কক্সবাজারে ভুয়া পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই রোহিঙ্গা নারী। গত সোমবার শহরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে দু’জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দু’জনের মধ্যে একজন মারজান বিবি ওরফে মায়রাম বিবি (২২)। তিনি উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-৪) ‘সি’ ব্লকের রোহিঙ্গা আয়ুব খানের মেয়ে। আরেকজন ১৬ বছরের কিশোরী। সেও একই ক্যাম্পে থাকত। 

কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খান জানান, সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান মারজান ও রাবেয়া। তারা নিজেদের বাংলাদেশি নাগরিক পরিচয় দেন এবং কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় নিজেদের ঘর আছে দাবি করেন। দাবির পক্ষে পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহেদা আকতারের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র জমা দেন তারা। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা থেকে নেওয়া জাতীয়তা সনদও জমা দেন। এতে জাহেদা আকতার ও কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র-২ ওমর ছিদ্দিক লালুর সই রয়েছে। দুই সনদে মারজান ও রাবেয়াকে ‘জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’জনের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে পাসপোর্ট অফিসের লোকজন যাচাই-বাছাই করে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা নারী) হিসেবে প্রমাণ পান। এ সময় তাদের কাছে পাসপোর্টের আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া বিভিন্ন কাগজপত্র পাওয়া যায়। পরে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন তাদের কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
দুই সনদে সই থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহেদা আকতার বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না।’ প্যানেল মেয়র-২ ওমর ছিদ্দিক লালু বলেন, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয়তা সনদ দেওয়া হয়। এখানে আমাদের যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, দালালের মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গা বাংলাদেশি সেজে পাসপোর্ট তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে পালানোর চেষ্টা করছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার পর দু’জনকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পদ হারিয়ে দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন মেয়র

পদ হারানোর পর দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন জামালপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ছানুয়ার হোসেন ছানু। শুধু ফেরত নিয়েই ক্ষান্ত হননি। অ্যাম্বুলেন্সটির নাম পরিবর্তন করে ‘হ্যালো মেয়র’ মুছে ফেলে এখন সেটি সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স লিখে ভাড়া খাটানো হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সমালোচনার ঝড় বইছে।

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে মেয়র পদে থাকাকালীন আনুষ্ঠানিকভাবে পৌরসভায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি অ্যাম্বুলেন্স দান করেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু। পৌর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে করোনাকালীন থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরবাসীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিল। পৌরসভার একজন গাড়িচালক অ্যাম্বুলেন্সটি চালাতেন। তার বেতন-ভাতা ও অ্যাম্বুলেন্স রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বহন করত পৌর কর্তৃপক্ষ।

জামালপুর পৌরসভার তথ্যমতে, ২০২১ সালের ১৯ জুলাই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ‘হ্যালো মেয়র’ নামে অ্যাম্বুলেন্সটি ২৪ ঘণ্টা সেবা দিত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান ছানুয়ার হোসেন ছানু। সরকারি সিন্ধান্তে তাঁর পৌর মেয়রের পদও বাতিল হয়।

অ্যাম্বুলেন্সটি সম্প্রতি এক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পৌরসভার উদ্যোগে মেরামতের জন্য শহরের বাইপাস এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়। কিছুদিন আগে ছানোয়ার হোসেন ছানুর ব্যক্তিগত কর্মচারী মো. আশরাফ ওয়ার্কশপ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে যান। অ্যাম্বুলেন্সের গায়ের লেখা হ্যালো মেয়র ও জামালপুর পৌরসভা মুছে সিদ্দিক অ্যাম্বুলেন্স লেখা হয়। এর পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়ায় পরিচালিত হচ্ছে।

জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জামালপুরের মানবিক মেয়রখ্যাত ছানুয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করেছিলেন, মানুষ সেটাই জানত। কিন্তু সেটা ফেরত নিয়ে মানবিক মেয়র অমানবিক কাজ করেছেন।

পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমানের ভাষ্য, করোনা মহামারির সময় তৎকালীন মেয়র ছানোয়ার হোসেন পৌরবাসীকে বিশেষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেন। সাবেক মেয়র ছানোয়ার হোসেন অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার অর্থে ক্রয় করেননি। অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভাকে দান কিংবা লিখিতভাবে দেননি। তাছাড়া অ্যাম্বুলেন্সটির যাবতীয় কাগজপত্র যেহেতু ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের নামে, সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়াও আইনসিদ্ধ নয়।

জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক মৌসুমী খানম বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সটি পাননি। তৎকালীন মেয়র অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভায় লিখিতভাবে দানও করেননি। অ্যাম্বুলেন্সের কোনো কাগজপত্র পৌরসভার নামে নেই। তাই অ্যাম্বুলেন্সটি পৌরসভার পক্ষে দাবি করা কিংবা উদ্ধারকল্পে ব্যবস্থা নেওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা আইনসিদ্ধ হবে, সেটা আপনারাই বলুন।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ হারিয়ে দানের অ্যাম্বুলেন্স ফেরত নিলেন মেয়র