্রী ও ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে কুসুরে বসবাস করতেন। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

আলী বলেন, ‘তাঁরা আমাদের ভবনে এসেছিলেন। আমরা শুধু গুলির শব্দ শুনে ও প্রতিবেশীদের চিৎকার শুনেই অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। যখনই ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছিলাম, তখনই আমরা ফেসবুক পোস্টে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পারছিলাম। কিন্তু যখন তাঁরা আমাদের ভবনে এলেন, আমাদের মনে হয়েছিল আমরা শেষ।’

আরও পড়ুনসিরিয়ায় ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা, মরদেহ পড়ে আছে খোলা মাঠে১৪ ঘণ্টা আগে

যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের লুটপাট করাই মূল লক্ষ্য ছিল বলেও মনে হয়েছে আলীর। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘তাঁরা অর্থের খোঁজে ছিলেন। তাঁরা আমাদের প্রতিবেশীর দরজায় কড়া নেড়ে তাঁর গাড়ি, অর্থ, সব সোনা ও বাড়িতে আর যেসব মূল্যবান বস্তু ছিল, তা নিয়ে নেন। কিন্তু তাঁকে প্রাণে মারেননি।’

আলী ও তাঁর পরিবারকে তাঁর সুন্নি প্রতিবেশীরা সরিয়ে নিয়েছেন এবং আলীরা এখন তাঁদের সঙ্গেই আছেন। আলী বলেন, ‘আলাউইত, সুন্নি ও খ্রিষ্টান, আমরা বছরের পর বছর একসঙ্গে বসবাস করেছি। আমরা আগে কখনো এমন দেখিনি। হত্যাকাণ্ডের সময় সুন্নিরা আলাউইতদের রক্ষা করতে ছুটে আসেন এবং এখন শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি বাহিনী শহরে এসে গেছে।’

এ নৃশংসতার সূত্রপাত হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। আসাদের অনুগত ব্যক্তিরা যাঁরা অস্ত্র জমা দিতে রাজি হননি, তাঁরা লাতাকিয়া ও জাবলেহ শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি ছোড়েন এবং তাঁদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন।

আসাদ বাহিনীর এক সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গিয়াথ ডাল্লাহ সিরিয়ার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি দ্য ‘মিলিটারি কাউন্সিল ফর দ্য লিবারেশন অব সিরিয়া’ প্রতিষ্ঠা করছেন।

কোথাও কোথাও খবর পাওয়া যাচ্ছে, আসাদ বাহিনীর যেসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা অস্ত্র জমা দেননি, তাঁরা পাহাড়ে একজোট হয়ে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলছেন।

আরও পড়ুনসিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনী ও ক্ষমতাচ্যুত আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নিহত ১০০০০৯ মার্চ ২০২৫

আয়মান বলেন, আলাউইত সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এবারের নৃশংসতার জন্য ডাল্লাহ ও আসাদের অন্য কট্টর অনুসারীদের দায়ী করেছেন।

তবে অন্যরা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তিনি সিরিয়ার নিরাপত্তা, সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে বিলুপ্ত করেছেন। এতে যে হাজার হাজার কর্মকর্তা ও সদস্য বেকার হয়ে পড়েছেন, তাঁদের কী হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা তাঁর নেই।

এসব বাহিনীর কিছু সদস্য, বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যের আসাদের আমলে হত্যাকাণ্ড চালানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। নতুন সরকার কয়েক হাজার সরকারি কর্মীকেও চাকরিচ্যুত করেছে।

সিরিয়ার ৯০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। হাজার হাজার মানুষের আয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। নতুন একটি বিদ্রোহের জন্য এটা খুবই উপযুক্ত পরিবেশ।

আরও পড়ুনসিরিয়ায় আসাদের অনুসারীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ, ৭০ জনের বেশি নিহত০৭ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ