অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা প্রোপাগান্ডা ছড়ালে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৯ জানুয়ারি এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সরকার। ওই দিনই বিজ্ঞপ্তিটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে সই করেন মাউশি মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক অধ্যাপক আবেদ নোমানী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার মাসিক সমন্বয় সভায় বর্তমান সরকার এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা, গুজবে উদ্বুদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনো উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয়, সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক ও তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

জানা গেছে, মাউশি থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ডিইও) পাঠানো হয়েছে। কয়েকজন ডিইও মাউশির এ নির্দেশনা পাওয়ার কথা স্বীকারও করেন সমকালের কাছে। তারা জানান, এ ব্যাপারে নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে নজরদারি শুরু করে দিয়েছেন। 

রাজধানীর একটি খ্যাতনামা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমকালকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী আছে। তাদের মধ্যে সামাজিকমাধ্যমসহ কে কোথায় কী লিখছে বা করছে, তার সব কি আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব? শিক্ষার্থীর দায় যেন প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে এসে না পড়ে। 

হঠাৎ এমন আদেশ কেন জারি করা হলো বা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিনা– এমন প্রশ্নে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন শাখার পরিচালক অধ্যাপক আবেদ নোমানী বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশনা 

আমাদের কাছে এসেছে। মাউশির মনিটরিং উইং থেকে আমারা শুধু আদেশ জারি করেছি। আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই।’

শিক্ষার্থী অপপ্রচারে লিপ্ত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নোমানী বলেন, ‘এটা এখনই বলা যাবে না। কারণ শিক্ষার্থীর অপরাধের মাত্রা বিচার করে তার সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায় আছে কিনা সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবে। শিক্ষার্থী কর্তৃক সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হলে কেস টু কেস দেখা হবে। যদি শিক্ষার্থীদের 
সরকারের নির্দেশনা অবগত করতে ব্যর্থ হয় বা অপপ্রচার রোধে নির্বিকার থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উপায় থাকবে কি।’

এসব বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বৃহত্তর সংগঠন ‌শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সমন্বয়কারী মো.

জাকির হোসেন সমকালকে বলেন, ‘অপপ্রচার হোক– সরকার বা আমরা কোনো পক্ষই সেটা চাই না। তবে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের থাকতে হবে। 
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকারকে যেন স‌ংকুচিত করা না হয়। শুধু স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে বর্তমান সরকারের কাছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও এ দেশেরই নাগরিক, তারা বিচ্ছিন্ন কোনো গোষ্ঠী নন। সে ক্ষেত্রে তারা 

তাদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন, তাতে যেন বাধা দেওয়া না হয়। মত প্রকাশে বাধা দেওয়া মানে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। তাই আমরা প্রত্যাশা করব, শুধু স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কারণে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এইচএসএফ

কিউ লিপের পরিকল্পনায় ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে হিউম্যান সেফটি ফাউন্ডেশন (এইচএসএফ)। রোববার বিকেলে ফরিদপুর শহরের একটি রেস্টুরেন্টে প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর জেলায় নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, কীভাবে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা শুরু করা যায়। একই সঙ্গে তরুণদের পরিবেশ আইন বিষয়ে সচেতন করা হবে। 

প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরে ডেপুটি ডিরেক্টর মো. সাঈদ আনোয়ার। তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরে বায়ুদূষণ বেশি হচ্ছে। তাই বায়ূদূষণ রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’

সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘ফরিদপুরে ২০০-২৫০ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। উৎপন্ন হচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য।’ তাই ফরিদপুরে একটি মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট দরকার বলে জানান তিনি।

এইচএসএফ'র চেয়ারম্যান এম এ মুকিত বলেন, ‘ই-বর্জ্য আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি, তাই এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।’

কিউ লিপের সিইও জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই, ফরিদপুর শহরকে সবুজ এবং পরিস্কার করতে চাই। পরিবেশ বান্ধব ফরিদপুর শহর করতে চাই।’

এইচএসএফ'র প্রধান নির্বাহী মো. বোরহানুল আশেকীন বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় এ সংক্রান্ত আইন জানতে হবে, মানতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তরা অংশ নেন, যারা নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশ রক্ষায় তাদের করণীয় সম্পর্কে অবগত হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ