দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বৃহৎ ক্যাম্পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে রিকশা ও অটো অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি, চালকদের দুর্ব্যবহার ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা না থাকা, ছাত্রীদের যাতায়াতে নিরাপত্তার অভাব, রাতে যাতায়াতের ঝুঁকি ও চালকদের অসদাচরণের ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছর ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অটোরিকশা চালক কর্তৃক ছাত্রী হেনস্থার ঘটনাও ঘটে। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ জানিয়ে আসলেও তা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় রিকশা ও অটোর ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে এসব যানবাহন চলাচলের নীতিমালা প্রণয়নের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

তাদের দাবি, বিশ্বব্যিালয়ের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানানো, অসদাচরণকারী চালকদের চিহ্নিত করে তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে বালুর ট্রাকসহ ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ, শুধু নিবন্ধিত চালকদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি এবং প্রক্টর ও ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে পরিবহন মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খন্দকার নুজহাত তাবাসসুম ঐশী বলেন, “রিকশা বা অটোতে ওঠা এখন শিক্ষার্থীদের জন্য অপমানজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ভাড়া নিয়ে ঝামেলা এবং চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হচ্ছে। শেষ মোড় থেকে কেআর মার্কেট পর্যন্ত ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দাবি করা হয়। এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চালক টাকা রাস্তায় ফেলে দেন।”

আরেক শিক্ষার্থী নাফি সরকার বলেন, “কেআর মার্কেট থেকে জব্বার মোড় পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু চালকরা তা নিতে চান না। বরং উচ্চস্বরে কথা বলা ও অসম্মানজনক আচরণ করা তাদের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনে বহিরাগত চালকদের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।”

জারা তাসনীম আদীবা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “ছাত্রীদের সঙ্গে অটোচালকদের দুর্ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমরা ভাড়া ঠিকমত দিতে চাই। কিন্তু চালকরা অহেতুক অশোভন আচরণ করেন। রাতের বেলা যাতায়াতে ভয় কাজ করে। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.

মো. আব্দুল আলিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা নির্দিষ্ট স্থানে ভাড়ার চার্ট করে দেব। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের সুবিধার পাশাপাশি যারা রিকশা বা অটোচালক আছেন, তাদের রুটি-রুজিরও সমস্যা না হয়। এজন্য এমন একটি ভাড়া নির্ধারণ করা হবে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক ও চালকরাও যৌক্তিকভাবে লাভবান হবেন।”

তিনি বলেন, “আমরা চাইলেও সব রিকশা ও অটোচালকদের আইডি কার্ড দিতে পারছি না। কারণ তারা কেউই শুধু ক্যাম্পাসে রিকশা চালান না। আমাদের ক্যাম্পাস উন্মুক্ত হওয়ায় চালকরা এক-দুজন যাত্রী নিয়েই এখানে চলে আসেন। তবে আমরা একটি সমাধান হিসেবে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক চালু করার কথা ভাবছি, যাতে তারা সহজেই শনাক্তযোগ্য হন। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভালো থাকুক। তাদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল অফিস, নিরাপত্তা শাখা এবং কমিউনিটি কাউন্সিলের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। আমরা একটি সমাধানের জন্য পরিকল্পনা করেছি। এর মধ্যে চালকদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক ও ভাড়ার চার্ট তৈরি করা অন্তর্ভুক্ত। এটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমরা কাজ করছি চালকদের আচরণ ও সেবার মান উন্নত করতে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস জীবন নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারে। শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “নিরাপত্তার দিক থেকেও আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। বেশিরভাগ রিকশাচালক কোন আইন-কানুন মানে না এবং তাদের অনেকেরই প্রশিক্ষণ নেই। তবুও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর মধ্যে ক্যাম্পাসের স্পিড ব্রেকারগুলো রঙ করে দৃশ্যমান করা হয়েছে, যাতে পথ চলা আরও নিরাপদ হয়।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র জন য চ লকদ র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি

প্রতিবছর সারা বিশ্বে ১ মার্চ আন্তর্জাতিক বৈষম্যবিহীন দিবস হিসেবে পালিত হয়। অর্থাৎ সেদিন নতুন করে উচ্চারিত হয় যে সারা বিশ্ব যেন শূন্য-বৈষম্যের বিশ্ব হয়। অসমতা বা বৈষম্যের আলোচনায় বারবার উঠে আসে অর্থনৈতিক অসমতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য। তাই আয়ের বৈষম্য কিংবা সম্পদের অসমতা নিয়ে সবাই সোচ্চার।

একইভাবে, ফলাফলের অসমতা নিয়ে যত কথা হয়, সুযোগের বৈষম্য নিয়ে তত কথা হয় না। অসমতা সমাজ ও রাষ্ট্রের নানান অঙ্গনে প্রতিফলিত হতে পারে—অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক অঙ্গনে। বৈষম্য ঘটে ঘরে, বাইরে, দেশজ পরিপ্রেক্ষিতে, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে।

কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে অসমতা কিংবা বৈষম্য শুধু শুদ্ধ অর্থনৈতিক বিষয়ই নয়, এর একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক মাত্রিকতাও আছে। আসলে বৈষম্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক ন্যায্যতার দলন ও অন্যায্য পক্ষপাত।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বৈষম্য অত্যন্ত গভীর—সত্যটি অতীত ও নিকট অতীতে বারবারই পরিলক্ষিত হয়েছে। যেকোনো রাজনৈতিক আলোচনা বা বিতর্কের জায়গাটি সরকারি দল কর্তৃক সম্পূর্ণভাবে দখল করে রাখে ও বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ড নিষ্পেষিত হয়। প্রহসনমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না এবং সেই জায়গায় সরকারি দল একচ্ছত্রভাবে বিরাজ করে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা যদি বলি, তাহলে সেখানে যেকোনো রকমের বিকল্প মতকে শায়েস্তা করেছে ক্ষমতাসীন দল। জ্ঞান ও শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা, অন্যান্য পেশাজীবী, সংবাদমাধ্যম, সুশীল সমাজের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে।

ভিন্নতর মত, অন্য রকমের দৃষ্টিভঙ্গি, কোনোরকমের সমালোচনাই সহ্য করা হতো না।
দেশের নীতিমালা নির্ধারণে সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। সেখানে বিত্ত ও ক্ষমতার পক্ষপাত ছিল সুস্পষ্ট। দরিদ্র, প্রান্তিক গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যাশা এবং চাওয়া-পাওয়া কখনো ধর্তব্যের মধ্যে আনা হয়নি।

নানান সময়ে লোকদেখানো অংশগ্রহণমূলক আলাপ-আলোচনার একটা ভাব তৈরী করা হয়েছে বটে, কিন্তু সেগুলো কার্যকর কোনো জন–অংশগ্রহণ ছিল না। নারী জনগোষ্ঠী নানান সময়ে কথা বলেছেন বটে, কিন্তু কখনোই তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

দেশের যে জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক অঙ্গনের কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রে প্রান্তিক সীমায় রেখে দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা হচ্ছেন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। তাঁদের আমরা সব সময় দেশের ভবিষ্যৎ করে রেখে দিয়েছি, তাঁদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি। তরুণ সমাজের প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে আমরা তাঁদের সৃষ্টিশীলতা ও সৃজনশীলতাকে আমাদের সমাজ বিবর্তন ও সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারিনি। তরুণ-শক্তির এ অপচয় বৈষম্যের এক বিশাল নেতিবাচক ফলাফল।

সামাজিক দিক থেকে ধনী-দরিদ্র, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ, আশরাফ-আতরাফের বৈষম্য আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত। তারা বঞ্চিত সম্পদে, ঋণ সুবিধায়, তথ্যপ্রযুক্তি সেবায়। এ কারণে কর্মনিয়োজন ও আয়ের দিক থেকেও তারা বঞ্চণার শিকার হয়।

পরিবেশ-নাজুক অঞ্চলে যেসব প্রান্তিক মানুষের বাস, তাঁরাও ক্রমবর্ধমান অসমতার শিকার হন। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যকার নিম্নবর্ণের মানুষেরা এবং আশরাফ-আতরাফদের মধ্যে আতরাফেরা সামাজিক বৈষম্যমূলক একটি স্থানে অবস্থান করেন। সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশে নগর ও পল্লির মধ্যকার বৈষম্যের কথা সুবিদিত।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অসমতার প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে? রাজনৈতিক অঙ্গনে মানুষকে একটি জায়গায় বড় সুযোগ দিত হবে, তাঁরা বলবেন কোন কোন অর্থনৈতিক অসমতার প্রতিকার তাঁরা চান। এটা বলার জায়গা ও কণ্ঠস্বরের স্বাধীনতা সাধারণ মানুষের থাকতে হবে।

সমাজ অঙ্গনে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা বারবার নানান আলোচনায় উঠে এসেছে। নানান সময়ে নানান ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের নিরাপত্তার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে, তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ব্যাহত করার অভিযোগও উঠেছে। এসবই বৈষম্যমূলক আচরণ। কারণ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্রনির্বিশেষে রাষ্ট্রের সব নাগরিকেরই সমান অধিকার।

সামাজিক অঙ্গনে অসমতা শুধু সামষ্টিক পর্যায়েই বিরাজ করে না, একধরনের বৈষম্য ব্যষ্টিক ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। যেমন পরিবারের মধ্যে নারীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, খাদ্যগ্রহণ, মতপ্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও আর্থিক স্বাবলম্বনের ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্যণীয় বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়। বয়োকনিষ্ঠদের মতামতও পরিবারের মধ্যে উপেক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্রেও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনের মধ্যে নানান মাত্রিকতার বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়।

সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বহু বৈষম্য লক্ষণীয়। নগর সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্র ও সরকার প্রায়ই যতটা উদ্‌গ্রীব থাকে, গ্রামীণ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ অনেক সময়ে ততটা পরিলক্ষিত হয় না। বহু ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে মূল ধারায় প্রবিষ্ট করার জন্য একটি অনধিকার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তেমনিভাবে যেসব অঞ্চলে

এসব গোষ্ঠী বসবাস করে থাকে, সেখানকার শিক্ষালয়ে শিক্ষা প্রদান সেসব গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় না হয়ে বাংলা মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। এ–ও লক্ষ করা গেছে যে ওই সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সাহিত্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য, সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা পায় না। এসব মিলিয়েই একটি সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাঁদের পরিপ্রেক্ষিতে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য একটি সমাজকে সমৃদ্ধ ও বেগবান করে।

বাংলাদেশের সমাজে মানসিক বৈষম্যের কথাও বহুজন বলেছেন। আমাদের সমাজে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধীগোষ্ঠীকে হীন বলে মনে করা হয় এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। তাদের অবস্থাকে আমরা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি দিয়ে দেখি না, তাদের বিষয়গুলো আমরা সঠিকভাবে বিবেচনা করি না।

তেমনিভাবে মানুষের প্রতি আচরণে আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ করি। আমরা বহু সময়ে মানুষের ন্যূনতম সম্মানটুকু মানুষকে দিই না, যদি সেই মানুষটি হয় দরিদ্র এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ। এটাও মানসিক বৈষম্যের একটি মাত্রিকতা।

একটি সমাজের অর্থনৈতিক অসমতাও শুধু একটি শুদ্ধ অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, অসমতা সমাজের ক্ষমতা-সম্পর্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আসলে, সমাজের অর্থনৈতিক অসমতা এবং ক্ষমতা-সম্পর্ক পরস্পর পরস্পরকে জোরালো করে। অর্থনৈতিক সম্পদের ভিন্নতা সমাজে ধনী এবং দরিদ্র্য এ প্রান্তিক মানুষের এই অসম ক্ষমতা-সম্পর্ক বিত্তবান ও ক্ষমতাশীল মানুষদের আরও বিত্ত গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

এই প্রক্রিয়ায় পুরো ব্যাপারটিই রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে স্থায়ী একটি স্থান করে নেয়, যার ফলে রাষ্ট্র নিজেই একটি স্বার্থান্বেষী মহলে পরিণত হয়। এর ফলে, দরিদ্র ও প্রান্তিক গোষ্ঠী আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ে এবং তারা রাজনৈতিক বলয়ে, সামাজিক গতিময়তায় এবং সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় আরও বৈষম্যের শিকার হয়ে পড়ে। এমনকি আইনের চোখেও তারা সুবিচার পায় না।

সুতরাং এ অবস্থায় মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায্যতা বিষয়টি শুধু কথার কথায় পর্যবসিত হয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক অসমতা নৈতিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়, এমন অসমতা মানবাধিকার ও মানব–মর্যাদার পরিপন্থী।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অসমতার প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে? রাজনৈতিক অঙ্গনে মানুষকে একটি জায়গায় বড় সুযোগ দিত হবে, তাঁরা বলবেন কোন কোন অর্থনৈতিক অসমতার প্রতিকার তাঁরা চান। এটা বলার জায়গা ও কণ্ঠস্বরের স্বাধীনতা সাধারণ মানুষের থাকতে হবে। আসলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শুধু যে তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হবে তা–ই নয়, সেই সঙ্গে অসমতা হ্রাস করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণকেও তাঁরা প্রভাবিত করতে পারবে।

যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক সেবার বলয়ে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর যে শুধু এসব সেবার প্রসারণ ঘটাবে তা–ই নয়, সেই সঙ্গে এসব সেবা সুযোগের গুণগত মান যে ভালো হয়, তা নিশ্চিত করা যাবে। ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষেরাও উন্নতমানের সামাজিক সুযোগ পাবেন।

বৈষম্যহীন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে, সেটার একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিপ্রেক্ষিত থাকতে হবে, সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের একটা দায়িত্ব থাকা প্রয়োজন। আমাদের চেতনায় এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে, আমাদের আচার-আচরণে, আমাদের কর্মকাণ্ডে আমরা প্রত্যেকে যদি সমতার প্রতি শ্রদ্ধাবান হই, তাহলে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে সেটা একটি বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে। সেই সঙ্গে যুক্ত হতে হবে সমাজের কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রের কার্যক্রমে।

সেলিম জাহান ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ কী?
  • ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, ইউরোপকে একলা চলতে হবে
  • আপনার আচরণ এমন হবে ভাবিনি: জামিলকে নূনা আফরোজ
  • সরকার জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মর্মবস্তু ধারণ করতে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে
  • ‘মাফিয়া বসদের মতো’ আচরণ করেছেন ট্রাম্প
  • ক্ষমতা অপব্যবহারের দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি
  • ক্ষমতার অপব্যবহারের দায় সরকার এড়াতে পারে না: টিআইবি
  • রিয়াল মাদ্রিদকে বড় অঙ্কের জরিমানা উয়েফার
  • গার্দিওলার সঙ্গে সমর্থকদের বাজে আচরণে জরিমানা রিয়ালের
  • তরুণদের আমরা দেশের বর্তমান হয়ে উঠতে দিইনি