দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত কি না ভাবতে হবে: এ
Published: 22nd, January 2025 GMT
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার জন্য বাংলাদেশ এখনও প্রস্তুত কি না ভাবতে হবে। কারণ উন্নত রাষ্ট্রসমূহেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস করতে দীর্ঘ জটিলতায় পড়তে হয়।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে এবি পার্টির মূল্যায়ন জানাতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ।
দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে পুরো রিপোর্ট নিয়ে পার্টি'র মূল্যায়ন ও বক্তব্য তুলে ধরেন এবি পার্টি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ পুনর্গঠন বা রাষ্ট্র সংস্কারের যে জনদাবি ছিলো সেটাকে সামনে রেখে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। অতীতে সরকার যত কমিশন গঠন করেছিলো তার রিপোর্ট কখনো জনগণের সামনে আসেনি। এই প্রথম সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট জনগণের সামনে উপস্থাপিত হওয়ায় সংস্কার কমিশন ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবি পার্টি।
সংবিধানের মূলনীতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারকে যুক্ত করায় কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক বলেন, “এটি আমাদের সুপারিশ ছিলো।”
তিনি বলেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দেখলেই মনে আসতো জনগণ মানেই প্রজা, যার ফলশ্রুতিতে শাসকরা রাজা বনে যেতেন। তাই আমরা এটা সংশোধন করতে জনগণতন্ত্র করার মত দিয়েছিলাম। এটা সংস্কার কমিশন গ্রহণ করেছে।”
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার জন্য বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত কি না ভাবতে হবে। কারণ উন্নত রাষ্ট্র সমূহেও দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশ করতে দীর্ঘ জটিলতায় পড়তে হয়।”
তিনি বলেন, “দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা না করে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইন সভায় নারীদের সংরক্ষিত ৫০ আসনের পাশাপাশি আরো ৫০টি সংরক্ষিত আসন রেখে তা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব করেছিলাম আমরা।”
তিনি বলেন, “নির্বাচনে প্রার্থীর বয়সের চেয়ে প্রার্থীর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী নির্ধারণকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।”
সাংবাদিকদের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “পোশাক কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে বাহিনী গুলোর আচরণ, সার্ভিস ও দেশের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতার মাধ্যমে।”
নির্বাচন কেন্দ্রিক এক প্রশ্নের জবাবে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “আমরাই প্রথম নির্বাচনের সময়সীমা ২ বছরের কথা বলেছিলাম, ঘুরে ফিরে এখন সেই বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “কেউ কেউ প্রশ্ন করেন এই সরকারের ম্যান্ডেট কি? আমরা সুস্পষ্ট ভাবে বলতে চাই গণঅভ্যুত্থান নিজেই একটি স্বতন্ত্র ম্যান্ডেট। জনগণ একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার গঠন করেছে, যার ফলে এটি জনগণেরই সরকার।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- এবি পার্টি’র চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান লে.
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইমন
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ষ ট আইনসভ র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশকে পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বিশ্ববাসীর উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর জন্য আশার এক বাতিঘর হিসেবে দাঁড়াতে চাই এবং আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের আহ্বান জানাই, অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক চুক্তি পুনর্লিখনের জন্য, পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং মাইক্রোফাইন্যান্সের ভূমিকা অন্বেষণ করতে, যা প্রান্তিক জনগণের জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক।’
আজ মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়ে, যেখানে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি করার সুযোগ এসেছে। এটি এমন এক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা, ঐতিহ্য, ন্যায়বিচার, মর্যাদা ও সুযোগের ভিত্তিতে একটি ভবিষ্যৎ একত্রে গড়ে তুলবে। যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও প্রান্তিক জনগণের ক্ষমতায়ন মৌলিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে একটি সহনশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেন।
উন্নয়নকে বিপথে ঠেলে দিতে পারে, এখনো এমন নানা হুমকি রয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এমন এক সময় পার করছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। নতুন নতুন নীতিমালা, প্রযুক্তি ও শাসনপদ্ধতি আমাদের পৃথিবীকে দ্রুত রূপান্তরিত করছে, যা অতীতের অনেক অনুমানকে অচল করে দিচ্ছে।’
এমন প্রেক্ষাপটে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার পুনরুজ্জীবনের প্রয়োজন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আসুন আমরা সাহসী হই। একটি এমন পৃথিবী গড়ি, যেখানে কেউ এতটা দরিদ্র না হয় যে সে স্বপ্ন দেখতে না পারে এবং কোনো স্বপ্ন এত বড় না হয় যে তা অর্জন করা যায় না।’
আরও পড়ুনদোহায় পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা৯ ঘণ্টা আগেভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে সবার ভূমিকা প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যৎ এমন কিছু নয়, যা আমরা উত্তরাধিকার হিসেবে পাই। এটি এমন কিছু, যা আমরা তৈরি করি এবং আমাদের প্রত্যেকেরই এতে একটি করে ভূমিকা রয়েছে।’
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর মূল বক্তব্যে সামাজিক ব্যবসা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন।
দোহায় আজ শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’।
আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে গুরুত্ব পাবে কী কী ২১ এপ্রিল ২০২৫