স্কুলছাত্র হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 21st, January 2025 GMT
বেলাবতে স্কুলছাত্র অনয় চন্দ্র মোদক হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বেলাব বাজারের কাছে মানববন্ধন করেন তারা।
এ সময় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনয় চন্দ্র মোদকের হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন বেলাব পাইলট সরকারি মর্ডান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কুমার ঘোষ, সহকারী শিক্ষক আমিরুল এহসান, বেলাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন, শিক্ষার্থী জারিন, আরচি ও রাইসা।
মানববন্ধন শেষে অনয় হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। বিক্ষোভ মিছিলে ‘আমার ভাই মরল কেন, অনয় হত্যার বিচার চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল-আমিন হালদার। এ সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনয় হত্যায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দিলে ফিরে যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
গত রোববার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের দীঘলদীকান্দা এলাকা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অনয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ভোলার লালমোহন থানার চরলক্ষী সিকদার বাড়ির সুমন হোসেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে বেলাব থানার পুলিশ। সুমনের বিকাশ নম্বরে স্কুলছাত্র অনয় অপহরণের মুক্তিপণ দিয়েছিলেন স্বজন।
গত ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনয় চন্দ্র মোদক বেলাব মাটিয়াল পাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য বেলাব বাজার যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বেলাব উপজেলা রোডের আনাফ রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, অনয়কে অপহরণ করা হয়েছে। অনয়কে জীবিত পেতে চাওয়া হয় এক লাখ টাকা মুক্তিপণ। টাকা নিতে দেওয়া হয় ভোলার লালমোহন থেকে গ্রেপ্তার সুমনের মোবাইল নম্বর। অনয়ের স্বজন অপহরণকারীদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু অপহরণের পাঁচ দিন পর গত রোববার বিকেলে অনয়ের লাশ ভেসে ওঠে বেলাবর ওপর দিয়ে প্রবাহমান পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত অব্যাহত আছে। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। দ্রুতই তদন্ত সম্পন্ন করে হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারব বলে আশা করছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অপহৃত শিশুকে ভিক্ষা করাতে নির্যাতন, শরীরজুড়ে দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা
হাতের নখ ওপড়ানো। শরীরজুড়ে সিগারেট ও মশার কয়েলের ছ্যাঁকা দেওয়া। না খাইয়ে শরীর করা হয়েছে কঙ্কালসার। অপহরণের পর ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এভাবেই শিশুটিকে তৈরি করা হয়। শিশুটিকে দিয়ে দিনে করানো হতো ভিক্ষা, রাতভর চালানো হতো নির্যাতন।
সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে ছয় বছর বয়সী এমনই এক শিশুকে উদ্ধার করেছে পাবনা জেলা পুলিশ। অসুস্থ শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি পাবনা সদর উপজেলার সানির দিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী শিশুটি সদর উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় ছেলেটি মায়ের কাছে থাকত। গত বছরের ২ অক্টোবর বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে রফিকুল অপহরণ করেন বলে অভিযোগ। এরপর শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর শিশুটির মা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর শিশুটিকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। প্রায় ছয় মাস পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্ত রফিকুলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। ১৮ এপ্রিল খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকায় ভিক্ষারত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্ত রফিকুলকে আটক করা হয়। এরপর শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতনের তথ্য বেরিয়ে আসে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অর্থোপেডিক বিভাগের একটি শয্যায় শুয়ে আছে শিশুটি। পাশে অসহায়ের মতো ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন মা। শিশুটির শরীরের হাড় যেন বেরিয়ে আসছে। বিছানার সঙ্গে মিশে গেছে শরীর। নখের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নার্সরা। কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।
অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছিল। শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। তাঁরা তাঁদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছেন। শিশুটির সুস্থ হতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।
ভুক্তভোগী শিশুটি জানায়, অপহরণের পর রফিকুল খাবার বন্ধ করে দেন। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করলেও সহজে খেতে দিত না, মারধর করত। সিগারেট ও জ্বলন্ত কয়েল দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দিত। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের নখ তুলে দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন থেকে ভিক্ষা করানো শুরু করে। সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ভিক্ষা করাত, রাতে নিয়ে এসে একটি কক্ষে আটকে রাখত।
শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত রফিকুল তাঁদের পূর্বপরিচিত। পরে তিনি অপহরণের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি বলেন, উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় তিনি ছেলেকে চিনতেই পারেননি। তাঁর ছেলে স্বাস্থ্যবান ছিল, মাথাভর্তি চুল ছিল। সেই ছেলেকে মাত্র ছয় মাসে কঙ্কালসার করা হয়েছে। দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান।
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত রফিকুল সব কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।